বর্ণের রূপভেদ

ফর্সা, গোলাপি ফর্সা, হলদেটে ফর্সা, কালো, শ্যামবর্ণ, তামাটে— আমরা প্রায়শই এই কথাগুলি শুনে থাকি, এগুলি আসলে চামড়ার রং। সারা পৃথিবী জুড়ে এরকম হাজারো বর্ণের হদিশ মেলে, যার সব ক’টার হয়তো নামও দিয়ে উঠতে পারা যায় না। এই বর্ণভেদের কান্ডারি হল জিন আর তার দুই সঙ্গীসাথী। সেই দু’জন কারা? আজ তারই ব্যাখ্যায় প্রিয়াঙ্কা চক্রবর্তী

Must read

বৈচিত্র্যময় এই পৃথিবীতে নানা ভাষাভাষী ও নানান বর্ণের মানুষের বসবাস। এখানে বর্ণের আক্ষরিক অর্থ কিন্তু দেহের বর্ণ বা আরও স্পষ্ট করে বললে বলা যায় ত্বকের বর্ণ। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হল, একমাত্র মনুষ্য প্রজাতিতেই এই বর্ণের রূপভেদ একটা প্রতীয়মান যা আর কোনও প্রজাতিতে এভাবে দেখা যায় না। যদিও এর একটি সোজসুজি হিসাব আমাদের ইতিমধ্যেই জানা, জেনেটিক্স; জিন হল এমন একটি বস্তু যা মানুষের এই ত্বকের বর্ণের বিভিন্নতার অন্যতম একটি কারণ। কিন্তু শুধুমাত্র জিনই এর একমাত্র কারণ, তা জোর দিয়ে বলা যায় না। মানুষের ত্বকের বর্ণ নির্ভর করে তার ভৌগোলিক অবস্থানের ওপরও।

