ভোটার তালিকায় ভূতুড়ে ভোটার নিয়ে ২০২৬-এর নির্বাচনের আগের দলকে সতর্ক করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। বৃহস্পতিবার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামের মেগা সভা থেকে এই বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। তালিকায় নজরদারিতে সুব্রত বক্সির নেতৃত্বে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ ৩৬ নেতা-নেত্রীকে নিয়ে গড়ে দেন নয়া কোর কমিটি। তৃণমূল সভানেত্রী জানান, সাত দিনের মধ্যে প্রতিটি ব্লকে কোর কমিটি গঠন করা হবে। যারা রাজ্য কমিটিকে রিপোর্ট দেবে।
এদিন ভোটার তালিকায় ভূতুড়ে ভোটার নিয়ে তথ্য প্রমাণ দিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তাঁর অভিযোগ ‘ভূতুড়ে’ ভোটার দিয়ে বাংলা দখলের খেলায় নেমেছে বিজেপি। তাঁর কথায়, “বাংলার ভোটার তালিকায় হরিয়ানার নাম। হরিয়ানা, পাঞ্জাব, রাজস্থান, বিহারের ভোটার বাড়ানো হয়েছে। মুর্শিদাবাদের ভোটারগুলিকে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নিয়ে আসবে। মুর্শিদাবাদের নেতারা সতর্ক থাকুন।” নির্বাচন কমিশনের প্রতি সম্মান জানিয়েও কটাক্ষ করেন মমতা বলেন, তাদের আশীর্বাদেই এই কাজ চলছে।
ভুয়ো ভোটার তালিকায় ঢোকাতে এজেন্সিকে দিয়ে অনলাইনে কুর্কীতি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বলেন, “আমি যতদূর জানতে পেরেছি অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্রিলিয়ান্ট মাইন্ডস, কোম্পানি ইন্ডিয়া ৩৬০ নামে দুটি এজেন্সি আছে। তারা ডেটা অপারেটদের কাছে গিয়ে নিয়েছে। কিছু বিএলআরও-কে সাথে নিয়ে অনলাইনে কারসাজি করেছে। বাংলার লোক যাতে ভোট দিতে না পারে তাই একই এপিক কার্ডে বাইরের লোকের নাম তুলেছে।”
ভুয়ো ভোটার নিয়ে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষের নাম উল্লেখ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, সাগরিকাকে ধন্যবাদ। ওই প্রথম আমাকে এই বিষয়টা জানায়। দিল্লির নির্বাচনে এটা করিয়ে হারিয়ে দিয়েছে। ওরা ধরতে পারেনি। আমরা বাংলায় এটা হতে দেব না।
এর পরে তথ্য তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ”বাংলার লোক যাতে ভোট দিতে না পারে সেজন্য একই এপিক কার্ডে বাইরের লোকের নাম তুলেছে। তার মানে বাংলার মানুষের ভোটটা বাইরের লোক এসে দিয়ে দেবে। আমি প্রমাণ দিচ্ছি। মুর্শিদাবাদের রানিনগরে বাড়ি মহম্মদ সাইদুল ইসলাম। তাঁর এপিক কার্ড নম্বরের সঙ্গে যোগ করেছে হরিয়ানার সোনিয়া দেবীর নাম। মহম্মদ আলি হোসেনের বাড়ি রানিনগর। তাঁর সঙ্গে হরিয়ানার একজনের নাম তুলেছে। বুঝতে পারছেন খেলাটা? আধার কার্ড কেলেঙ্কারি করেছে। আধার কার্ড ওদের হাতে। একই এপিক নম্বরে বাংলার ভোটারের জায়গায় হরিয়ানা, পাঞ্জাব, বিহারের নাম ঢুকিয়েছে। রেলে করে নিয়ে আসবে।”
আরও পড়ুন- লক্ষ্য ছাব্বিশের নির্বাচনে তৃণমূলের ২১৫টা আসন! বিজেপিকে একযোগে বিঁধলেন শতাব্দী-কীর্তি
তৃণমূল সুপ্রিমোর পরামর্শ, ”ডেটা অপারেটরদের উপর লক্ষ্য রাখুন। অনেক জায়গায় কিছু মিষ্টির প্যাকেট গিয়েছে। সবাই খারাপ এ কথা বলব না। যাঁরা ভালো তাঁদের ভালোভাবে পদোন্নতি করব। আর যাঁরা এই কাজ করেছে তাঁদের হাতেনাতে ধরব। কিন্তু তার জন্য আমার নথি-প্রমাণ চাই।”
এর পরেই তৃণমূল নেতৃত্বকে দলনেত্রীর বার্তা, “ভোটার লিস্ট ক্লিন করতে হবে। তা না হলে ইলেকশনের কোনও প্রয়োজন থাকবে না। ভয় পাবেন না। একটা এজেন্সিকে দিয়ে অনলাইনে এসব করানো হয়েছে। তার মানে বাংলার লোক যখন ভোট দিতে যাবে বাইরের ভোটারের নামে চলে যাবে।”
ভোটার লিস্ট পরিষ্কার করতে কমিটি গড়ে দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সুব্রত বক্সির নেতৃত্বে রাজ্য কমিটিতে থাকছেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, মালা রায়, দেবাংশু ভট্টাচার্য, জগদীশ বসুনিয়া, বাপি হালদার, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুমন কাঞ্জিলাল-সহ একাধিক শীর্ষ নেতৃত্ব। ‘ভূতুড়ে’ ভোটার ধরতে এই কমিটিকে ১০ দিনের ডেডলাইন বেঁধে দিয়েছেন দলনেত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাজ্য কমিটির পাশাপাশি, জেলাতেও কোর কমিটি গঠন করা হবে। কী হল ৩ দিন পরপর রাজ্য কমিটির কাছে রিপোর্ট পাঠাতে হবে। মমতা বলেন, “কোথায় কী বাধা পাচ্ছেন জানাতে হবে তৃণমূল ভবনে। ৪ জন করে বসবেন। রিপোর্ট করবেন।”