বুধবারও বিরোধীদের ব্যাপক হট্টগোলকে সঙ্গী করেই শুরু হয়েছে বিধানসভার (Assembly) বাজেট অধিবেশন। সেখানেই রাজ্যপালের বক্তব্যের জবাবি ভাষণে বিরোধীদের প্রবল বিক্ষোভের মাঝেও রাজ্যে উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিলেন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড সহ একের পর এক জনমুখী প্রকল্পের। পাশাপাশি গেরুয়া শিবিরকে তোপ দেগে তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য বাংলায় শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান। আমরা চাই শিল্পায়ন ওরা চায় দুর্বৃত্তায়ন।
এদিন বিধানসভায় (Assembly) রাজ্যপালের জবাবি ভাষণে তৃণমূল সরকারের আমলে রাজ্যে উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee) বলেন, “আমরা বলেছিলাম লক্ষ্মীর ভাণ্ডার চালু করব। আজ বাংলার ১ কোটি ৫৩ লক্ষ মা বোনেরা প্রতিমাসে আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন। তপশিলি জাতি ও উপজাতির মা-বোনেরা মাসে ১০০০ টাকা অন্যরা ৫০০ টাকা করে পাচ্ছেন। স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাংক অনেক জায়গায় সহযোগিতা না করলেও ১০ লক্ষ টাকা করে আমরা ঋণ দিচ্ছি। শুধু কলেজ না, ইউনিভার্সিটি, ডাক্তারি, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা সবকিছুর জন্যই ঋণ পাওয়া যাবে। বইপত্র, হোস্টেল ফি, কম্পিউটার কেনার খরচ দেওয়া হচ্ছে। এপর্যন্ত ২০ হাজার স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড অনুমোদন করা হয়েছে। আরও ২৫ হাজার প্রাথমিক অনুমোদন পেয়েছে।”
আরও পড়ুন: বিধানসভায় নন্দীগ্রামে গুলি-চালানোর অভিযোগ তুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী জানান, “ছাত্র-ছাত্রীদের সরকারের কাজে যুক্ত করার জন্য এবং অভিজ্ঞতা সঞ্চয়র জন্য আমরা নতুন একটা অভিনব প্রকল্প চালু করছি। যা স্টুডেন্ট ইন্টার্নশিপ প্রকল্প। প্রতিবছর রাজ্যের ৬ হাজার ছাত্রছাত্রী যারা ৬০% নম্বর পেয়েছেন এবং গত ১৫ বছর বা তার বেশি সময় ধরে রাজ্যে বাস করছেন তাদের এক বছরের জন্য ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত ইন্টার্ন হিসেবে নেওয়া হবে সরকারি কাজ শেখানোর জন্য। তাদের মাসে ৫০০০ টাকা করে দেওয়া হবে সঙ্গে সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। যারা ভালো কাজ করবে তাদের আরও অনেক সুযোগ থাকবে।” পাশাপাশি দুয়ারে সরকার প্রকল্প প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দুয়ারে সরকার প্রকল্প আগামী দিনে বিশ্বে অন্যতম সেরা প্রকল্প হতে চলেছে। দুয়ারে সরকারে আমরা বিপুল সাড়া পেয়েছি। পর্যায়ে ৩২,৮৩০ টি ক্যাম্পে ২কোটি ৭৫ লক্ষ মানুষ এসেছেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১ কোটি ৪৪৩৫ টি ক্যাম্পে তিন কোটি ৬৯ লক্ষ মানুষ এসেছেন। পাড়ায় সমাধানের দুটি পর্যায়ে ২৪০০০ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রায় আড়াই কোটি মানুষকে এই প্রকল্পের অধীনে পরিষেবা প্রদান করা হয়েছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুয়ারে সরকারের তৃতীয় পর্যায় শুরু হয়েছে। সেখানে ১৮ টি পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। সাতটি পরিষেবা নতুন যুক্ত করা হয়েছে। মোট পঁচিশটি পরিষেবা মিলছে দুয়ারের সরকার শিবির থেকে।” এছাড়াও রেশন ডিলারদের ধন্যবাদ ধন্যবাদ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২১ হাজার ডিলারকে নিয়ে দুয়ারে রেশন প্রকল্প রূপায়ণ করেছে সরকার। চালু করা হয়েছে পাবলিক গ্রিভান্স সেল। যেখানে ১১ লক্ষর বেশি অভিযোগের নিষ্পত্তি করা হয়েছে। মোট অভিযোগের ৯৯ শতাংশ নিষ্পত্তি হয়েছে।
এছাড়াও বিরোধীদের তোপ দেগে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য বাংলায় শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান। আমরা চাই শিল্পায়ন ওরা চায় দুর্বৃত্তায়ন। আমরা শান্তি চাই অশান্তি চায়। আমরা লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবো আর বিজেপিকে দেশ থেকে বিদায় করব। ডেউচা পাচামিতে এক লক্ষ চাকরি হবে। নতুন স্যান্ড মাইনিং আইটি পলিসি তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে আড়াই হাজার একর জমির ওপর জঙ্গল সুন্দরী কর্মনগরী নামে ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনশিপ তৈরি করা হচ্ছে। এখানে ৭২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে, তৈরি হবে দেড় লক্ষ কর্মসংস্থান। আর বিজেপি বাংলা থেকে বিদায় নেবে। তিনটে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফ্রেইট করিডর হচ্ছে। রাজারহাটে সিলিকন ভ্যালি হচ্ছে, এখানে ৫০ হাজার তথ্যপ্রযুক্তির ছেলে মেয়ে চাকরি পাবেন। অশোকনগরের তেলের ভাণ্ডার পাওয়া গেছে। সরকার হেল্প করছে। ওএনজিসি কাজ শুরু করেছে। তাজপুরে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। এক হাজার একরের বেশি জমির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে ১৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে। ওখানকার ছেলেমেয়েরা চাকরি পাবে।