লন্ডনে ভারতীয় হাই কমিশনারকে পাশে বসিয়ে বাংলায় লগ্নির আহ্বান, বন্দিত মুখ্যমন্ত্রীর শিল্পনীতি

বাম জমানায় হারিয়েছিল শিল্প গৌরব, এখন পুনরুদ্ধার

Must read

কুণাল ঘোষ, লন্ডন (মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী): মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Banerjee) শিল্পনীতির জয়জয়কার লন্ডনে। মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলায় শিল্পের পুনর্জন্ম হয়েছে। তাঁর শিল্পনীতির প্রতিটি ধাপ লগ্নিবান্ধব। মঙ্গলবার লন্ডনের শিল্প বৈঠকে শিল্প কর্ণধারদের প্রবল প্রশংসার মধ্যে স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বাংলায় ব্রিটিশ লগ্নি বাড়ানোর ডাক দিলেন, তখন তাতে সাড়া পড়ল বিপুল। মুখ্যমন্ত্রীর সবিস্তার ব্যাখ্যায় আহ্বান, বাংলায় বিনিয়োগ করুন। ক্ষতি হবে না। লাভ হবে আপনাদের। তিনি বলেন, আগের সরকারের জন্য গৌরব হারিয়েছিল বাংলা, এখন পুনরুদ্ধার করে দেশের সেরার দিকে এগোচ্ছি। এদিন শিল্প বৈঠকের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Banerjee) নেতৃত্বাধীন বর্তমান বাংলার উজ্জ্বল ছবি তুলে ধরেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। লন্ডনে ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম ডোরাইকে পাশে বসিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার উন্নয়নের বিস্তারিত তথ্য-পরিসংখ্যান তুলে ধরলেন। একটার পর একটা উদাহরণ তুলে ধরে তাঁর ৩৫ মিনিটের বক্তৃতায় ব্রিটেনের শিল্পমহলের কাছে ব্যাখ্যা করলেন, কেন বাংলা এখন বিনিয়োগের সেরা গন্তব্য হয়ে উঠেছে। ব্রিটেনের সঙ্গে ভারত তথা বাংলার পারস্পরিক নিবিড় ও ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বললেন, এখন পরিবর্তনের বাংলা মানে বাণিজ্য। আমরা এখন রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতো লড়তে জানি। শিল্প বৈঠকে বাংলার শিল্প ও সংস্কৃতি, উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও খেলা নিয়ে বিশেষ ভিডিও দেখানো হয়। ব্যাকগ্রাউন্ডে কবীর সুমন গাইছেন, ‘ধ্বনিল আহ্বান…’। মুখ্যমন্ত্রী এদিন তাঁর রাজনৈতিক লড়াই, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে, সাতবারের সাংসদ হিসেবে এবং বাংলার তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে যান লর্ড স্বরাজ পল।

কলকাতা-লন্ডন উড়ান : এদিন ব্রিটিশ এয়ারওয়েজকে কলকাতা-লন্ডন সরাসরি উড়ান চালুর অনুরোধ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যাঁরা প্রথম আসবেন, তাঁদের জ্বালানিতে ছাড় দেব। অন্ডালে গ্রিন এয়ারপোর্ট চালু হয়েছে। একটাও আসন খালি থাকবে না। আমরা এখন প্রতিদিন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগে এই বিমান পরিষেবা ছিল। আমরা ক্ষমতায় আসার আগে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই পরিষেবা চালু করলে আপনাদের ব্যবসা বাড়বে। আমরা জ্বালানিতে ছাড় দিয়ে দেব। যাঁরা প্রথম এগিয়ে আসবেন তাঁদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে।

শিল্পনীতির জয়জয়কার : আগের বাম সরকারের সময় তাদের দিশাহীন ভ্রান্ত নীতির জন্য বাংলার গৌরব ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। কিন্তু ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আসার পর থেকে গত ১৩ বছরে সেই হৃত গৌরব ফিরে পেয়েছে বাংলা। মঙ্গলবার শিল্প বৈঠকে বাংলায় নিজেদের লগ্নির অভিজ্ঞতা এবং মা মাটি মানুষের সরকারের সঠিক শিল্পনীতি ও বাংলার সার্বিক উন্নয়নের জন্যেই তা সম্ভব হয়েছে, একথা বললেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সফরকারী বাংলার প্রথম সারির শিল্পপ্রতিনিধি দলের সকলেই। যা শুনে আপ্লুত ব্রিটিশ বণিক মহল।

আরও পড়ুন-মউ, রাজ্যে ম্যান সিটি ফুটবল স্কুল

ফুটবল মউ : বাংলার ক্রীড়া চিত্রকে মজবুত করল মঙ্গলবার লন্ডনের মাটিতে টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপের সঙ্গে প্রখ্যাত ম্যাঞ্চেস্টার সিটি ক্লাবের মউ স্বাক্ষর। এই চুক্তি অনুযায়ী বাংলায় একটি ফুটবল স্কুল হবে যৌথ উদ্যোগে। এদেশের অন্যতম সেরা ক্লাবের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হবে বাংলার ফুটবল।

বাংলার অর্থনৈতিক উন্নতি : বাংলার অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য ভারতবর্ষের নিরিখে এখন অনেক এগিয়ে। শুধু মুখে বলাই নয়, রীতিমতো তথ্য ও পরিসংখ্যান তুলে ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার প্রমাণও দিলেন। বোঝাতে চাইলেন যে কোনও ধরনের শিল্পস্থাপনের জন্য সব দিক থেকেই বাংলা এখন প্রস্তুত। শুধু তাই নয়, দারিদ্র দূরীকরণেও এখন এগিয়ে বাংলা। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্যও আমাদের ভাবতে হয়। তাঁদের এগিয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের সরকার নিরলস কাজ করে চলেছে।

পরিকাঠামো-শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কর্মসংস্থান : বাংলায় যেমন শিল্পবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য সবরকমের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। তেমনি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও প্রভূত কাজ করেছে তাঁর সরকার। বললেন মুখ্যমন্ত্রী। সেইসঙ্গে পরিসংখ্যান দিয়ে দেখিয়ে দিলেন, বাংলায় বেকারত্ব কমেছে ৪৬ শতাংশ। গোটা দেশের নিরিখে যা অনেক। এখন সব ক্ষেত্রেই কর্মসংস্থান বেড়েছে। কমেছে মুদ্রাস্ফীতি। তাঁর আমলে দেউচা-পাঁচামির মতো কোল মাইন হচ্ছে। যা আগামী একশো বছরের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পরিষেবা নিশ্চিত করবে বলে নিজেই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার সর্বস্তরের মানুষের জন্য ৯৪টি সামাজিক প্রকল্পের কথাও তুলে ধরেন।
এদিনের শিল্প বৈঠকে লন্ডনের শিল্পমহলের প্রায় ১৫০ প্রতিনিধি যোগ দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ব্যাঙ্কিং, অর্থনৈতিক সংস্থা, টেকনোলজি সংস্থা, কনসাল্টিং, এনার্জি, ম্যানুফ্যাকচারিং, রিটেল, শিক্ষা সংস্থা-সহ একাধিক নামীদামি সংস্থা যোগ দিয়েছিল।
এছাড়াও গ্লোবাল ইনফ্রা, জিইডি ইউ, বিহোল্ড. এআই, বিটি, ভিসুভিয়াস, আইএজি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন গ্রুপ-এর মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরাও ছিলেন। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলার শিল্পসচিব বন্দনা যাদব।

Latest article