প্রতিবেদন : বাংলা থেকেই আওয়াজ উঠুক, অমিতাভ বচ্চনকে ভারতরত্ন দেওয়া হোক। ২৮তম কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চ থেকে এই দাবি তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee- KIFF)। চলচ্চিত্র উৎসবের মতো ভিন্ন মঞ্চ হলেও এদিন এই মঞ্চ থেকেই আবারও নাম না করে কেন্দ্রকে নিশানা করলেন তিনি। তাঁর কথায়, বাংলা কারও কাছে মাথা নত করবে না। বাংলা লড়াই চালিয়ে যাবে। বাংলার অতীত ইতিহাস লড়াইয়ের। মনীষীরাই এই পথ দেখিয়ে গিয়েছেন। বাংলা কারও কাছে ভিক্ষে করবে না। কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়ে এভাবেই এদিন সরব ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন অমিতাভ বচ্চনের হাতেই চলচ্চিত্র উৎসবের সূচনা হল। মঞ্চে ছিল চাঁদের হাট। বলিউড বাদশা শাহরুখ খান, জয়া বচ্চন, রানি মুখোপাধ্যায়, কুমার শানু, বাবুল সুপ্রিয়, অরিজিৎ সিং থেকে বাংলায় টলিউডের অভিভাবকসম প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দেব, আবির, শুভশ্রী, শ্রাবন্তী, পাওলি, কাঞ্চন— কে ছিলেন না। টেকনিশিয়ান-প্রোডিউসার সহ উপস্থিত ছিল গোটা টলিউড। আর ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ছিলেন বাংলার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তিনি এই চলচ্চিত্র উৎসব ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন। রাজ্যপালের কথায়, দেশ-বিদেশের আন্তর্জাতিক মানের নানা চলচ্চিত্র উৎসবের মধ্যে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবই শ্রেষ্ঠ। যাকে বলে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। আর বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হলেন একাধারে কবি-শিল্পী-সাহিত্যের মননে ভরপুর একজন মানুষ। তাঁর এই মাপের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। কোভিডের ভয়ঙ্কর দু’বছর পার করে আসার পর এবছর ২৮তম চলচ্চিত্র উৎসবের মেজাজ আবারও সেই রাজার মতোই। স্বভাবতই এদিনের নেতাজি ইন্ডোরে ঠাঁই নাই অবস্থা। প্রবেশ আমন্ত্রণমূলক হলেও এদিনের একটি এন্ট্রি কার্ডের জন্য রীতিমতো মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়েছে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ের ট্রুপ নৃত্য পরিবেশন করে।
আরও পড়ুন-কলকাতার চলচ্চিত্র উৎসব বেনজির, প্রকৃত রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার
বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিগ বি সহ তাঁর সহধর্মিণী অভিনেত্রী সাংসদ জয়া বচ্চন, বলিউড বাদশা শাহরুখ খান, রানি মুখোপাধ্যায়, অভিনেতা-সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা, বলিউড প্রযোজক মহেশ ভাট, কুমার শানু, অরিজিৎ সিংদের উপস্থিতিতেই অমিতাভ বচ্চনকে ভারতরত্ন দেওয়ার দাবি তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, এটা যদিও অফিসিয়াল নয় তাও বলি তাঁকে ভারতরত্ন দেওয়া উচিত। কারণ তিনি দেশের আইকন। এরকম আইকন আর পাবেন না৷ আমাদের তাই এই আওয়াজ তুলতে হবে। শাহরুখকে নিজের ভাই বলে সম্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওকে আমি রাখি পরাই। শাহরুখ খান বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডার। অমিতাভ বচ্চন- শাহরুখ খান দেশের গর্ব। এদের জন্য একটা স্ট্যান্ডিং ওভেশন দরকার। একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে গোটা স্টেডিয়াম উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি সহযোগে সম্মান জানায়। এদিন অমিতাভ-শাহরুখ-কুমার শানু-অরিজিৎ সিংদের দেখে মুহুর্মুহু হাততালি ও চিৎকারের ঝড় ওঠে। কুমার শানু ও অরিজিৎ দু’কলি করে গেয়ে শোনান তাঁদের হিট গানগুলি। শাহরুখ ছিলেন যথারীতি বাদশার মেজাজেই। কিং খান রানি মুখোপাধ্যায়ের লিখে দেওয়া বাংলায় কিছুটা বক্তব্য রাখেন। তাতেই মাত করে দেন। কিং খান নিজের স্টাইলেই তাঁর আগামী ছবি পাঠানের একলাইন ডায়ালগও বলেন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, আমি এই জগতের মানুষ নই, তবুও আমায় ডাকা হয়। আমি অভিভূত। জয়া বচ্চন বলেন, আপনাদের জামাইবাবু এখানে রয়েছেন তাই বেশি কথা বলব না। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানেন, যখনই প্রয়োজন হবে আমি তাঁর পাশে থাকব। রানি মুখোপাধ্যায় আবার দীর্ঘদিন বাদে বাংলায় ফিরে আসতে পেরে ভাল লাগার কথা বলেন। আজ থেকে অমিতাভ বচ্চনকে দেশের আইকন এবং শাহরুখ খানকে দেশের জনপ্রিয়তম নায়ক বলে অভিহিত করেন। বক্তব্য রাখেন মহেশ ভাট ও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও।
তবে এই উৎসবের আবহেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee- KIFF) কেন্দ্রকে যে কড়া বার্তা দিয়েছেন, তাতে আগামী দিনে কেন্দ্রের বঞ্চনা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে লড়াই জারি থাকবে তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন।