ঘুরে আসুন ভান্ডারদরা

ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম ভান্ডারদরা। সহ্যাদ্রি পর্বতমালায় অবস্থিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ। ট্রেকারদের স্বর্গরাজ্য। আছে নদী, জলপ্রপাত, হ্রদ-সহ বেশকিছু দর্শনীয় স্থান। সপরিবার ঘুরে আসতে পারেন। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

মহারাষ্ট্রের আহমেদনগর জেলার পাহাড়ি স্টেশন ভান্ডারদরা। মুম্বই এবং পুনে থেকে প্রায় ১৬৫ কিলোমিটার এবং নাসিক থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে, রাজকীয় সহ্যাদ্রি পর্বতমালায় অবস্থিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ। চারিদিক সবুজ। ফুরফুরে বাতাস। সদা চঞ্চল জলপ্রপাত। আকাশছোঁয়া পাহাড়। নির্মল পরিবেশ। যেন সময় এখানেই থমকে গেছে। কিছুদিন বিশ্রাম এবং প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য আদর্শ জায়গা। যাঁদের ফটোগ্রাফির নেশা আছে, তাঁদেরও মন ভাল হয়ে যাবে।
এক-এক ঋতুতে ভান্ডারদরা এক-এক রকম। বর্ষায় চোখে পড়ে গাছপালার তোলপাড় করা আনন্দ। ঢেউ ওঠে সবুজ ধানখেতে। খুশিতে মাথা দোলায় হলুদ ফুল। পাহাড়ের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কৃষ্ণমেঘ মূহূর্তে চূড়ায় চূড়ায় বৃষ্টিধারা ঢেলে দেয়। ভান্ডারদারার বারি গ্রাম থেকে প্রায় ৫৫০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত মহারাষ্ট্রের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কালসুবাই।
ভান্ডারদরা এবং আশেপাশে আছে বেশকিছু দর্শনীয় স্থান। সেগুলো দেখার জন্য অথবা জলপ্রপাত ঘুরে দেখার জন্য স্থানীয় গাইড ভাড়া করা বাঞ্ছনীয়। পথগুলো বিভ্রান্তিকর এবং ঘন জঙ্গলে ঘেরা। সূর্যাস্তের আগে হোটেলে ফিরে যেতে হয়। কারণ বেশ তাড়াতাড়ি অন্ধকার নেমে আসে। ভান্ডারদরার স্থানীয়রা মূলত মারাঠি ভাষায় কথা বলে। গাইড সঙ্গে থাকলে ভাষাগত সমস্যা দেখা দেয় না।
পিকনিক, ট্রেক, মধুচন্দ্রিমার জন্য দারুণ জায়গা। পর্যটকরা ভান্ডারদরায় আসেন নানান বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য। সবচেয়ে জনপ্রিয় জলপ্রপাত হল বসুন্ধরা জলপ্রপাত এবং কোলতেম্বে জলপ্রপাত, যা বাহুবলী জলপ্রপাত নামেও পরিচিত। এই জলপ্রপাতগুলোয় পৌঁছাতে রাস্তা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার ছোট ট্রেক করতে হয়। জলপ্রপাত পরিদর্শনকারী পর্যটকদের আরামের জন্য বন বিভাগ মাটির পথ, ফুটপাথ এবং প্রবাহিত জলপ্রপাতের উপর ছোট ব্রিজ নির্মাণ করেছে। নানি জলপ্রপাতটি প্রায় এক মাইল দূরে অবস্থিত। রাস্তা থেকে দেখা যায়। আবার জলপ্রপাতের ঠিক সামনে নির্মিত দর্শনীয় সেতুতে কয়েকটি সিঁড়ি বেয়ে উঠেও দেখা যায়। এখান থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে রয়েছে নেকলেস জলপ্রপাত। যা দেখা যায় রাস্তা থেকেই।
ঘুরে আসা যায় আর্থার লেক। অসাধারণ লেকটি প্রভারা নদীর জল এবং আশেপাশের পাহাড় থেকে নেমে আসা অসংখ্য জলপ্রপাত দ্বারা পরিপূর্ণ। এর শান্ত জলরাশি সত্যিই মনোমুগ্ধকর। প্রায় ২৪ কিলোমিটার বিস্তৃত। আর্থার লেকটি উইলসন বাঁধের জলাধার।


