‘‘বাঁদরের হাতে খোন্তা” এই বাংলা প্রবাদটির সুপ্রয়োগ করে চলছেন বর্তমান বিশ্বভারতীর উপাচার্য মহাশয়। বাঁদর যেমন খুন্তি জাতীয় কিছু হাতে পেলে যা খুশি খুঁড়ে খুঁড়ে নষ্ট করে ঠিক তেমনই কার্যকলাপ আপনার দেখা যাচ্ছে। যার ফলস্বরূপ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মহান ঐতিহ্য কালিমালিপ্ত হচ্ছে। এরকম গোঁয়ার অসভ্য বিজেপির পদলেহনকারী একজন কী যোগ্যতায় আমাদের প্রাণের রবীন্দ্রনাথের আশ্রমের দায়িত্বে নিয়োজিত হয়েছেন তা সত্যিই দুর্ভাগ্যের!
আরও পড়ুন-মামলার তদন্তে প্রভাব বিস্তার বিচারপতি অমৃতা সিনহার, রিপোর্ট চাইল সুপ্রিম কোর্ট
এই ব্যক্তিটি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মাবধি এযাবৎকালের সবথেকে জঘন্য উপাচার্য। এমন চেতনাহীন, মনুষ্যত্বহীন, বিবেকহীন, সংস্কৃতিহীন একটি লোক বাঙালির সবথেকে গর্বের জায়গাকে রোজ রোজ অপমানিত করে চলেছেন। সেইসঙ্গে গোটা বাংলাকেও। যার সাম্প্রতিকতমটি তো চাটুকারিতার সমস্ত গণ্ডি ছাড়িয়ে গিয়েছে।
সম্প্রতি ইউনেস্কো বিশ্বভারতীকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ঘোষণা করেছে। আমরা আপ্লুত। এই খবরে হেন বাঙালি নেই যে খুশি হয়নি। তা সেই অত্যন্ত সম্মানীয় সম্মানের জন্য মহামান্য উপাচার্য একটি ফলক বানিয়েছেন। তাতে নাম আছে কার না আচার্য নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদির আর বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর অর্থাৎ স্বয়ং উপাচার্যের! ভাবুন যাঁর জন্য এই অনন্য সম্মান সেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই বাদ! দেখুন বাঙালি উপাচার্যের নোংরামির দৌড় কোথায় পৌঁছেছে! স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী। ব্যস, তাতেই উপাচার্যের নর্দমার মতো মুখ সমান ম্যানহোলটি আবার খুলে গিয়েছে। ইনি কিন্তু চিঠিতে বাক্যবাণ বর্ষণে খুব পটু। আসলে মুখে বললে যদি ওনার সুমিষ্ট শব্দবচন মুখনিঃসরণ হয়ে আবার লোকজন ছি ছি করে ওঠে। তাই চিঠির অবতারণা। এবারের চিঠিটির ছত্রে ছত্রে উনি নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে অসাংবিধানিক আক্রমণ করেছেন। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অপমানিত করছেন একজন মুখ্যমন্ত্রীকে!
