প্রতিবেদনঃ ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে এভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, এতদিন ঝুলিয়ে রেখে শেষ মুহূর্তে শ্রী সিমেন্ট সরে দাঁড়িয়েছে। এটা খুব খারাপ মনোভাব। তবে সূত্রের খবর, শতাব্দিপ্রাচীন ক্লাবের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে শ্রী সিমেন্টকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যে কারণে ক্লাব কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা এই লেখার সময় পর্যন্ত জানায়নি লগ্নিকারী সংস্থা।
আরও পড়ুন : রুপো জিতে চমকে শৈলীর , খুশি অঞ্জু
সোমবার লগ্নিকারী সংস্থা ইমেল করে শতবর্ষ প্রাচীন ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদের কথা জানিয়ে দিয়েছে নবান্নকে। সূত্রের খবর, লগ্নিকারী সংস্থা চিঠিতে জানিয়েছে, চুক্তি সই নিয়ে দীর্ঘ টানাপোড়েনে হতাশ হয়েই তারা ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সঙ্গে আর কোনও সম্পর্ক রাখতে চায় না। তাই বিনামূল্যেই স্পোর্টিং রাইটস ছেড়ে দিচ্ছে। শ্রী সিমেন্টের কর্ণধার হরিমোহন বাঙ্গুরই ইমেল করে লাল-হলুদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সম্মান রক্ষার্থেই লগ্নিকারী সংস্থা কোনও ক্ষতিপূরণ না নিয়ে বিনামূল্যে স্পোর্টিং রাইটস বা ক্রীড়া স্বত্ব ছেড়ে দিচ্ছে বলে খবর। কিন্তু এতে শতাব্দিপ্রাচীন ক্লাবের আইএসএল খেলা নিয়ে সঙ্কট যে আরও বাড়ল, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
গত বছর ১ সেপ্টেম্বর নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই শ্রী সিমেন্টের প্রাথমিক চুক্তিপত্রে (টার্ম শিট) স্বাক্ষর করেছিল ইস্টবেঙ্গল ক্লাব। টার্ম শিটে চুক্তির ভিত্তিতেই আইএসএল খেলে লাল-হলুদ। এরপরই চূড়ান্ত চুক্তিপত্রে সই করা নিয়ে ক্লাব-লগ্নিকারী টানাপোড়েন চরমে ওঠে। যা চূড়ান্ত পরিণতি পেল এদিন শ্রী সিমেন্টের চিঠিতে। আর একেবারে শেষ মুহূর্তে এই চিঠি পাওয়ার পর লগ্নিকারী সংস্থার উপর প্রচণ্ড বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নবান্নে ইস্টবেঙ্গল সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি সিদ্ধান্ত নেওয়ার কে? আপনারা আমায় কেন জিজ্ঞাসা করছেন? আমি কি ইস্টবেঙ্গল ক্লাব চালাই? ক্লাব কর্তৃপক্ষ আছে, ওদের সঙ্গে কথা বলুন। যারা ছিল তারা আমাকে চিঠি দিয়ে জানাচ্ছে, তারা করতে পারবে না। একেবারে শেষ মুহূর্তে। এটা খুব খারাপ মনোভাব। আমরা চাই ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহমেডান আইএসএলে খেলুক। একটা ক্লাবকে এতদিন ধরে ঝুলিয়ে শেষ মুহূর্তে বলছে, কিছু করতে পারব না। এর জন্য আমরা প্রত্যেকে দুঃখিত। আমরা বিরক্তও। তাহলে আপনারা ছ’মাস, এক বছর ধরে কথা চালালেন কেন? এমনকি আমার সঙ্গেও দেখা করে বলে গিয়েছিল, ১৬ তারিখ জট খুলে দেবে। তারপর এমন কী ঘটল, পিছনে কী রহস্য! যে রহস্যের জন্য ওরা বলে দিচ্ছে, যে আমরা ছেড়ে চলে যাচ্ছি। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের যে একটা ঐতিহ্য আছে’’। এর পর মুখ্যমন্ত্রী যোগ করেন, ‘‘আমরা যে বিরক্ত সেটাও জানাব। ওদের বিপদে সকলের এগিয়ে আসা উচিত’’।
আরও পড়ুন : দেশজুড়ে খেলার বার্তা সায়নীর
প্রসঙ্গত, চুক্তি সই নিয়ে ক্লাব ও লগ্নিকারী সংস্থার মধ্যে দীর্ঘ ১০ মাস ধরে টানাপোড়েন চলছে। চুক্তির একাধিক শর্ত নিয়ে ক্লাবের আপত্তি থাকায় জট ক্রমশ বেড়েছে। মধ্যস্থতাকারীরা এগিয়ে এসে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাতেও সমাধানসূত্র অধরা। দিনের পর দিন কেটে যাচ্ছে, জট সেই একই জায়গায়। ৩১ অগাস্ট ফুটবলার সইয়ের জন্য ফিফা ট্রান্সফার উইন্ডো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ক্লাব লাইসেন্সিংয়েরও শেষ দিন অতিক্রান্ত। এই অবস্থায় চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিয়ে ফেলল লগ্নিকারী সংস্থা। তবে নবান্নে চিঠি পাঠালেও সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা ক্লাব কর্তৃপক্ষকে এখনও জানায়নি শ্রী সিমেন্ট।