প্রতিবেদন : আদিবাসী ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির জন্য রাজ্য সরকারের বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পের সুযোগ যেন তাঁরাই পান তা নিশ্চিত করতে রাজ্য সরকার নির্দেশ দিয়েছে। এজন্য প্রকল্পের প্রচার ও জনসংযোগ বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আদিবাসী ও জনজাতিদের প্রশিক্ষণেও গতি আনতে বলা হয়েছে। সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Banerjee) পৌরোহিত্যে আদিবাসী উন্নয়ন পর্ষদের বৈঠক বসে। বিভিন্ন জনজাতি সম্প্রদায়ের মন্ত্রী, বিধায়কদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরের সচিব ও আদিবাসী সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত জনপ্রতিনিধিরা জানান, আদিবাসীদের উন্নয়নে রাজ্য সরকার একাধিক প্রকল্প ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু যথাযথ প্রচার ও সচেতনতার অভাবে প্রকৃত সুবিধাভোগীরা এইসব প্রকল্পের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই নির্দেশ বলে জানা গিয়েছে। রাজ্যের চারজন জনজাতি মন্ত্রীকে আদিবাসী এলাকায় গিয়ে এই নিয়ে প্রচারে গতি আনতে নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষ রয়েছে এমন জেলাগুলিতে ভাষা ও সংস্কৃতি প্রসারের জন্য একটি কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বৈঠকে। এই কমিটি ভাষা সাহিত্য এবং সংস্কৃতির প্রসার এবং বিস্তারে কাজ করবে। পাশাপাশি ওই সব এলাকার বিধায়কদেরও সক্রিয়তা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবার কালিম্পং ও ঝাড়গ্রামে আদিবাসী ভবন গড়ে তোলা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও পাহাড়ের অনুকরণে জঙ্গলমহলেও হোম স্টের প্রসারে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে রাজ্য সরকার। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় পর্যটনের বিকাশের পাশাপাশি স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বৈঠকে অভিয়োগ জানানো হয়, আদিবাসী গ্রামগুলিতে বাইরে থেকে লোকেরা এসে হোম-স্টে তৈরি করছেন। কিন্তু তাতে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের কোনও উপকার হচ্ছে না। সে কারণে স্থানীয় যাঁরা হোম-স্টে তৈরি করতে ইচ্ছুক, তাঁদের উৎসাহ ও সরকারি অনুদান দিয়ে সাহায্য করার বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে নবান্নে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে। পর্যটন বিকাশে বিশেষত জঙ্গলমহল এবং সুন্দরবন এলাকায় হোম স্টেতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে রাজ্য। তাই এই এলাকাগুলিকে স্পেশাল ক্যাটাগরির আওতায় ইতিমধ্যে আনা হয়েছে।
আরও পড়ুন- অজানা নিশ্চিন্দপুরের দিকে পাড়ি দিলেন, শেষ হল জীবনের পথে চলার পাঁচালী
রাজ্যের ৪ মন্ত্রী আদিবাসী নেতা ও মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা, জ্যোৎস্না মান্ডি, সন্ধ্যারানি টুডু ও বুলুচিক বড়াইককে মুখ্যমন্ত্রী দায়িত্ব দিয়েছেন আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে গিয়ে সেখানকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সমস্যা, অভাব-অভিযোগ শুনবেন। এবং তাঁদের জন্য রাজ্য সরকারের যে প্রকল্পগুলি রয়েছে যাতে তাঁরাই সেগুলি ঠিকঠাকভাবে পান তা নিশ্চিত করবেন। এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে আদিবাসীদের জঙ্গলের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছেন সেই সংক্রান্ত কোনও সমস্যা বা জমির পাট্টা নিয়ে কোনও সমস্যা থাকলে তাও বিস্তারিত শুনবেন। প্রয়োজন তার সমাধান করবেন।
পর্যটনের বিকাশে রাজ্যকে যে পাঁচ জোনে ভাগ করা হয়েছে তার মধ্যে ওই স্পেশাল ক্যাটাগরি ছাড়াও দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, উত্তর এবং দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা রয়েছে বিশেষ জোনের আওতায়। ওই এলাকায় হোম-স্টে গড়ে তোলা হলে, সরকারের তরফে সুযোগ-সুবিধা মিলবে অনেকটাই বেশি৷ এছাড়া যোগ্যরা যাতে সবাই যাতে জাতিগত শংসাপত্র হাতে পান সোমবার নবান্নের বৈঠকে তা সুনিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনের বৈঠকে আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি তথা মালদহ উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও দশরথ তিরকেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা বৈঠক এড়িয়ে যান। বৈঠকে এপ্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন নিয়ে আলোচনার জন্য সকলের জন্য দরজা সবসময় খোলা রয়েছে। এবার কেউ তাতে শামিল হবেন কি না সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়।