আরও পড়ুন-পা রাখেননি মোদি-শাহ, মিজোরামে আজ কঠিন পরীক্ষা বিজেপির
কে অধিকার দিয়েছে আপনাকে এই ধরনের কাজ করার? আপনি কি ভুলে গিয়েছেন উনি রাজ্যের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী! কারওর দয়ায় উনি ওই চেয়ারে বসেননি। মুখ্যমন্ত্রীর দলের প্রতি আপনার বিরাগ থাকতেই পারে। সেটা ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু আপনি আপনার ব্যক্তিগত অপছন্দে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারকে অপমানিত করেছেন। এটা আপনার এক্তিয়ারের বাইরে মহাশয়। ইনি বিশ্বভারতীর উপাচার্য নন জাতির লজ্জা। আসলে আপনি বিশ্বভারতীকে আপনার পৈতৃক সম্পত্তি ভেবে নিয়েছেন। তাই নিজেকে রবীন্দ্রনাথের ঊর্ধ্বে তুলে ফেলেছেন। সামান্য সময়ের দায়িত্বভার গ্রহণ করে বিশ্বভারতীর সঙ্গে জড়ানো সবকিছুকে গিলে নেওয়ার প্রয়াস চালাচ্ছেন? আপনাকে বিশ্বভারতীর উপাচার্য কম ক্যানিং লোকালের কাজের লোক বেশি মনে হয়।
এই যে আপনি আশ্রমিক আচার অনুষ্ঠান নিজের মতো করছেন। প্রাক্তন আশ্রমিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন। বর্তমান স্টাফদের সঙ্গেও আপনার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। তারা মান আর চাকরি বাঁচাতে সংঘাত এড়িয়ে চলে। এমনকী ছাত্রছাত্রীদের সুবিধা-অসুবিধা না বুঝে খেয়াল খুশিমতো নির্দেশ দেন। এমনকী জাতিগত বিদ্বেষ পোষণ করেন! বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আদর্শই হচ্ছে জাতপাত ধর্মের ঊর্ধ্বে আশ্রমিক ভাবধারা জাগ্রত করা। সেই মহান আদর্শের জায়গার উপাচার্য হয়ে জাতপাতের রাজনীতি নির্ভর বিজেপিকে প্রোমোট করছেন। ধিক্কার আপনাকে।
আরও পড়ুন-ব্রাজিলের থেকেও বড় কার্নিভাল কলকাতায়, জেলার পুজোর ভার্চুয়াল উদ্বোধনে রেকর্ড: মুখ্যমন্ত্রী
আর বিশ্ববরেণ্য অমর্ত্য সেনের সঙ্গে দু’হাত জমি নিয়ে আপনার আচরণ দুই বিঘা জমির ভূস্বামীকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। যাঁকে অপমানিত লাঞ্ছিত করার লক্ষ্যে আপনি আইন আদালত পর্যন্ত দৌড়েছেন! ছি ছি। ভাবখানা এমন যেন এই জায়গাটা আপনাকে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ দিয়ে গিয়েছেন। অমর্ত্য সেনের ক্ষেত্রেও মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবাদ করেছেন। আপনার আচরণকে সংযত করতে বলেছেন। কিন্তু আপনি ঔদ্ধত্যে সেসব কিছুকেই পাত্তা দিচ্ছেন না। ভাবছেন দিল্লির হাত মাথায় আছে কে রোখে আপনাকে… তাই না? বলছি প্রধানমন্ত্রীরা কি বিশ্বভারতীর এর আগে কেউ আচার্য হননি? ইন্দিরা গান্ধী তো এখানে কিছুদিন পড়াশোনাও করেছেন। কই তাঁরা তো স্বীয় কীর্তির জয়গান লেখানোর উদ্যোগ নেননি। না এর আগের উপাচার্যরা কেন্দ্রের পা চাটতে সেরকম কিছু কখনও করেছেন? তাহলে আপনার এমন তাঁবেদারি করার নির্লজ্জতা হয় কী করে?
আরও পড়ুন-অস্থায়ী উপাচার্যকে কড়া চিঠি দিল রাজ্যের শিক্ষা দফতর
শুনলাম আপনি নাকি যুক্তি দিয়েছেন, ফলকটি তাৎক্ষণিক। ওটা পাল্টানো হবে। আহা রে, কী সুবোধ বালকের মতো কথা। পাল্টাবেন তো বানালেন কেন? বানানোর সময় মনে হয়নি তাই না? রবীন্দ্রনাথকে বাদ দিয়ে মোদির নাম দিলেন যখন আপনার যুক্তি ধরেই যদি চলা হয় তাহলে মুখ্যমন্ত্রীর নামও দিন। কারণ উনিও তো বাংলার নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী। বিশ্বভারতীর হেরিটেজ সম্মান সকলের কাছেই আনন্দের। বাংলার তো সর্বাগ্রে।