আরও পড়ুন-ঝাড়গ্রামে আবারও হাতির তাণ্ডব, সতর্ক বন দফতর

বর্ণের দান সূর্যের
সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মির (UVR) ভৌগোলিক বণ্টন এবং সারা বিশ্বের মানুষের ত্বকের বর্ণের মধ্যে একটি সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। যেসব অঞ্চলে অতিবেগুনি রশ্মির পরিমাণ বেশি, সাধারণত বিষুবরেখার কাছাকাছি স্থানে, সেখানে গাঢ় বর্ণের বা কালো বর্ণের মানুষের জনসংখ্যা বেশি থাকে। যে অঞ্চলগুলি গ্রীষ্মমণ্ডল থেকে দূরে এবং মেরুগুলির কাছাকাছি যেখানে অতিবেগুনি রশ্মির তীব্রতা কম থাকে, সেখানে তথাকথিত ফর্সা মানুষের জনসংখ্যার আধিক্য দেখা যায়। আসলে আধুনিক হোমো স্যাপিয়েন্সের বিবর্তনের সময় সব মানুষই ছিল কালো চামড়ার। কিছু গবেষকদের মতে বিগত ৫০,০০০ বছরে কালো-চামড়ার জনসংখ্যা ধীরে ধীরে সাদা-চামড়াতে পরিবর্তিত হয়েছে আর এর পাশাপাশি তদ্বিপরীতভাবে তারা বিভিন্ন অঞ্চলেও স্থানান্তরিত হয়েছে, যেখানে অতিবেগুনি রশ্মির তীব্রতাও ভিন্ন। বর্ণের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এই ধরনের বড়োসড়ো পরিবর্তনগুলি ১০০টি প্রজন্মের মধ্যেই (২৫০০ বছর) ঘটে থাকতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। এমনকী সূর্যের রশ্মির সংস্পর্শে আসার কারণে ঘটা ট্যানিংয়ের ফলেও ত্বকের স্বাভাবিক বর্ণ কালো হয়ে যেতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব হল এই যে ত্বকের বর্ণ অতিবেগুনি রশ্মির বিরুদ্ধে ত্বককে আংশিক সুরক্ষা প্রদানের জন্য, তীব্র সূর্যালোকের বিকিরণে অভিযোজিত হয় যা ত্বকের কোষগুলির DNA-তে মিউটেশন ঘটায়।
কিছু কিছু জনজাতির ক্ষেত্রে দেখা যায়, মহিলারা পুরুষদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে ফর্সা। আবার, অন্যান্য জনসংখ্যার মধ্যে, বিশেষ করে ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত জনজাতিতে, পুরুষেরা মহিলাদের তুলনায় ফর্সা হয়। আসলে নারীর যৌন হরমোন ইস্ট্রোজেন, ফর্সা ত্বককে কালো করে, এর কারণে ইউরোপীয় মহিলাদের ইউরোপীয় পুরুষদের তুলনায় গায়ের রং কালো হয়। কালো চামড়ার জনসংখ্যার মহিলারা পুরুষদের তুলনায় অতি সহজেই হালকা বর্ণের ত্বকে বিবর্তিত হতে পারে বলেই তাদের দেহ গর্ভাবস্থায় আরও ভিটামিন ডি শোষণ করতে পারে, যা ক্যালসিয়াম শোষণকে উন্নততর করে তোলে।
বর্ণের এই পরিবর্তনের কালবিবরণী
প্রাইমেট থেকে মানুষ হয়ে ওঠার একেবারে প্রথম পর্যায়ের নথি ঘাঁটলে দেখা যায়, উষ্ণ, উন্মুক্ত পরিবেশে কাজকর্ম করার জন্য এবং শিকারের পিছনে দীর্ঘক্ষণ দৌড়ের জন্য হোমো স্যাপিয়েন্সদের দেহের অতিরিক্ত লোম যা তারা তাদের পূর্বপুরুষের থেকে পেয়ে এসেছিল প্রয়োজনীয় তাপ ধরে রাখার জন্য, এবার ঘাম ঝরিয়ে দেহের তাপমাত্রা বজায় রাখতে তা খোয়াতে হল। প্রাইমেট হিসেবে মানুষের এই থার্মোরেগুলেশনের জন্য অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মতো কোনও ক্যারোটিড রেটি (মস্তিষ্কে রক্তকে প্রিকুলিং করে, এটি শরীরের তাপমাত্রা পরিবর্তনের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি অঙ্গ) না থাকায় তারা তাদের অতিরিক্ত লোম ছেঁটে ফেলতে বাধ্য হয়। বলা যায় সাধারণত হোমো ইরেক্টাসের সময়কালেই থার্মোরেগুলেশনের জন্য এর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, আর তাই-ই বোধ হয় প্রায় ২০ লক্ষ বছর আগে হোমো ইরেক্টাসের উৎপত্তির সঙ্গে তাদের এই লোমহীনতাকে যুক্ত করা হয়।


