বিশ্ব আদিবাসী দিবস উপলক্ষ্যে ঝাড়গ্রামে শুরু হল চারদিনব্যাপী বর্ণময় উদযাপন। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে এই অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে রাজ্যের প্রশাসনিক শীর্ষ নেতৃত্ব ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে বাল্যবিবাহ বন্ধের নির্দেশ দেন মমতা।
অনুষ্ঠানের সূচনায় একাধিক সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee)। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের হাতে তুলে দেন সরকারি পরিষেবার নথিপত্র ও উপকরণ, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দলের হাতে তুলে দেন ধামসা-মাদল। শিল্প, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য সংবর্ধনা প্রদান করেন আদিবাসী সমাজের কৃতী মানুষদের। মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন ও বীরবাহা হাঁসদা, প্রাক্তন সাংসদ উমা সরেন, বিধায়ক দুলাল মুর্মু, দেবনাথ হাঁসদা ও ডা. খগেন্দ্রনাথ মাহাতো, জেলা পরিষদের সভাধিপতি চিন্ময়ী মারান্ডি, জেলাশাসক সুনীল কুমার আগরওয়াল, পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা-সহ প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মহলের বিশিষ্টজনেরা।
মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, “বিশ্ব আদিবাসী দিবস ৯ আগস্ট হলেও, রাজ্যে চারদিন ধরে তা পালন করা হচ্ছে। আজ তার সূচনা হল ঝাড়গ্রাম থেকে।” তিনি বলেন, “ছাত্রছাত্রীরা দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের পড়াশোনায় যাতে কোনও বাধা না আসে, তার জন্য রাজ্য সরকার সাইকেল, স্মার্টফোন, আর্থিক সহায়তা সহ নানাবিধ প্রকল্প চালু করেছে।” অনুষ্ঠান মঞ্চেই একটি মেয়ে জানায়, সে পড়তে ও খেলাধুলা করতে চায়। তখনই মুখ্যসচিবকে ডেকে বিষয়টি দেখতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। এরপরেই অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়ে বলেন, “তাড়াতাড়ি মেয়ের বিয়ে দেবেন না। মেয়েরা সমাজের বোঝা নয়। ওদের স্বাবলম্বী হতে দিন। আজকের মেয়েরা অনেক এগিয়ে গেছে।”
আরও পড়ুন- বলছে বাংলা কোনও ভাষা নয়! এবার ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে নামুন, ডাক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী
আদিবাসী ভাষা ও সংস্কৃতি প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “অলচিকি হরফে পঠনপাঠনের জন্য সরকার ইতিমধ্যে ব্যবস্থা করেছে। কুড়মালি ভাষাকেও শিক্ষা ব্যবস্থায় যুক্ত করতে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।”
জঙ্গলমহলে উন্নয়নের প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা সেতু, কলেজ, আইটিআই, নার্সিং ট্রেনিং কলেজ, রাস্তা, পানীয় জল ও স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা করেছি। সারি ও সারনা ধর্মকে স্বীকৃতি দিতে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছি।” শেষে তিনি বলেন, “বাংলাভাষীদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে, ভাষা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সবাইকে একসঙ্গে আন্দোলনে সামিল হতে হবে। আমরা একসাথে চলি, একসাথে বলি—আমাদের ভাষায়, আমাদের সংস্কৃতিতে, আমাদের আত্মমর্যাদায়।”