হতে চেয়েছিলেন নায়ক। হয়ে গেলেন পরিচালক। তিনি প্রভাত রায়। বলিউডে প্রমোদ চক্রবর্তী, শক্তি সামন্ত, তরুণ মজুমদারের সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। আটের দশকের শুরুতে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। ‘প্রতিদান’ ছবির মাধ্যমে। প্রথম ছবিতে ঘটিয়েছিলেন তারকা সমাবেশ। শর্মিলা ঠাকুর, নাসিরুদ্দিন, রঞ্জিত মল্লিক, ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবিটি সুপারহিট হয়েছিল। বক্স অফিস কাঁপিয়েছে তাঁর ‘প্রতিকার’, ‘প্রতীক’ও। আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। পরিচালনা করেছেন মূলত বাংলা এবং কয়েকটি হিন্দি ছবি। শুরুর দিকে তাঁর ছবি ছিল সাধারণ দর্শকদের জন্য। অ্যাকশন-নির্ভর। পরবর্তী সময়ে রুচিশীল দর্শকদের কথা ভেবে তৈরি করেছেন কয়েকটি সাহিত্য-নির্ভর ছবি। সূক্ষ্মভাবে বাণিজ্যিক এবং শৈল্পিক ছবির মধ্যে সেতু রচনা করেছিলেন। তাঁর ‘শ্বেত পাথরের থালা’ এবং ‘লাঠি’ পেয়েছে জাতীয় পুরস্কার। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ভালবাসতেন। রাহুল দেব বর্মণ, বাপি লাহিড়ীর পাশাপাশি তাঁর ছবিতে সুর দিয়েছেন কবীর সুমন, নচিকেতা চক্রবর্তী প্রমুখ। দর্শকদের দেওয়ার চেষ্টা করতেন সেরাটুকু। চলচ্চিত্র পরিচালনার সঙ্গে সঙ্গে পরিচালনা করেছেন সিরিয়াল, টেলিফিল্ম। বড়পর্দা এবং ছোটপর্দায় দেখা গেছে তাঁর অভিনয়ও। দীর্ঘ কেরিয়ারে খুব কাছ থেকে দেখেছেন তারকাদের। তাঁর হাতেও জন্ম হয়েছে বহু অভিনেতা অভিনেত্রীর। বিচিত্র অভিজ্ঞতা। ছোটবড় বিভিন্ন ঘটনা তিনি উজাড় করেছেন আত্মজীবনী ‘ক্ল্যাপস্টিক’-এ। কেন এমন নামকরণ? কারণ, প্রভাত রায়ের পেশাগত জীবন শুরু হয়েছিল ক্ল্যাপস্টিক ঠুকে।
আরও পড়ুন-মানসিক শক্তি বাড়ায় আপটন, দেশে ফিরে বললেন হরমনপ্রীত
রবিবার, ৪ অগাস্ট কলকাতার হোটেল হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশনালে ‘ক্ল্যাপস্টিক’-এর প্রকাশ অনুষ্ঠানে বসেছিল চাঁদের হাট। প্রভাত রায় নিজে তো ছিলেনই, তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে উড়ে এসেছিলেন বলিউড অভিনেতা সচিন পিলগাঁওকর। এছাড়াও ছিলেন রঞ্জিত মল্লিক, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দেবাশিস কুমার, সব্যসাচী চক্রবর্তী, হরনাথ চক্রবর্তী, সুদেষ্ণা রায়, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, সোহম চক্রবর্তী, ফাল্গুনি চট্টোপাধ্যায়, আবির চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ বসু, টোটা রায়চৌধুরী, অভিজিৎ গুহ, প্রেমেন্দু বিকাশ চাকি, রূপক সাহা, দীপ্তাংশু মণ্ডল প্রমুখ।