উইলসন বাঁধ ১৯২৬ সালে প্রভারা নদীর উপর ব্রিটিশরা নির্মাণ করেছিলেন। ১৫০ মিটার উঁচু। ভারতের বৃহত্তম মাটির বাঁধ। পুরো আহমেদনগর জেলার সারা বছরের জন্য পর্যাপ্ত জল ধারণ করে।
দেখে আসা যায় ছাতা পতন। এটা কোনও প্রাকৃতিক জলপ্রপাত নয়। উইলসন বাঁধের ফ্লাড গেট থেকে নির্গত জল যখন বাঁধের প্রাচীরের বাইরে একটি গোলার্ধ আকৃতির পাথরের উপর পড়ে, তখন দেখা যায়। অগাস্ট মাসে এই অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। সেই কারণে বাঁধ উপচে পড়ে এবং জল ছেড়ে দেওয়া হয়।
রান্ধা জলপ্রপাত বহু পর্যটক ঘুরে দেখেন। রাজুর মহাসড়কে ভান্ডারদরা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। জলপ্রপাতটি একটি খাদে পড়ে এবং গর্জন করে। এর সামনে বহু সিনেমার শ্যুটিং হয়েছে। রান্ধা জলপ্রপাত এবং কাছাকাছি কাটালাপুর জলপ্রপাতের জল প্রভারা নদীতে প্রবাহিত হয়, যা আহমেদনগর জেলার গ্রামগুলিকে সেচ দেয়। রান্ধা জলপ্রপাতে যেতে প্রতি গাড়ির জন্য ৫০ টাকা পার্কিং ফি দিতে হয়। এই এলাকায় সুনির্মিত ঘাট, ফুটপাথ এবং ভিউ পয়েন্ট রয়েছে। এর খুব কাছেই রয়েছে প্রভারা নদীর তীরে ঘোরপদ দেবী নামে এক স্থানীয় দেবীর মন্দির। ফুটপাথের ধারে রয়েছে অনেক দোকান এবং খাবারের দোকান।

আরও পড়ুন-আচমকা পড়ুয়া ভিসার ইন্টারভিউ বন্ধের সিদ্ধান্ত

দেখে নেওয়া যায় অমৃতেশ্বর মন্দির। খ্রিস্টীয় দ্বাদশ বা ত্রয়োদশ শতাব্দীর কোনও এক সময়ে ভান্ডারদরা থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে রতনওয়াড়ি গ্রামে পাথরে খোদাই করা এই প্রাচীন শিবমন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। মন্দিরটি পশ্চিমমুখী। মন্দিরের পূর্ব দিকে দুটি নন্দী রয়েছে। গর্ভগৃহে একটি শিবলিঙ্গ রয়েছে, যা বেশিরভাগ সময় জলে ডুবে থাকে।
ভান্ডারদরা অঞ্চল ট্রেকারদের জন্য একটি স্বর্গরাজ্য। সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেক হল রতনগড় থেকে হরিশ্চন্দ্রগড় পর্যন্ত রেঞ্জ ট্রেক। অন্যান্য আকর্ষণীয় ট্রেক হল এএমকে বা আলাং, মান্দানগড়, কুলাং ট্রেক এবং মাউন্ট কালসুবাই ট্রেক, যা খুবই চ্যালেঞ্জিং। এর জন্য ভাল শারীরিক সক্ষমতার প্রয়োজন। ঘাটঘর বাঁধ একটি দর্শনীয় স্থান। ভান্ডারদরা থেকে প্রায় ২৮ কিলোমিটার দূরে উইলসন বাঁধের বিপরীতে অবস্থিত। সবমিলিয়ে ভান্ডারদরা ভ্রমণ মনের মধ্যে অদ্ভুত আনন্দের জন্ম দেবে। বৃষ্টির মরশুমে সপরিবার ঘুরে আসুন।

আরও পড়ুন-জ্যোতি-কাণ্ডের জেরে ছবি তোলায় নিষেধাজ্ঞা মনে করিয়ে দিল রেল

কীভাবে যাবেন?
যাওয়া যায় রেলপথে। নিকটতম রেলস্টেশন ইগতপুরী। ভান্ডারদরা থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে। কেন্দ্রীয় রেলওয়ের মুম্বই-নাসিক রুটের অনেক ট্রেন ইগতপুরীতে থামে। ইগতপুরী থেকে শেয়ার ট্যাক্সি, অটোরিকশা এবং রাজ্য পরিবহণের বাস সহজেই পাওয়া যায়। মুম্বাইয়ের ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হল নিকটতম বিমানবন্দর। প্রায় ১৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সড়কপথে আসা যায় মুম্বই থেকে। পাওয়া যায় বাস বা ভাড়াগাড়ি।

কোথায় থাকবেন?
ভান্ডারদরা একটি ছোট গ্রাম। থাকার সুযোগ সীমিত। আছে কয়েকটি রিসর্ট এবং হোমস্টে। আগে থেকে বুকিং করে গেলেই ভাল। থাকার ব্যবস্থার মতোই ভান্ডারদরায় খাবারের বিকল্পও সীমিত। স্থানীয় মহারাষ্ট্রীয় খাবার পিঠালা, ঝুনকা ভাকরি, শাকসবজি এবং তরকারি খাওয়া যায়। আমিষভোজীরা চিকেন, মাটন, ডিমের কারি বা কাঁকড়ার স্বাদ নিতে পারেন। বাটাটা ভাজ্জি, কান্দা ভাজ্জি, বড়া পাও, মিসালের মতো খাবার সহজেই পাওয়া যায়। ভান্ডারদরার অনেক দোকানে মেলে প্যাকেজ করা খাবার এবং পানীয় জল।

Latest article