কল্যাণী-শ্রীরামপুরে মুখ্যমন্ত্রীর তোপ: মোদির গ্যারান্টি ৪২০, ছুঁলেই ৪৪০ ভোল্ট

মোদি যাক, মানুষ থাক

Must read

প্রতিবেদন : মোদির গ্যারান্টি ফোর টোয়েন্টি। খবরদার ছোঁবেন না, ছুঁলেই ফোর ফর্টি ভোল্ট। মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনার কল্যাণী ও হুগলির শ্রীরামপুরের সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদি ও বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ শানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তিনি বলেন, ভোট এলে সিএএ-র কথা মনে পড়ে ওদের। কারণ মতুয়া ভোটগুলো চাই। এনআরসির কথা মনে পড়ে। কারণ মানুষকে ভয় দেখানো চাই, সম্প্রদায়ে-সম্প্রদায়ে ভাগ করা চাই। ভোট এলেই ইউনিফর্ম সিভিল কোডের কথা মনে পড়ে। এরা এসসি, এসটি, আদিবাসী, সংখ্যালঘু— সবার অধিকার কেড়ে নেবে। সুতরাং মোদি গ্যারান্টি ফোর টোয়েন্টি, মানে নো গ্যারান্টি। তাই মোদি যাক, মানুষ থাক।

নিঃশর্ত অধিকার দাও : এদিন কল্যাণীর সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বলেন, নিঃশর্ত অধিকার দাও, নাহলে বিদায় নাও। আমরা সবাই নাগরিক। একটা মতুয়ার গায়ে হাত আমি দিতে দেব না। আপনাদের যিনি প্রার্থী তিনি নাগরিকত্বের জন্য টাকাও তুলেছেন। তাঁকে আগে আবেদন করতে বলুন। করলেই বিদেশি। নিজের ধর্ম-বর্ণ, নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করতে যদি চান তাহলে মোদি যাক, মানুষ থাক। মোদি যাক, মনুষ্যত্ব থাক।

বদলে দিন, পাল্টে দিন : তৃণমূল সুপ্রিমো স্লোগান তোলেন, বদলে দিন, পাল্টে দিন। পরিবর্তন আনুন। মনে রাখবেন দেশের অবস্থা এমনই যে, প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপির অত্যাচারে হয় জেলে, না হয় গেলে। তফসিলি অত্যাচারে প্রথম বিজেপির রাজ্য উত্তরপ্রদেশ। গঙ্গায় জোয়ারে নোংরা ভেসে আসে, ভাটায় সব টেনে নিয়ে চলে যায়। সব পরিষ্কার হয়ে যায়। রাজনীতিটাও জোয়ার-ভাটার মতো। গঙ্গায় হাজারবার স্নান করলেই সব পবিত্র হয়ে যায় না। কোভিডের সময় পবিত্র গঙ্গায় মৃতদেহ ভাসিয়ে ওরা গঙ্গাকে দূষণ করেছিল।
গ্যারান্টি আসলে ফোর টোয়েন্টি : প্রধানমন্ত্রী গ্যার্যা ন্টি দিয়েছিলেন ১০ বছরে আগে। গ্যারান্টি দিয়ে কথা রাখা হলে নিশ্চয় তার মূল্য আছে। কিন্তু গ্যারান্টি দিয়ে তা যদি রক্ষা না হয়, শুধু বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজের প্রচার করা হয়, আমি তাকে গ্যারান্টি বলে মনে করি না। ১৫ লক্ষ টাকা করে কেউ পাননি, বছরে ২ কোটি চাকরি দেননি। মোদির গ্যারান্টি আসলে ফোর টোয়েন্টি। কাউকে চাকরি দেননি। উপরন্তু গভর্নমেন্ট সেক্টরগুলি বেসরকারি হাতে বিক্রি করে দিয়েছে।

