মণীশ কীর্তনিয়া: আরজি করের ঘটনায় রবিবারের মধ্যে সিবিআইকে বিচার করতে হবে। ডোরিনা ক্রসিংয়ে জনস্রোত থেকে আওয়াজ তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। শুক্রবার বিকেলে মৌলালি থেকে ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত জনস্রোতে ভাসল মহানগর। দোষীর ফাঁসির দাবিতে এবং রাম-বামের চক্রান্তের কথা মনে করিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, এই মিছিল প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের। সত্য উদ্ঘাটিত হোক। দোষীরা শাস্তি পাক।
এদিনের মৌলালি থেকে ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত মিছিলে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। মিছিল যখন ডোরিনা ক্রসিংয়ে পৌঁছেছে তখন মিছিলের শেষপ্রান্ত থেকেছে মৌলালিতে। ডোরিনা ক্রসিংয়ে এসেই সাংসদ শতাব্দী রায়ের নেতৃত্বে চলে দীর্ঘক্ষণ স্লোগান। একদিকে ছিল আরজি কর-কাণ্ডের অপরাধীদের ফাঁসির দাবি। অন্যদিকে রাম-বাম রাজনৈতিক চক্রান্তের প্রতিবাদ। মুখ্যমন্ত্রী প্রথমেই বলেন, রাজ্য জুড়ে ফেক ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছে চক্রান্তকারীরা। আসল উদ্দেশ্য উত্তেজনা তৈরি করা। ওরাই সেদিন আরজি করে ভাঙচুর করেছে। মূল উদ্দেশ্য রাজ্য সরকারকে বদনাম করা।
আরও পড়ুন-আত্মহত্যা বলেনি পুলিশ গুজব রটাবেন না : সিপি
মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata Banerjee) বলেন, ঘটনা যখন জানতে পারি তখন ঝাড়গ্রাম থেকে ফিরছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলি। তাঁদের স্পষ্ট বলি, দুঃখ জানানোর ভাষা নেই। আমরা অপরাধীদের ফাঁসি চাইছি। এরপর সোমবার বাড়ি গিয়ে কথা বলে এসেছি। অন্যদিকে, পড়ুয়ারা যা যা দাবি করেছিল তা মেনে নেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্ত হয়েছে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে। তার ভিডিওগ্রাফি হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা হচ্ছিল। ৩৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখতে ১৬৪ জনের টিম তৈরি করা হয়। আমি মৃতার মা-বাবাকে বলে এসেছিলাম, চারদিন সময় দিন। অপরাধীদের ধরতে না পারলে তদন্ত সিবিআইকে দেওয়া হবে। কিন্তু মামলা করে সিবিআইয়ের হাতে দেওয়া হয়েছে তদন্তভার। এখন চাইব সিবিআই রবিবারের মধ্যে বিচার শেষ করুক। এরপরই সিপিএম-বিজেপিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। মানবিকতা বা সৌজন্যের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, বুদ্ধবাবু অসুস্থ হলে বা কোনও ঘটনা ঘটলে আমি বুদ্ধবাবুর বাড়িতে গিয়েছি। কিন্তু হাজরায় যখন মেরে ফেলতে চেয়েছিল তখন ক’জন আমাকে দেখতে গিয়েছিল! ১৯৯৯-এর দাঙ্গায় রাইটার্সে গিয়েছিলাম। বলেছিলাম, বলুন আমাকে কী করতে হবে? ৬ দিন রাস্তায় ছিলাম। ত্রাণ বিতরণ করেছি। এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ডাঃ অনিতা দেওয়ানকে কারা ধর্ষণ করে খুন করেছিল? কোচবিহারের নার্স বর্ণালি দত্তকে কারা খুন করেছিল? সিঙ্গুরের তাপসী মালিককে কারা খুন করেছিল? নন্দীগ্রামে গণধর্ষণ, খুন কিংবা রঘুনন্দন, রবীন, বিমান, হায়দারদের কারা মেরেছিল? আনন্দমার্গী সন্ন্যাসী খুন থেকে বর্ধমানের সাঁইবাড়ির ঘটনা। ওদের হাত রক্তাক্ত। ওদের কাছে মানবিকতা শিখব?
বিজেপিকে পাল্টা আক্রমণ করে বলেন, ওরা তো একের পর এক অপরাধে অপরাধী। উন্নাও, হাথরস, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, ওড়িশা, বিহার— মহিলাদের ধর্ষণ করে খুন। মণিপুরে ধর্ষণ করে মহিলাদের নগ্ন করে প্যারেড করানো হয়। বিলকিসকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তাঁর পরিবারকে যারা খুন করেছে তাদের মুক্তি দিয়ে বিজেপি তাদের মালা পরিয়েছে। সাক্ষী মালিকদের উপর যারা যৌন হয়রানি করেছে তার ছেলেকে বিজেপি এমপি টিকিট দিয়েছে। মাঝরাতে রাজ্যপাল বদল হল। অথচ বাংলার রাজ্যপালের বিরুদ্ধে এত বড় অভিযোগ তবু সরানো হল না। এই বিজেপি আবার বড় বড় কথা বলছে! ওদের লজ্জা করে না? বাংলায় ঘটনা ঘটলে বিচার হয়। অন্য রাজ্যে এমপি বানানো হয়। আমরা এই জঘন্য ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাইছি।
সিপিএম-বিজেপির গুন্ডারা ভাঙচুর করেছে আরজি করে। এখনও বলছি, সাধারণ মানুষ যে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাকে স্যালুট করছি। কিন্তু জাতীয় পতাকা ব্যবহার করে ওরা গুন্ডামি করেছে। ঘটনার পরই কেন্দ্র স্বভাবসিদ্ধভাবে টিম পাঠাতে শুরু করেছে। আমার প্রশ্ন, মণিপুর, হাথরস, উন্নাও, দিল্লি খুনে ক’টা টিম গিয়েছিল? মাথায় রাখবেন আমরা মানুষের ভোটে জিতে এসেছি। মানুষের কাছেই জবাব দেব। আরজি করে প্রমাণ লুঠের জন্য ওই হামলা করেছে বাম-বিজেপি। প্রায় ১০০ কোটি টাকার সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে। আসল উদ্দেশ্য হল অশান্তির পরিস্থিতি তৈরি করা।
মুখ্যমন্ত্রী ডোরিনা ক্রসিংয়ের মঞ্চ থেকেই চিকিৎসকদের আহ্বান করে বলেন, আপনারা কাজে যোগ দিন। মানুষ পরিষেবা চাইছেন।