মৌসুমী দাস পাত্র, নদিয়া: তাঁতিদের জন্য বাংলায় প্রথম নদিয়াতে হতে চলেছে ‘বাংলার শাড়ি’ নামে মার্কেটিং হাব। সেইমতো জমি দেখার কাজ চলছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক মিটিংয়ে তাঁতিরা-সহ সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য হাবের কথা বলেছিলেন। সেইমতো খাদি, জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের উদ্যোগে চলছে এই কাজ।
আরও পড়ুন-জেলা স্বাস্থ্য দফতরের জনহিতকর উদ্যোগ, বিনামূল্যে ডায়ালিসিস নয়াগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে
ইতিমধ্যে এই আধুনিক মার্কেটিং হাব নিয়ে জেলাশাসক ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি বয়নশিল্পের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির কাছে প্রস্তাবও পাঠিয়েছেন। কয়েক কোটি টাকার এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন ঘটলে জেলার তাঁতশিল্পী, হস্তশিল্পী থেকে বিভিন্ন মানুষের কর্মসংস্থানের পথ খুলে যাবে। জানা গিয়েছে, তাঁতশিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষের উপার্জন কমে যাওয়ায় এই শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে নতুন প্রজন্ম। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে বাংলায় টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরি হলেও কোনও সরকারি স্বীকৃতি মিলছিল না৷ তাঁতশিল্পের সঙ্গে যুক্ত শিল্পী, মহাজন ও ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন এই স্বীকৃতি পেতে লড়াই চালান। ভারত বিভক্তির পর ঢাকার অনেক দক্ষ তাঁতি এসে এ রাজ্যের শান্তিপুরে বসতি গড়েন। শান্তিপুর হাতে বোনা কাপড়ের জন্যেও বিখ্যাত। জেলার শান্তিপুর ও ফুলিয়া পশ্চিমবঙ্গের দুটি প্রধান তাঁত কেন্দ্রীভূত এলাকা। সরকারি অনুপ্রেরণা ও সহায়তায়, প্রতিভাবান তাঁতিরা বংশ পরম্পরায় এখানকার তাঁতশিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করে রেখেছেন। ফলে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বয়নশিল্পের সমৃদ্ধি ঘটেছে। প্রসঙ্গত, নদিয়ার বিখ্যাত টাঙ্গাইল শাড়ি কিছুদিন আগেই জিআই ট্যাগ পেয়েছে। এই জেলার অসংখ্য তাঁতশিল্পী টাঙ্গাইল শাড়ি বোনার সঙ্গে যুক্ত৷ এই অবস্থায় অনেক দিন ধরেই প্রশাসনিক বৈঠকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বারবার তাঁতিদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি শাড়ি হাব তৈরির কথা তোলায় প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে বিষয়টি। নদিয়ায় প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার তাঁতি আছেন বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর। তাই ‘বাংলার শাড়ি’ নামে এই হাব হলে নিঃসন্দেহে তা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বয়নশিল্পের সঙ্গে রীতিমতো পাল্লা দিতে পারবে।
আরও পড়ুন-টানা জয়ে ফের লিগ শীর্ষে ডায়মন্ড হারবার
জানা গিয়েছে, প্রস্তাবিত এই হাবটি গ্রাউন্ড ফ্লোর-সহ চারতলার হবে। থাকবে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। গুরুত্ব পাবে বাংলার শাড়ি, মসলিন, খাদি, মঞ্জুষা, তাঁতের শাড়ি। আশা করা যায় বিদেশিরাও আসবেন এই শাড়ি হাবে। এই হাব এমন আধুনিক হবে যেখানে তাঁতি, হস্তশিল্পীরা উৎপাদন করবেন। পাশাপাশি ঝাঁ-চকচকে আউটলেট থেকে বিক্রিও হবে বাংলার বিখ্যাত তাঁতের শাড়ির সম্ভার। এর জন্য এক একর বা তার বেশি জমির সন্ধান করা হচ্ছে। সেইমতো জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসক, সভাধিপতি, খাদি বোর্ডের চেয়ারম্যানেরা কদিন আগেই ফুলিয়াতে জমিও দেখে যান। এর আগে তাঁরা কৃষ্ণনগরেও জমি দেখেছেন বাংলার শাড়ি মার্কেটিং হাবের জন্য। এই প্রসঙ্গে খাদি বোর্ডের চেয়ারম্যান কল্লোল খাঁ বলেন, প্রশাসনিক মিটিংয়েই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, নদিয়ার তাঁত বিখ্যাত। মসলিন বিখ্যাত। বাংলার শাড়ি নামে হাব করে ফুলিয়া ও কৃষ্ণনগরের তাঁতিদের দিশা দেওয়া হোক। মুখ্যমন্ত্রীর সেই ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতেই জায়গা চিহ্নিত করে তন্তুবায় শ্রমজীবীদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে এই হাব করা হচ্ছে। আমরা জায়গা দেখেছি। এরপর দ্রুত বাস্তবায়িত হবে রাজ্যের এই প্রকল্প।