চাকরিখেকো তিন পার্টি : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মানুষখেকো বাঘ শুনেছেন, চাকরিখেকো বাঘ শুনেছেন? যাকেই চাকরি দিচ্ছি, সিপিএম, বিজেপি এবং কংগ্রেস মিলে কোর্টে গিয়ে কেস করে সেই চাকরি আটকাচ্ছে। তবে দিল্লির কংগ্রেস নয়। এরা তিনটে দল মিলে চাকরিখেকো বাঘ হয়ে চাকরি খাচ্ছে। আমরা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে আছি। দেশের প্রধানমন্ত্রীও চোখের জল বার করে বলেছিলেন আমরাও শিক্ষকদের সঙ্গে আছি। কিন্তু আদালতে বিজেপি চাকরি যাওয়াকে সমর্থন করেছিল। আর সিপিএমের প্রকাশবাবু কলকাতার মেয়র থাকার সময় হাজার হাজার ভুয়ো বার্থ সার্টিফিকেট ইস্যু করেছিলেন। তাঁকে ছেড়ে দিয়েছিলাম। কারণ আমরা বদলা নয়, বদল চেয়েছিলাম। সুপ্রিম কোর্ট চাকরি যাওয়ার মামলায় স্থগিতাদেশের পর তাঁর গায়ে জ্বালা ধরেছে।

আরও পড়ুন- জামিন পেলেন জীবনকৃষ্ণ

সিপিএমের হার্মাদগুলোই বিজেপি : তৃণমূলনেত্রীর কথায়, সিপিএমের গায়ে কত জ্বালা! সিপিএমের হার্মাদগুলোই বিজেপি করছে এখন। সন্দেশখালিতে খবর নিন, সবক’টাই সিপিএম করত। কাজেই ওরা কারসাজিগুলো জানে। ওরা জানে না, মা-বোনেদের টাকা দেওয়াটা বড় কথা নয়, মা-বোনেদের অসম্মান করাটাই বড় কথা। তুমি মা-বোনেদের না জানিয়ে যা তা লিখে নিয়েছে। এর জন্য কার শাস্তি পাওয়া উচিত। শুধু মণ্ডল সভাপতিদের শাস্তি পেলে হবে? যারা মদত দিয়েছে, মদতদাতা, যারা বলেছে বোমা চাই, রিভলভার চাই, টাকা চাই, তাদেরও শাস্তি দিতে হবে।

গ্যারান্টিবাবুকে সন্দেশখালি তোপ : আর গ্যারান্টিবাবু সব টিভিকে বলেছিলেন সন্দেশখালি দেখাও। আর বললেন, পুরো দেশে সন্দেশখালির খবর হয়ে গিয়েছে। আমি বললাম, সত্যের জয় আছে, তোমার মিথ্যা বেরিয়ে যাবে। যখন আসল রিপোর্ট বেরিয়ে গেল, তখন বলছে দেখিও না, দেখালে আমাদের সব কারসাজি প্রকাশ পেয়ে যাবে।

৫০ ভাগ বেশি করেছি : মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা যা বলেছি, তা করেছি। ১০০ ভাগ বলেছি ১৫০ ভাগ করেছি। মানে ৫০ ভাগ বেশি করেছি। বিজেপি সরকার জল, গ্যাস, চাল কিছু দেয়নি। শুধু দেশের টাকা লুটেছে, একশো দিনের কাজের টাকা পকেটে ভরেছে, বিদেশে ডিফেন্সের ডিল করেছে, সেই টাকাটা দিয়ে শুধু বিজ্ঞাপন করেছে। পিএম কেয়ারের টাকা গেল কোথায়! আমাদের সিএসআর ফান্ডও চিফ মিনিস্টারদের বন্ধ। সরকারি অফিসারদের মাইনেও ওখানে বন্ধ করেছে। পেনশনও বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু বাংলা পেনশন দেয়। অন্য কোনও রাজ্য দেয় না।

হাওয়া বদল হচ্ছে : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ২০০৪ সালে ইন্ডিয়া ইজ রাইজিং স্লোগান তুলেছিলেন, আমরা সবাই ভেবেছিলাম অটলজিই আসছেন, কিন্তু আসেননি। সবাইকে নিয়ে মনমোহনজি প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। এবার জব্বর খবর আছে। এবার হাওয়া বদল হচ্ছে। ভাল করে জেনে রাখুন। কেউ ভয়ে বলতে পারছে না, চতুর্থ দফা হয়ে গিয়েছে। বিজেপি খুব জোর ১৯৫-২০০ আসন পাবে। ইন্ডিয়া জোট পাবে ২৯৫-৩১৫ আসন। এবার মোদির ৪০০ পার নয়, পগারপার। এত জুমলা করেছে, বাঙালিরা কেউ চায় না মোদি আসুক।

Latest article