যেহেতু হোমিনিডরা ১২ থেকে ৪০ লক্ষ বছর আগে, ধীরে ধীরে তাদের লোম ছেঁটে ফেলেছিল, যাতে ঘাম ঝরানোর মাধ্যমে তারা তাদের দেহ ঠান্ডা করতে পারে, লোম খসানোর ফলে তাদের নগ্ন ত্বক তখনই প্রথম সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে, প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফলে কালো-চামড়ার মানুষের আধিক্য ছিল বেশি, কারণ কালো বর্ণের ত্বক সূর্যালোকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ছিল সুরক্ষিত। বিজ্ঞানীদের মতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ত্বকের প্রতিফলন (ত্বক যে পরিমাণ সূর্যালোক প্রতিফলিত করে) এবং সেই নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় প্রকৃত অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণ অত্যন্ত গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত যা উপরিউক্ত ধারণাটিকেও সমর্থন করে। এর পাশাপাশি জেনেটিক প্রমাণও ওই একই ধারণাকে সমর্থন করে যা প্রমাণ করে যে, প্রায় ১২ লক্ষ বছর আগে একটি শক্তিশালী বিবর্তনীয় চাপ ‘গণ হোমো’র প্রাথমিক সদস্যদের ত্বকের কালো রঙের বিকাশে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল। তাদের এই লোমহীনতা ত্বকের নিচের ডার্মিস স্তরে সঞ্চালিত ফোলেটকে অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণের মাধ্যমে বিশ্লিষ্ট করেছিল তাই এই ফোলিক অ্যাসিডের মাত্রা সূর্যালোকের প্রভাবে কালো চামড়ার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ এবং তা সূর্যালোকের অতিরিক্ত সংস্পর্শের কারণে ঘটা ফোলেট হ্রাস থেকেও রক্ষা করার অন্যতম কারক। ২০১৭ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, যে, কালো এবং ফর্সা উভয় পিগমেন্টেশনের অ্যালিলই আধুনিক মানুষের উৎপত্তির অনেক আগেই উদ্ভূত হয়েছিল, যদিও এর আদি সংস্করণ অনেক ক্ষেত্রে ফর্সা ত্বকের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল বটে, আসলে মানুষের প্রথম দিকের আদিম পূর্বপুরুষদের, সম্ভবত শিম্পাঞ্জি এবং অন্যান্য বড় বনমানুষের ত্বক ছিল ফ্যাকাসে-রঞ্জকহীন এবং গাঢ় কালো চুলে ঢাকা।
বিবর্তনের হাত ধরে পাওয়া লোমহীন ত্বক, প্রচুর ঘর্মগ্রন্থি এবং মেলানিন সমৃদ্ধ ত্বক অতিরিক্ত গরমের কারণে কোনওরকম মস্তিষ্কের ক্ষতি ছাড়াই প্রাথমিক মানুষদের, সূর্যালোকে দীর্ঘ সময় ধরে হাঁটতে, দৌড়াতে এবং খাবারের জন্য দীর্ঘক্ষণ চারণে সুবিধা দিত, যা তাদের কাছে অন্যান্য প্রজাতির তুলনায় ছিল বিবর্তনে পাওয়া এক চরম আশীর্বাদ। আসলে অতীতের জনসংখ্যার আকার এবং জনসংখ্যার বটলনেক তত্ত্বের অনুপস্থিতির অনুমানকে ব্যবহার করে MC1R অ্যালিলগুলির ওপর করা গবেষণা প্রমাণ করে যে আধুনিক আফ্রিকানদের মধ্যে কালো ত্বকের অ্যালিল অন্তত ১২ লক্ষ বছর আগেই উদ্ভূত হয়েছিল। এটি ছিল শারীরবৃত্তীয়ভাবে আধুনিক মানুষের, উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত জিনোটাইপ যা মানুষের জিনগত পরিবর্তনের বা জেনেটিক ভ্যারিয়েশনের অন্যতম হাতিয়ার ছিল বলা চলে। প্রায় ১০০,০০০-৭০,০০০ বছর আগে, কিছু তথাকথিত আধুনিক মানুষ (হোমো স্যাপিয়েন্স) গ্রীষ্মমণ্ডল থেকে উত্তরে স্থানান্তরিত হতে শুরু করেছিল যেখানে তারা তুলনামূলক কম তীব্র সূর্যালোকের সংস্পর্শে এসেছিল, ফলে মানুষের ত্বকে ফোলেটের কম ভাঙন ফর্সা চামড়ার জন্য দায়ী জিনগুলির ওপর বিবর্তনীয় চাপ কমিয়ে দিয়েছিল। এ ছাড়াও, ফর্সা ত্বক কালো ত্বকের চেয়ে বেশি ভিটামিন ডি (কোলেক্যালসিফেরল) তৈরি করতে সক্ষম হওয়ায় ভিটামিন ডি-এর সীমিত উৎসে তা কম সূর্যালোকে এই ভিটামিন সংশ্লেষে ছিল উপযুক্ত।
এতক্ষণ ধরে এত আলোচনা পর্যলোচনার মাধ্যমে পাওয়া তথ্যাদিকে এক সুতোয় গাঁথলে মানুষের ত্বকের রঙের বিবর্তনের জন্য প্রধান যে যে অনুমানগুলি প্রস্তাব করা হয় তা হল— এক, লোমহীনতার উৎপত্তি এবং UV-বিকিরণ থেকে ১০০,০০০ বছরেরও কম আগে পর্যন্ত, প্রাচীন হোমো স্যাপিয়েন্স-সহ আদিম মানুষ ছিল কালো চামড়ার। দুই, কিছু হোমো স্যাপিয়েন্স জনসংখ্যা স্থানান্তরিত হতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে, ত্বককে কালো রাখার যে বিবর্তনীয় সীমাবদ্ধতা তা হ্রাস পেতে থাকে। তিন, কিছু সময়ে, কিছু উত্তরাঞ্চলীয় জনগোষ্ঠী সূর্যালোক থেকে ভিটামিন ডি-এর বর্ধিত উত্পাদনের কারণে ফর্সা ত্বকের জন্য ইতিবাচক নির্বাচনের অভিজ্ঞতা লাভ করে এবং এই জনসংখ্যা থেকে কালো ত্বকের জিনগুলি অদৃশ্য হয়ে যায়। আর চার, পরবর্তীকালে বিভিন্ন পরিবেশে স্থানান্তর এবং জনসংখ্যার মধ্যে মিশ্রণের ফলে আমরা আজ বিভিন্ন বর্ণের মানুষ দেখতে পাচ্ছি।

