নারকেল দিবস

যে ফলের আগা থেকে গোড়া সবটাই সমান উপকারী। সেই ফল হল নারকেল। নারকেল বা ডাবের জলকে প্রাকৃতিক স্যালাইন বলে।। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের পৃথিবী জুড়ে পালিত হয় বিশ্ব নারকেল দিবস। কেন পালিত হয় এই দিনটি? নারকেলের কেন এত গুরুত্ব? উপকারিতাই বা কী? লিখলেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

পৃথিবীতে ফলের তো অভাব নেই তাহলে হঠাৎ বিশ্ব নারকেল দিবস পালিত হয় কেন? তাহলে একটু জেনে নেওয়া যাক বিষয়টি সম্পর্কে। গোটা বিশ্বে নারকেল উৎপাদনে ভারত রয়েছে তৃতীয় স্থানে। প্রথম স্থানে অর্থাৎ বিশ্বে সর্বাধিক নারকেল উৎপাদনকারী দেশ হল ইন্দোনেশিয়া এবং দ্বিতীয় ফিলিপিনস। অর্থাৎ সারা বিশ্বের মোট চাহিদার ৭৫% নারকেল এই তিনটি দেশ থেকেই সরবরাহ হয়। কাজেই গ্রীষ্মপ্রধান দেশ এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের একটা বড় অংশ জুড়ে ফলে এই ফলটি। নারকেল শুধু খাদ্য হিসেবেই নয় এর উপর নির্ভর করে দেশগুলো আর্থিক উন্নতিও। নারকেলের খাদ্যগুণের কোনও তুলনা নেই। এর খোলা থেকে শাঁস, জল সবটাই কিন্তু মানুষের কাজে আসে। এর কোনও কিছু ফেলে দেবার নয়। নারকেলের বাণিজ্যিক গুরুত্বও অপরিসীম। সেই কারণে নারকেলের গুরুত্ব, উপকারিতা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে বিশ্ব নারকেল দিবসের সূচনা।

আরও পড়ুন-ড্র দিয়ে শুরু মানোলো-যুগ

দিনটির ইতিহাস
এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলেই মূলত এই দিনটি পালিত হয়। এশিয়ান-প্যাসিফিক কোকোনাট কমিউনিটি বা এপিসিসি প্রথম ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই দিনটিকে পালন শুরু করে। এই সংস্থার প্রধান কার্যালয় রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তাতে। এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাও হয়েছে এই মাসেই।
১৮টি নারকেল উৎপাদনকারী দেশ এই সংস্থার সদস্য, তার মধ্যে ভারতবর্ষও রয়েছে। নারকেল শিল্পের উন্নতি, এর দ্বারা দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং এতে বিনিয়োগ করার জন্য মানুষকে উৎসাহিত করাই এই সংস্থার কাজ। ভারতে প্রতি বছর এই দিনটি পালন করা হয় কোকোনাট ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের তত্ত্বাবধানে। এই সংস্থাটি মূলত সেইসব দেশকে সাহায্য করে এবং নজর রাখে যেখানে নারকেল উৎপাদন করা হয়।

নারকেলের আদি-অন্ত
পাম পরিবারভুক্ত সদস্য হল নারকেল। কোকোনাট শব্দটিকে প্রাচীনকালে কোকোয়ানাট বলা হত। যে শব্দটি এসছে পর্তুগিজ শব্দ ‘কোকো’ থেকে যার অর্থ হল মাথা বা খুলি। কথায় বলে নারকেলের চোখ আছে! সে নাকি দেখতে পায় তাই দুম করে কারও মাথায় পড়ে না। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘কোকাস নুসিফেরা’।
খ্রিস্ট-পূর্ব প্রথম শতাব্দীর আগে ভারতীয় উপমহাদেশে এই ফলের অস্তিত্ব ছিল। ঐতিহাসিক সূত্র অনুযায়ী ৫৫৫ সালের দিকে বিভিন্ন বিদেশি ঐতিহাসিকদের লেখায় নারকেলকে ভারতের মহান বাদাম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নারকেলের আরেকটি উল্লেখ মেলে আরব্য রজনীতে যেখানে সিন্দাবাদ যাত্রার সময় একটি নারকেল কিনেছিলেন এবং বিক্রি করেছিলেন।
একই অঙ্গে অনেক রূপ
নারকেল অন্য ফলের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা কারণ এর এন্ডোস্পার্মে প্রচুর পরিমাণে তরল থাকে যাকে আমরা নারকেলের জল বলি। নারকেলের ভিতরের অংশ শুধু সুস্বাদু খাদ্য তৈরিতেই নয় এর শাঁস ও দুধ থেকে তেল তৈরি হয়। শক্ত খোলা থেকে কয়লা, কোকোপিট তৈরি হয়। ছোবড়া জ্বালানি এবং হস্তশিল্পের কাজে ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি নারকেল থেকে সাবান, প্রসাধনীও তৈরি হয়। নারকেলে মাঙ্গলিক এবং ধার্মিক গুরুত্বও রয়েছে। যে কোনও পুজো-অর্চনায় নারকেল বিভিন্নভাবে কাজে আসে।
পুষ্টিগুণে নারকেল
একটা ১০০ গ্রাম নারকেলে রয়েছে ৩৫৪ কিলো ক্যালরি। এছাড়া এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফাইবার, প্রোটিন, ফ্যাট, থায়ামিন, রাইবোফ্লোভিন, নায়াসিন, ভিটামন বি১, বি২ , বি৩, বি৫, বি৬, বি১২, ফোলেট, ভিটামিন ই-সি-কে। রয়েছে খনিজ পদার্থ ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, কপার, আয়রন, পটাশিয়াম, ফসফরাস, জিংক এবং প্রচুর পরিমাণে জল।