১৯৭০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত টানা কাজ করেছেন প্রভাত রায়। কেন লিখলেন আত্মজীবনী? বইয়ের ‘সূচনা’য় জানিয়েছেন, ‘অনেকগুলো স্মৃতির ঢেউ মনের মধ্যে আছড়ে পড়ছিল। দেখলাম কত ঘটনাই না ঘটেছে আমার জীবনে। কত অভিজ্ঞ-বিখ্যাত মানুষের সান্নিধ্যে এসেছি। কতকিছু শিখেছি, জেনেছি। সবগুলো সাজিয়ে এক জায়গায় কিছু লিখতে ইচ্ছে হল। এই লেখা তারই প্রয়াস।’
দুটি পর্বে বিভক্ত বইটি। প্রথম ইনিংসে আছে যুদ্ধ-রক্ত-ব্যর্থতা-সাফল্য। শুরুতেই ‘ফ্ল্যাশব্যাক’। জন্ম জামশেদপুরে। বেড়ে ওঠা মেদিনীপুর ও ব্যারাকপুরে। সেখান থেকে সোজা আরব সাগরের তীরে। মায়ানগরী মুম্বইয়ে। খুব সহজ ছিল না জার্নি। কিছু সহৃদয় মানুষ দাঁড়িয়েছিলেন পাশে। জানিয়েছেন ‘মুম্বই মেরি জান’-এ। তারপর? ‘অমানুষ’, ‘পথপ্রদর্শক’ শক্তি সামন্ত এবং ‘গুরু’ উত্তমকুমার। প্রভাত রায় ‘অমানুষ’-এর বাংলা ভার্সনের সংলাপ রচনা করেছিলেন। সেই সময় ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল মহানায়কের সঙ্গে। এরপর একে-একে এসেছে ‘কাশ্মীর কি কলি’, ‘দাদামণি’, ‘শাপভ্রষ্ট সুপারস্টার’, ‘পেটুক হরিভাই’, ‘এ ফর অমিতাভ’, ‘কিতনে আদমি থে?’ ‘হি-ম্যান’, ‘মধুর মানুষ’, ‘লঙ্কা যত ঝাল, তত সুর’, ‘পাগলা দিওয়ানা’, ‘গোল্ডেন বয়’, ‘চাহে কোই মুঝে শাম্মি কহে’, ‘মুখুজ্যেমশাই’, ‘রাখির কাছে ঋণী’, ‘পড়ে পাওয়া ষোলোআনা’, ‘আমার রূপ সিং’, ‘রক্তভেজা লাল ফেট্টি এবং হাউসফুল বোর্ড’, ‘মিসেস সেন’, ‘সিনেমার মতো’, ‘প্রতীক বেজন্মা’, ‘হার-জিৎ’, ‘আমার শ্বেত পাথর’, ‘ভাঙা গড়ার খেলা’, ‘ভিক্টর হরি ওম’, ‘সকলের বুম্বা’, ‘তোমাকে এখনও খুব প্রয়োজন’, ‘এপিঠ ওপিঠ’, ‘কিংবদন্তি’, ‘অজানা পথের সন্ধানে’, ‘পথের সাথীরা’, ‘শেষ অধ্যায়’, ‘তুমি এলে তাই’ শীর্ষক লেখাগুলো। শেষে দ্বিতীয় ইনিংস ‘পুনর্জন্ম’।
আরও পড়ুন-আইপিএলে আরটিএম নিয়মের বিপক্ষে অশ্বিন
বিভিন্ন মানুষের কথা উঠে এসেছে। এসেছে বিভিন্ন ছবির কথা। কত ঘটনা। কত স্মৃতি। উজাড় করেছেন প্রভাত রায়। অকপটে। কোনও কোনও অংশ ছায়াছবির চিত্রনাট্যের মতো। লেখার পাশাপাশি আছে কিছূ দুষ্প্রাপ্য ছবি। দীপ প্রকাশন প্রকাশিত ‘ক্ল্যাপস্টিক’ বইটির সহ-লেখিকা একতা ভট্টাচার্য। সম্পাদনা করেছেন গৌতম ভট্টাচার্য। বইটি বাংলা তথা ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সময়ের দলিল হিসেবে থেকে যাবে। দাম ৩৫০ টাকা।