আরও পড়ুন-বৈঠকে অনুব্রত-প্রশাসন কাজ শুরু হল দেউচায়

পূর্ব এশীয় এবং পশ্চিম ইউরোপীয়দের মধ্যে ত্বকের বর্ণ আংশিকভাবে ভিন্ন হলেও, ফর্সা বর্ণের জন্য দায়ী জেনেটিক মিউটেশনগুলি থেকে পাওয়া তথ্যাদি। এটি প্রমাণ করে যে এই দুটি গ্রুপ উত্তর অক্ষাংশে বসতি স্থাপনের পর একই ধরনের নির্বাচনী চাপ অনুভব করেছিল। এই তত্ত্বটি যদিও SLC24A5 জিনের একটি গবেষণার দ্বারা আংশিকভাবে সমর্থিত, যেখানে দেখা গেছে যে ইউরোপে ফর্সা ত্বকের সঙ্গে যুক্ত অ্যালিল নির্ধারিত, তবে তাদের উৎপত্তি হয়েছি কিন্তু সেই কালো চামড়া থেকেই। প্যালিওলিথিক ক্রো-ম্যাগনন গোষ্ঠী, সেইসাথে প্রারম্ভিক হলোসিন ওয়েস্টার্ন এবং সেন্ট্রাল ইউরোপীয় শিকারী-সংগ্রাহকদের DNA বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে তাদের চামড়া কালো ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। আধুনিক ইউরোপীয়দের মধ্যে সবচেয়ে বিশিষ্ট লাইট-স্কিন টোন জিন বৈকল্পিকগুলি পাওয়া যায় যা আনাতোলিয়ান নিওলিথিক কৃষকদের দ্বারা প্রবর্তিত হয় যারা প্রায় ৯০০০ বছর আগে ইউরোপে স্থানান্তরিত হয়েছিল বলে জানা যায়। নিনা জাবলনস্কির গবেষণা থেকে জানা যায়, মানুষের জনসংখ্যার জন্য একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় সর্বোত্তম ত্বকের রঞ্জকতা অর্জনের জন্য প্রায় ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ বছরের আনুমানিক সময় যথেষ্ট কিন্তু আদর্শ ত্বকের রঙের বিকাশ দ্রুতহারে ঘটতে বিবর্তনীয় চাপকে শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন।