আরও পড়ুন-নাবালিকার ধর্ষকের দালালের ভূমিকায় যোগীরাজ্যের পুলিশ

উপকারিতা
নারকেলের শাঁস
শুধু পিঠে, পুলি, নাড়ুতেই সীমাবদ্ধ নয় এই ফলটি। এর নানা গুণ। এর শাঁসে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান।
ফাইবারের উৎসের খনি বলা চলে নারকেলের শাঁসকে। ১০ গ্রাম শাঁসে গমের চেয়েও বেশি ফাইবার থাকে। যে ফাইবার হজমশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে।
নারকেলের আধ কাপ শাঁসে ২৮৫ গ্রাম পটাশিয়াম থাকে। এই পটাশিয়াম উচ্চরক্তচাপ কমায়। এছাড়া পটাশিয়াম দেহে জল ও সোডিয়ামের ভারসাম্য বজায় রাখে। তাই ব্যায়াম করার আগে ও পরে এটা খাওয়া খুব ভাল।
এতে রয়িছে অ্যামাইনো অ্যাসিড। এক ধরনের প্রোটিন যা লিভার সমস্যা প্রতিরোধ করে। ত্বকে প্রদাহ কমায় এবং দাঁতের গঠন মজবুত করে।
আয়রনের অন্যতম একটি উৎস নারকেলের শাঁস। প্রতিদিন আধ কাপ শাঁস খেলে আপনার দেহের আয়রনের ঘাটতি পূরণ হবে। এটা দেহে অক্সিজেনের সরবরাহ ঠিক রাখে। শরীরে শক্তি জোগায়। রক্তাল্পতা রোধ করে।
নারকেলের শাঁসে থাকা সামান্য ফ্যাট বা চর্বি দেহে ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখে। ফলে ডায়াবেটিসের কারণে হওয়া শারীরিক ক্ষতি রোধ করে।
অতিরিক্ত ওজন কমাতে সহায়তা করে নারকেলের শাঁস। খুব অল্প ক্যালরিতেই বিপাক বৃদ্ধি করে অল্পক্ষণের মধ্যেই শরীরে শক্তি জোগায়। শাঁস সহজে খিদে হতে দেয় না। ফলে শরীরের ওজন কমতেও সাহায্য করে।

আরও পড়ুন-আরজি করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর খরচ, নির্লজ্জ রাজনীতি মোদি সরকারের

নারকেলের জল
যাঁরা নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাঁদের অবশ্যই প্রি এবং পোস্ট ওয়র্ক আউট ড্রিঙ্কস হিসেবে নারকেলের জল রাখা ভাল। এই জল শরীরে ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্সকে ঠিক রাখে। পটাশিয়ামের মাত্রা ঠিক রাখে। মাংসপেশির ক্ষয় রোধ করে এবং প্রচুর এনার্জি দেয়।
নারকেলের জল শরীরকে ক্ষতিকর ফ্রি রাডিকলস থেকে রক্ষা করে। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে সেই সঙ্গে প্রদাহ নাশ করে। লিভারকে সুরক্ষিত রাখে।
শুগার ফ্রি পানীয়র খুব ভাল বিকল্প হল নারকেলের জল। রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে নারকেলের জল।
কিডনি স্টোন প্রতিরোধ করে নারকেলের জল। সাধারণত অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম, অক্সালেট এবং আরও বেশ কিছু উপাদান জমে কিডনির মধ্যে তা পাথরের আকার ধারণ করে। নারকেলের জল এগুলো জমতে দেয় না ফলে কিডনি-স্টোন প্রতিরোধ হয়।
শরীরকে সম্পূর্ণ টক্সিন-মুক্ত করতে এবং হাইড্রেট রাখতে অর্থাৎ জলের ঘাটতি পূরণ করতে এর জুড়ি মেলা ভার।
এ-ছাড়া ত্বকে বলিরেখা, মেচেতা ইত্যাদি সমস্যারোধে নারকেল জল এবং শাঁস খাওয়া এবং মুখে মাখা দুই-ই খুব উপকারী।

Latest article