প্রতিবেদন : দেশের অর্থনৈতিক বুনিয়াদে কী নিষ্ঠুরভাবে আঘাত করে চলেছে কেন্দ্র, তা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। তাঁর আশঙ্কা, কেন্দ্র যে কোনওদিনই বলবে, এলআইসি উঠিয়ে দাও, ব্যাঙ্ক উঠিয়ে দাও, পোস্ট অফিস উঠিয়ে দাও। মানুষ যাবে কোথায়? আশঙ্কার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার হাওড়ার পাঁচলায় এক সরকারি অনুষ্ঠানে প্রশ্নের ছলে তাঁর মন্তব্য, আপনাদের ব্যাঙ্কে টাকা আছে? লাইফ ইনসিওরেন্স করেন? সেই টাকা যাচ্ছে কোথায়? আদার ব্যাপারীর কাছে যাচ্ছে। আসলে কেন্দ্রে এমন একটা সরকার আছে যাদের শুধু মুখে ভাষণ। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এদিন আগাগোড়াই আক্রমণাত্মক ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের আর্থিক বঞ্চনার তথ্য তুলে ধরে কেন্দ্রকে রীতিমতো যুক্তিবাণে জর্জরিত করে তাঁর মন্তব্য, অনুরোধ করব, গরিবের টাকা মারবেন না। পাঁচলার অনুষ্ঠান থেকেই এদিন রাজ্যের ১৫ জেলার ৯১১টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata Banerjee)। সবমিলিয়ে ২ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকার প্রকল্প। ৬ লক্ষ মানুষের কাছে সরাসরি পৌঁছে যায় পরিষেবা। জনকল্যাণে একের পর এক প্রকল্পের সাফল্যের ছবি তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধীদের কটাক্ষ করে দৃঢ়তার সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, তোমরা আমায় গালাগালি দিলে গায়ে ফোসকা পড়বে না। আমি আরও কাজ করব। লড়াই করো। জয় হবেই।
এক নজরে
* কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে নতুন ব্রিজ। পাশাপাশি ২ লেনের আন্ডারপাস
* ফুরফুরা শরিফে ১০০ বেডের হাসপাতাল
* সাগর দত্ত হাসপাতালে চালু হচ্ছে ক্যান্সার ইউনিট
* হুগলির ইমামবাড়া জেলা হাসপাতাল এবং ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দুটি ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট
* ২১৮টি অ্যানিম্যাল অ্যাম্বুল্যান্স চালু
* ২০৮টি পানীয় জল প্রকল্পের শিলান্যাস
কেন্দ্রের আর্থিক বঞ্চনার প্রতিবাদ : বাংলার প্রতি কেন্দ্রের আর্থিক বঞ্চনার ছবিটা এদিন স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে মুখ্যমন্ত্রীর কথায়। ১০০ দিনের কাজের ৭ হাজার কোটি টাকা দেয়নি কেন্দ্র। আমার বাড়ি, বাংলার বাড়ি প্রকল্পের টাকা কেমনভাবে আটকে রেখেছে কেন্দ্র, তাও স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন মানুষকে। আটকে আছে ১১ লক্ষ বাড়ির টাকা। কেটে নেওয়া হয়েছে ফুড সাবসিডির টাকা। কেটে নেওয়া হচ্ছে শিক্ষা-স্বাস্থ্যের টাকাও। গ্রামীণ রাস্তা তৈরির টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রেও কেন্দ্রের বিমাতৃসুলভ আচরণ নিয়ে তীব্র ক্ষোভপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, রাজ্য থেকে টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছে, অথচ রাজ্যের টাকাই দিচ্ছে না। জানান, গ্রামের রাস্তার জন্য দু’হাজার কোটি টাকার আলাদা তহবিল তৈরির কথাও।
আরও পড়ুন-স্লোগানে বিব্রত প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতা থামিয়ে বসে পড়লেন
পুনরুদ্ধারের পথে হাওড়ার হৃত-গৌরব : বামজমানার অন্ধকারাচ্ছন্ন দুঃস্বপ্নের দিন কাটিয়ে উঠে ভারতের একসময়ের ম্যাঞ্চেস্টার হাওড়া কেমন করে এগিয়ে চলেছে হৃত-গৌরব পুনরুদ্ধারের পথে, তা ব্যাখ্যা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, শিল্পের জোয়ার এসেছে হাওড়ায়। ৫ হাজার শিল্পে বিনিয়োগ হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা। ইতিমধ্যেই কর্মসংস্থান হয়েছে ৬৭ হাজার মানুষের। আরও ১১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব বাস্তবায়নের অপেক্ষায়। কর্মসংস্থানের দরজা খুলে যাবে আরও দেড় লক্ষ মানুষের জন্য। হাওড়ায় ৩০ হাজারেরও বেশি এমএসএমই ইউনিটে চালু হয়েছে ২৭টি ক্লাস্টার। এখানে কর্মরত ১ লক্ষ মানুষ। আরও এমএসএমই গড়ে উঠছে। হাওড়াকে এমএসএমই হাব হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে গার্মেন্টস এবং টেক্সটাইল সেক্টরে। সরকারি সহযোগিতায় দুটি পার্ক হয়েছে, আরও দুটি হবে। কর্মসংস্থান হবে আরও প্রায় এক লক্ষ ছেলেমেয়ের। ৬২ একর জমির উপর ফুডপার্ক গড়ে উঠলে কাজ পাবেন প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ। বৃহস্পতিবার নিয়োগপত্র দেওয়া হল ৩ জনকে। এদিন শুধু হাওড়াতেই উদ্বোধন করলেন ৫৯টি প্রকল্পের। এর জন্য ৫২৩ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই। পরিষেবা পাচ্ছেন ১ লক্ষ ৬৬ হাজার মানুষ।
আরও যা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী : দুয়ারে সরকারে ৯ কোটি দরখাস্ত এসেছিল। ৭ কোটিরও বেশি দেওয়া হয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার ৬ লক্ষ মানুষের কাছে সরাসরি পৌঁছবে পরিষেবা। কোনও জেলা যাতে পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না হয় তার জন্য এই ব্যবস্থা। বন দফতরের জন্য ৩০০ মোটর সাইকেল দেওয়া হচ্ছে। ২০৮ পানীয় জল-প্রকল্পের শিলান্যাস হল।২০২৪-এ গ্রামবাংলার প্রতিটি বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য। চালু হল ২১৮টি অ্যানিম্যাল অ্যাম্বুল্যান্স। ফুরফুরা শরিফে ১০০ শয্যার হাসপাতাল হচ্ছে। সাগর দত্ত হাসপাতালে নতুন ক্যান্সার ভবন। বলাগড়ে সবুজদ্বীপে পর্যটনকেন্দ্র শুরু। হাওড়ার ডুমুরজলা স্টেডিয়ামের নতুন নাম সবুজসাথী স্টেডিয়াম। কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে নির্মিত হচ্ছে নতুন সেতু এবং আন্ডারপাস। নিউ টাউনে নতুন চিড়িয়াখানা। বানতলা চর্মনগরীতে গড়ে উঠেছে ৩টি নতুন ইউনিট। কাজ পেয়েছেন ৩ লক্ষ মানুষ। দেউচা-পাঁচামিতে এখনও পর্যন্ত ৩৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ।