মধ্যপ্রদেশের সাতপুরা রেঞ্জের অন্তর্গত পার্বত্য অঞ্চল পাঁচমারি (Pachmarhi-Madhya Pradesh)। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। মনে করা হয়, এই পার্বত্য অঞ্চল হিমালয়ের থেকেও প্রাচীন৷ কথিত আছে, ১৪ বছরের বনবাসের সময় মহাভারতের পাণ্ডবরা এখানে পাঁচটা গুহা বানিয়েছিলেন। থাকার জন্য৷ সেই কারণেই এই জায়গার নাম পাঁচমারি৷
উচ্চতা ১০৬৭ মিটার৷ সাতপুরা পর্বতে নর্মদা উপত্যকার দক্ষিণে মধ্যপ্রদেশের একমাত্র শৈল শহর এটা৷ পাঁচমারি আবিষ্কৃত হয় ১৮৫৭ সালে। ব্রিটিশ আর্মি ক্যাপ্টেন ফোরসিথ-এর উদ্যোগে। তারপর থেকে ক্রমশ এটা জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠেছে৷
পার্বত্য অঞ্চলের পাশাপাশি এখানে আছে গভীর অরণ্য। পাঁচমারি ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যদি চিরসবুজ বনাঞ্চল ঘুরে না দেখা হয়। তার জন্য নিতে হবে ন্যাশনাল পার্কের দায়িত্বে থাকা বন দফতরের অনুমতি। সঙ্গে রাখতে হবে গাইড৷ পাঁচমারির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এখানে রয়েছে একটি বিশেষ ভিউ পয়েন্ট৷ যার নাম প্রিয়দর্শিনী৷ কী কী দর্শনীয় স্থান রয়েছে?
ধূপগড় : পাঁচমারি (Pachmarhi-Madhya Pradesh) বাসস্ট্যান্ড থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ধূপগড়। এটাই সাতপুরা রেঞ্জের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। উচ্চতা ১৩৫০ মিটার। ৪৪২৯ ফুট। ধূপগড় থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখতে দারুণ লাগে। গাড়ি নিয়ে ওঠা যায়। যাওয়া যায় পায়ে হেঁটেও। সারা বছরই দেখা যায় পর্যটকের ভিড়।
মহাদেব ও পার্বতীগুহা : মহাদেব ও পার্বতীগুহা রয়েছে শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে। পাহাড়ের নিচে। জঙ্গলের পথ পেরিয়ে পৌঁছতে হয়৷ তারপরে রয়েছে ৫০ ফুট সঙ্কীর্ণ অন্ধকার এক গুহা৷ ৪২৬০ ফুট উচ্চতায় চৌরাগন পাহাড়ে রয়েছে শিবমন্দির৷
সাতপুরা জাতীয় উদ্যান : পাঁচমারির আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য সাতপুরা জাতীয় উদ্যান। সাতপুরা রেঞ্জগুলি সাতপুরা জাতীয় উদ্যানকে সম্পূর্ণরূপে ঘিরে এবং আগলে রেখেছে। যাঁরা বিভিন্ন ধরনের প্রাণী সম্পর্কে আরও জানতে আগ্রহী, এই বন্যপ্রাণী পার্কটি তাঁদের জন্য একটি আদর্শ স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। সাফারির ব্যবস্থা আছে। কপাল ভাল থাকলে বাঘের দেখা পাওয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুন- ফের এক্তিয়ারের বাইরে সিদ্ধান্ত বোসের, ক্ষোভ সর্বত্র
মৌমাছি জলপ্রপাত : পাঁচমারি অঞ্চলে আছে বেশ কয়েকটি জলপ্রপাত। তার মধ্যে অন্যতম মৌমাছি জলপ্রপাত। এই জলপ্রপাতেই পাঁচমারি থেকে জিপ নিয়ে যেতে হয়। কেউ কেউ হেঁটেও যান। খাড়াই সিঁড়ি। ওঠানামার সময় বিশেষভাবে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। শিশু এবং বয়স্কদের জন্য বিপজ্জনক।