জনসংখ্যা এবং বর্ণের সংমিশ্রণ অধ্যয়ন করলে মানব ত্বকের রঙের বিবর্তনের জন্য একটি ত্রিমুখী মডেল আমাদের সামনে উঠে আসে, আফ্রিকার আদি হোমো স্যাপিয়েন্সের কালো ত্বকের বিবর্তন এবং আধুনিক মানুষ আফ্রিকার বাইরে প্রসারিত হওয়ার পরেই ফর্সা ত্বকের বিকাশ ঘটে। বেশিরভাগ অংশে, পশ্চিম ও পূর্ব ইউরেশীয় জনগোষ্ঠীর ফর্সা ত্বকের বিবর্তন বিভিন্ন জেনেটিক পথ অনুসরণ করার ফলেই ঘটেছে; যাইহোক, হালকা ত্বকের সঙ্গে যুক্ত কিছু মিউটেশনের আনুমানিক উৎপত্তি তারিখ মানুষের আফ্রিকার বাইরে ছড়িয়ে পড়ার পরে কিন্তু দুটি বংশে বিভাজনের আগেই ঘটেছিল।
২০১৭ সালে পাওয়া ক্রাওফর্ড-এর তত্ত্ব অনুযায়ী আফ্রিকান জনসংখ্যার মধ্যে কালো এবং ফর্সা পিগমেন্টেশনের সঙ্গে যুক্ত বেশিরভাগ জেনেটিক বৈচিত্র্য ৩০০,০০০ বছর আগে উদ্ভূত হয়েছিল বলে মনে হয়। আফ্রিকান, দক্ষিণ এশীয় এবং অস্ট্রালো-মেলানেশিয়ান জনসংখ্যাও কালো ত্বকের পিগমেন্টেশনের জন্য উদ্ভূত অ্যালিল বহন করে যা ইউরোপীয় বা পূর্ব এশিয়ানদের মধ্যে পাওয়া যায় না।
আবার ২০২১ সালে হুয়াং-এর মতে ‘ইউরোপীয় এবং পূর্ব এশীয় পূর্বপুরুষের জনসংখ্যার মধ্যে তাদের একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে ফর্সা ত্বকের বর্ণের ওপর নির্বাচনী চাপ’-এর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেছে, অর্থাৎ এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক নির্বাচন কেবলমাত্র ফর্সাদেরই নির্বাচন করেছিল কালোদের নয়। আফ্রিকানদের মধ্যে কালো ত্বকের রং যেমন দিকনির্দেশক নির্বাচনের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে, সেইসঙ্গে ইউরেশিয়ানদের মধ্যেও ফর্সা ত্বক একইভাবে দিকনির্দেশক নির্বাচনের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে একই সাথে।
কালো ভাল
আমরা সাধারণ মানুষরা কেবল ফর্সা চকচকে ত্বককে সুন্দর বলে ধরে নিই। প্রায় আমাদের সকলের কাছেই সুন্দরের অন্যতম ব্যাখ্যা হল— ফর্সা মোলায়েম ত্বক। কিন্তু প্রকৃতি বলে কালো ত্বক বেশি ভাল। কারণ, ২০১০ সালে পাওয়া ইলিয়াস প্রদত্ত তথ্য বলে, কালো ত্বকে দেহকে প্রতিরক্ষা করে, এটি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, ক্যানসার প্রতিরোধী। গবেষকরা অনুমান করেন যে মানবদেহের লোম ঝরে যাওয়ার পর স্ট্র্যাটাম কর্নিয়ামে সবচেয়ে বেশি জেনেটিক পরিবর্তন হয়েছে। প্রাকৃতিক নির্বাচনও কালো ত্বককে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে এবং এই সংক্রান্ত মিউটেশনকেও সমর্থন করেছে একই কারণে, কালো ত্বকের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা ফর্সা ত্বকের তুলনায় বেশি।
শাস্ত্রীয় পণ্ডিত ফ্রাঙ্ক স্নোডেনের মতে, প্রাচীন মিশর, গ্রিস বা রোমে ত্বকের রং সামাজিক অবস্থান নির্ধারণ করত না। এই প্রাচীন সভ্যতাগুলি কোনও ব্যক্তির, প্রধান শক্তি এবং অধস্তন রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ককে অন্যতম মর্যাদা হিসেবে দেখত, তাদের ত্বকের রং-কে নয়। তাই আমাদের মানসিকতাকেও সেই ভাবেই বদলানো দরকার।

Latest article