প্রতিবেদন : লক্ষ্য শিল্পোন্নয়ন। বিনিয়োগে জমিজট কাটিয়ে দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে হবে। হাওড়ার শরৎ সদনে প্রশাসনিক বৈঠক থেকে এই নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিপুল ভোটে জিতে তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই রাজ্যে শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির দিকে জোর দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই লক্ষ্যেই বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক বৈঠক থেকে বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, আগামী দু’বছরে প্রায় ৮০০-র বেশি সংস্থা হাওড়া জেলায় তাদের শাখা খুলবে। ১০ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। ১ লক্ষ ১৬ হাজারেরও বেশি কর্মসংস্থান হবে। এদিন ভূমি এবং ভূমি সংস্কার দফতরের কাজে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, ‘‘অনেকে ইচ্ছা করে দেরি করাচ্ছে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন করেন, আগে ইউনাইটেড ক্লিয়ারেন্স সিস্টেম ছিল। সেটা এখন বন্ধ আছে কেন? কার নির্দেশে বন্ধ করা হয়েছে? দু’বছর ধরে কাজে দেরি করছে। তা হলে শিল্প হবে কী করে? উত্তরে সংশ্লিষ্ট আধিকারিক তাঁকে জানান, করোনা পরিস্থিতিতে কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকার পর ফের শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন ১৪ ডিসেম্বর সিনার্জি রয়েছে। আগে জমি সংক্রান্ত সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে হবে। হাওড়া শিল্পাঞ্চলে নতুন একটি ফায়ার স্টেশনও তৈরি হবে। আগামী ৫ বছরে একাধিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরি হবে এই জেলায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, হাওড়ায় শিল্প সম্ভাবনা যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। প্রশাসনের সব দফতরের মধ্যে সমন্বয় করে দ্রুত শিল্প স্থাপনের কাজ শুরু করতে হবে।
পাশাপাশি হাওড়ায় আরও অনেক কিছু করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি
খেল সিটি
ডুমুরজলা স্পোর্টস কমপ্লেক্সকে ঘিরে গড়ে উঠবে অভিনব ওই খেল সিটি। যেখানে থাকছে একটি আধুনিকমানের স্টেডিয়াম। যেটা তৈরি করছে সিএবি। এরই সঙ্গে পুরো এলাকাটিকে ঘিরে গড়ে উঠবে ইন্ডোর ও আউটডোর গেমসের উপযোগী পরিকাঠামো। কেএমডিএর উদ্যোগে তৈরি হবে ওই খেল সিটি। এদিন শরৎ সদনে প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে এই খেল সিটি তৈরির কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, শিবপুরের বিধায়ক ও মন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি রয়েছেন। উনি খুব ভাল কাজ করছেন। পুরো বিষয়টি দেখে নেবেন মনোজ। প্রস্তাবিত এই খেল সিটিতে ইন্ডোর স্টেডিয়ামের পাশাপাশি প্লেয়ার্স পার্কিং, অ্যাম্বুল্যান্স পার্কিং, দমকল পার্কিং, ক্রিকেট মাঠ, ফুটবল মাঠ, হকি মাঠ, টেনিস, ভলিবল ও বাস্কেটবল মাঠ, সুইমিং কমপ্লেক্স, ১২তলা পার্কিং লট, ৪০তলা স্পোর্টস সেণ্টার, জলাশয় ও পর্যাপ্ত সবুজায়নেরও ব্যবস্থা থাকবে। থাকবে হেলিপ্যাড, শপিং কমপ্লেক্স এবং আবাসনও। আন্তর্জাতিক মানের এই খেল সিটি তৈরির কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করেছে কেএমডিএ। চূড়ান্ত নকশা তৈরি করে বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে দরপত্র চাওয়া হচ্ছে। এরপরই কেএমডিএ কাজ শুরু করে দেবে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘‘হাওড়ার এই খেল সিটি আন্তর্জাতিক মানের হবে। এখানে ইন্ডোর ও আউটডোর গেমসের সবরকম ব্যবস্থা থাকবে। এরই সঙ্গে এখানে সিএবি একটি স্টেডিয়ামও তৈরি করছে। ফলে খেলাধুলার ক্ষেত্রেও হাওড়া অন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে যাবে।’’
আরও পড়ুন :হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচন প্যানেল প্রকাশ তৃণমূল লিগ্যাল সেলের
গোলাপ, ভিটামিনযুক্ত ফলের চাষে গুরুত্ব
হাওড়ায় গোলাপ চাষিদের আরও ভালভাবে ফুলের চাষ করার জন্য উদ্যানপালন দফতরকে আরও উদ্যোগী হতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ব্যাপারে কীভাবে গোলাপ ফুলের উৎপাদন আরও বাড়ানো যেতে পারে তা দেখার জন্য নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি আধুনিক উপায়ে পান চাষ করার কথাও বলেন তিনি। সেই সঙ্গে ভিটামিন সমৃদ্ধ ফলের চাষ, যেমন ব্লু-বেরি, স্ট্র-বেরি, ড্রাগন ফল, অ্যাভোকাডো ফলের চাষ আরও কীভাবে বাড়ানো যেতে পারে তারও নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, যেসব অঞ্চলে ভিটামিন সমৃদ্ধ এই ফলের চাষ বেশি তা দেখে সেখানে এই ফল চাষ করতে হবে। এই ব্যাপারে উদ্যানপালন দফতরের আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করারও নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
শাটল কক নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী
বৃহস্পতিবার হাওড়ার শরৎ সদনের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে একাধিক নতুন শিল্প ও কর্মসংস্থানের দিশা দেখালেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলার উলুবেড়িয়ায় দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে শাটল কক ক্লাস্টার। তার উন্নয়নের জন্য এবার কাঁচামাল হিসেবে হাঁসের পালক সংগ্রহ ও সরবরাহের পরামর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই কক তৈরির অন্যতম উপকরণ হাঁসের পালক। চিন বা ভিন রাজ্য থেকে যা আনতে হয়। এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ, ‘‘তোমরা তো এখন হাঁসের পোলট্রি করছ। গ্রামেগঞ্জেও হাঁস পালন করা হয়। সেল্ফ হেল্প গ্রুপকে বলো হাঁসের পালক সংগ্রহ করতে। তাহলে কিছু লোকেরও কর্মসংস্থানও হবে। শাটল ককের কারিগরদেরও কাঁচামাল পেতে সমস্যা মিটবে। এভাবেই ওই এলাকার শিল্পের উন্নয়ন হবে।”