জটা শঙ্কর গুহা : জটা শঙ্কর গুহাকে অত্যন্ত পবিত্র স্থান হিসাবে মনে করা হয়। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই গুহায় ভগবান শিব ভস্মাসুরের ক্রোধ থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। এও মনে করা হয়, গুহায় নাকি একটি বড় পাথরের আড়ালে একটি প্রাকৃতিক শিবলিঙ্গ লুকিয়ে রয়েছে। পাথরের গঠন শত-মাথাযুক্ত সর্প শেষনাগের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। কারও কারও মতে, শিবের জটার মতো দেখতে। তাই এমন নামকরণ।
পাণ্ডব গুহা : বহু জনের বিশ্বাস অজ্ঞাতবাসের সময় দ্রৌপদী-সহ পাণ্ডবেরা এই গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাই এই গুহাকে বলা হয় পাণ্ডব-গুহা। সারা বছর বহু পর্যটক আসেন এবং এই গুহা ঘুরে দেখেন। গুহাটিকে প্রত্যেকেই অত্যন্ত পবিত্র মনে করেন। এখানে আছে বেশ কয়েকটি মন্দির। মনে করা হয় মন্দিরগুলি নবম শতাব্দীতে তৈরি হয়েছিল। পাঁচমারি বাসস্ট্যান্ড থেকে পাণ্ডব গুহার দূরত্ব মোটামুটি দু’ কিলোমিটার। আছে বাস। তবে পায়ে হেঁটেও যাওয়া যায়।
হান্ডি খহ : পাঁচমারির আরেকটি সুপরিচিত পর্যটন গন্তব্য হল হান্ডি খহ। অত্যন্ত পরিচিত এলাকা। আকর্ষণ বাড়িয়েছে মনোরম পাহাড়। স্থানীয়রা মনে করেন এক সময় এখানে বিরাট হ্রদ ছিল। সাপের অভিশাপে সেই হ্রদের জল শুকিয়ে যায়। পর্যটকদের খুব পছন্দের জায়গা। এখানে হাইকিং করা যায়, ঘোড়ায় চড়া যায়। পাঁচমারি বাসস্ট্যান্ড এবং হান্ডি খহের মধ্যে দূরত্ব মাত্র পাঁচ কিলোমিটার।
চৌরাগড় মন্দির : পবিত্র এই স্থানটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৩২৬ মিটার উপরে অবস্থিত। পাঁচমারি বেড়াতে গেলে এই মন্দিরটি দেখা উচিত। মন্দিরের চারপাশে সুন্দর উপত্যকা এবং আকর্ষণীয় পাহাড় রয়েছে। এখানকার আরাধ্য দেবতা শিব। নাগ পঞ্চমী এবং শিবরাত্রির দিন প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়।
অপ্সরা বিহার : অপ্সরা বিহার পাঁচমারির একটি সুন্দর এবং শান্তিপূর্ণ জলপ্রপাত। রয়েছে ঘন বনের মধ্যে। প্রায় ৩০ ফুট গভীর। পথ অত্যন্ত দুর্গম। তবু বহু মানুষ আসেন জলপ্রপাতের চঞ্চলতার সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতানোর জন্য।
বড়ে মহাদেব : বড়ে মহাদেব একটি মন্দির। শিবের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়েছে। এখানে বিষ্ণু, ব্রহ্মা এবং গণেশের মূর্তি রয়েছে। গুহাটি পাঁচমারির সবুজ প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে অবস্থিত।
রিচগড় : রিচগড় একটি গুহা। পাঁচমারি (Pachmarhi-Madhya Pradesh) পাহাড়ের ফাটলের নিচে অবস্থিত। কথিত আছে একসময় এখানে একটি বিশাল ভালুক থাকত। হিন্দিতে বলা হত রিচ। সম্ভবত সেই থেকেই এই নামকরণ। বহু মানুষ এই গুহা দেখার জন্য আসেন।
খ্রিস্ট চার্চ : খ্রিস্ট চার্চ ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শৈলীর একটি প্রধান উদাহরণ। চারপাশে লতাপাতা এবং সুউচ্চ বৃক্ষ দিয়ে ঘেরা। সুউচ্চ চার্চটি তৈরি পাথর দিয়ে। পাঁচমারি পাহাড় থেকে এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।