কার্নিভাল নিয়ে বিরোধীদের কুৎসার যুক্তি দিয়ে মোক্ষম জবাব মুখ্যমন্ত্রীর

Must read

“কার্নিভাল বাংলার গর্ব। বাংলার ক্লাবগুলো অপেক্ষা করে থাকে। কোনও দুর্যোগের পর কাজ শুরু করতে সময় লাগতে। সে দিন যদি আসতামও, এসে কী করতাম? প্রশাসন আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তে। ত্রাণ-উদ্ধারে দেরি হত“। মঙ্গলবার, উত্তরের বিপর্যয়গ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের পরে উত্তরকন্যার সাংবাদিক বৈঠক থেকে বিরোধীদের কুৎসার যুক্তি দিয়ে জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।

শনিবার রাতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যেও রবিবার কলকাতায় কেন রেড রোডে দুর্গাপুজোর কার্নিভালের অনুষ্ঠান করা হল, কেন ওই দিনই উত্তরবঙ্গ গেলেন না মুখ্যমন্ত্রী? সেই সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলে সমালোচনা করে বিরোধীরা। এদিন যুক্তি দিয়ে সেই কুৎসার মোক্ষম জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রবিবার সকালেই উত্তরের জেলাগুলির প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। তখনই প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন। সেই কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, “৪ তারিখ ভোর ৫টায় ডিজি এবং মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলাম। স্থানীয় স্বাস্থ্য ও জেলা আধিকারিকেরা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছিলেন। একটা দুর্যোগ ঘটে গেলে কাজ শুরুর জন্য অন্তত ৪৮ ঘণ্টা সময় দিতে হয়।“

এর পরে নাম না করে বিজেপির বিধায়ক-সাংসদদের প্রচুর গাড়ি নিয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, “প্রচুর বাড়ি, রাস্তা ভেঙেছে। অনেক জায়গায় সেতুও ভেঙেছে। ভিভিআইপিরা ৪০টি গাড়ির কনভয় নিয়ে যাতায়াত করেন। এত গাড়ির চাপে ভাঙছে গ্রামীণ রাস্তা।“

আরও পড়ুন- শক্তির যান্ত্রিক টানেলিং আবিষ্কার, পদার্থবিদ্যায় নোবেল পেলেন ৩ বিজ্ঞানী

এর পরেই কার্নিভাল নিয়ে বিরোধীদের কুৎসার জবাবে মমতা বলেন, “কেউ কেউ রাজনীতি শুরু করে দিয়েছেন তখন বাংলায় কেন কার্নিভাল হল? আরে কার্নিভাল তো বাংলার গর্ব! বাংলার ক্লাবগুলো অপেক্ষা করে থাকে এর জন্য, তার কি কোনও মূল্য নেই? কোনও দুর্যোগের পর কাজ শুরু করতে ন্যুনতম সময় লাগে। সে দিন যদি আসতামও, এসে কী করতাম?“ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “প্রচুর বাড়ি, রাস্তা ভেঙেছে। অনেক জায়গায় সেতুও ভেঙেছে। জল একটু নামলে ফিল্ড স্টাডি শুরু হবে। আর ওই দিন যদি আসতাম, আমাদের মতো ভিআইপিদের দেখতে গিয়ে জেলা প্রশাসন ব্যস্ত হয়ে পড়ত। কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ? দুর্গতদের উদ্ধার করা, তাদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের ত্রাণ দেওয়া? নাকি শুধু ভিআইপিদের দেখাশোনা করা? ভিভিআইপিরা কেউ কেউ ৩০-৪০টি গাড়ির কনভয় নিয়ে যাতায়াত করছেন। এত গাড়ির চাপে গ্রামীণ রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে। আমাদের কড়া নির্দেশ দেওয়া আছে, কেউ গেলে তিনটির বেশি গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন না।“ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “৫ তারিখ ভোর পাঁচটায় মিটিং করেছি। ৯ টার মধ্যে পুলিশ, দমকল, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী সকলে পৌঁছে গিয়েছিল।”

নরেন্দ্র মোদির মিথ্যাচারের জবাবে মমতা বলেন, “মানুষ মারা যাচ্ছেন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে, অথচ বলা হচ্ছে সেতু ভেঙে মৃত্যু হয়েছে। অন্য রাজ্যেও তো সেতু ভাঙছে। আমরা তো তা নিয়ে রাজনীতি করি না। আমি সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি। কিন্তু হিমাচলের দুর্যোগে ওরা কী করেছিল? মৃতের সংখ্যা লুকিয়েছিল! মহাকুম্ভের সময় তো অর্থ সাহায্য করেনি।”

স্থানীয় প্রশাসনের প্রশংসা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “পরিস্থিতি জটিল হতে পারে বুঝতে পেরে প্রশাসন স্থানীয়দের সতর্ক করেছিল। তাই বহু মৃত্যু ঠেকানো গিয়েছে। নাগরাকাটা নিচু এলাকা নয়, কিন্তু হড়পা বান এমনভাবে এসেছে, আসলে দুর্যোগ জেনেও অনেকেই ঘর ছাড়তে চাননি।”

মুখ্যমন্ত্রী জানান, “প্রাথমিক পর্যায়ে যা যা করার করে গেলাম, প্রশাসনিক কর্তারা বাকি কাজ করবেনই। কাল এখান থেকে বেরিয়ে গেলেও দু’তিন দিনের মধ্যে আবার ফিরে আসব। তত দিনে ফিল্ড সার্ভে করে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত খতিয়ান জানার সময়ও পাওয়া যাবে।“ বুধবার দুপুরে কলকাতায় ফিরবেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্নে যাবেন। বৃহস্পতিবার, পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচিতে খড়্গপুরে যাবেন। আগামী সপ্তাহে ফের উত্তরবঙ্গে যেতে পারেন জানিয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।

Latest article