আরও পড়ুন-বাংলায় বিভাজন করা যায় না
সেই জায়গায় নামের থেকেও বড় বিষয় যে হেরিটেজ প্রাপ্তিতে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার জন্য আপনার তো মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো উচিত ছিল। এর আগেও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ওঁকে ডাকা হয়েছিল। উনি গিয়েছেন। সব ঘুরে দেখেছেন। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে গল্প করেছেন। এটাই তো পারস্পরিক ভদ্রতা। কিন্তু আপনি সেটা করলেন না। করবেন কী করে? আপনি তো উপাচার্যের আগেও দিল্লির লেজধারী ভৃত্য। তাই আপনার সেই যোগ্যতাই নেই মনে করার যে আপনার পদের সঙ্গে সম্পর্ক। ব্যক্তির সঙ্গে নয়।
ব্যক্তি হিসাবে বললে তো আচার্যের হাত জাতিদাঙ্গার রক্তে লাল। তাতে কি তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়া আটকেছে! রাজনীতি রাজনীতির জায়গাতেই মানায়। কিন্তু আপনি উপাচার্য হয়েও সেই রাজনীতি করার উদগ্র বাসনায় মেতে বারবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করছেন কী করে? এতই যদি রাজনীতির শখ তাহলে পদটা ত্যাগ করে সরাসরি বিজেপির ঝান্ডা হাতে তুলে নিলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। বিষয় হচ্ছে, রাজনৈতিক রঙের মোহতে আপনি কোনও সভ্যতাই শেখেননি দেখছি। পড়াশোনা জানা অশিক্ষিত বলেই সবথেকে আশ্চর্যের যে এই তালে আপনি নিজের নামটাও খোদাই করে নিলেন! হাস্যকর। আপনার প্রকৃত স্থান বিশ্বভারতীতে নয়, উত্তরপ্রদেশের গোয়ালে।
আরও পড়ুন-কবিকে অপমান, বিজেপিকে মানুষ বঙ্গোপসাগরে ফেলবে, ধরনামঞ্চে তোপ দাগলেন তৃণাঙ্কুর
তা এরকম খামখেয়ালি করে কতদিন চালাবেন? কী মনে করেন বাঙালি সেগুলো মুখ বুজে সহ্য করে নেবে? আপনি তো দেখছি আপনার দিল্লির প্রভুদের মতো বাংলার মানুষকে গরু ভেবে নেওয়ার ভুল করে চলছেন ক্রমাগত। একুশের নির্বাচনে আপনার প্রভুদের কী হাল করে ছেড়েছে দেখেছেন তো বাঙালি? সেখানে আপনি তো সামান্য একজন উপাচার্য! এত দুঃসাহস দেখানোর মৌরসিপাট্টা বুমেরাং হবে না সেটা কে গ্যারান্টি দিচ্ছে আপনাকে? দিল্লি? তাদের গদি টললে কী করবেন? আপনি মুখ্যমন্ত্রীকে ছাব্বিশ মনে করিয়েছেন তার আগে নিজে তো চব্বিশ ভাবুন।
আরও পড়ুন-অস্থায়ী উপাচার্যকে কড়া চিঠি দিল রাজ্যের শিক্ষা দফতর
আপনার সমস্যা আপনি বিজেপি করেন তাই তো? সে করুন না। তা আপনার বিজেপি করার পাকা ধানে কি কেউ মই দিয়েছে? আপনি আপনার রাজনৈতিক মতাদর্শ বিশ্বভারতীর সঙ্গে মেলাতে কেন চাইছেন? কে হে আপনি? শুনে রাখুন, রবীন্দ্রনাথ আর বিশ্বভারতী বাংলার মাথার মুকুট। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়কে গোটা বিশ্ব একডাকে চেনে। আপনার আচার্যকে নয়। এই ক্যাম্পাসকে আপনার রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জায়গা ভেবে বসলে কিন্তু আমরা মেনে নেব না। আমার তো নিজেরই ইচ্ছে করছে আপনার সামনে ওই ফলক ভেঙে গুঁড়িয়ে দিই। তাতে আমার জেল-জরিমানা যা হয় হবে।
আপনি কী ভেবে নিয়েছেন এই মন্দিরের মতো জায়গাটিকে জানি না কিন্তু আপনার দ্বারা দিনের পর দিন মন্দিরের একটি একটি ইট ধ্বংসও আমরা ঠুঁটো জগন্নাথের মতো বসে বসে দেখব না। আপনার পদের সম্মান ধূলিসাৎ হওয়ার আগে বাংলার কৃষ্টি, সৃষ্টি, সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান কেন্দ্র বিশ্বভারতীকে তার মর্যাদায় রক্ষা করুন। তাতেই মঙ্গল।