ভুলে গেলেন কমরেড নিজেদের কীর্তিকলাপগুলো !

৩৪ বছরের বাম জমানা। একেবারে সোনায় মোড়ানো, ধোয়া তুলসীপাতার জমানা। গরিব মুসলমানের টাকা মারা ওয়াকফ কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে সায়েন্টিফিক রিগিং, সবই সেই শুদ্ধ জমানার বিশুদ্ধ ফল। স্মৃতিতে কলজে ডুবিয়ে সত্যি ঢেউয়ের তালে তালে প্রবীর ঘোষাল

Must read

বাংলার সিংহভাগ মানুুষের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর একটা বিশেষ বিষয়ে ভীষণ অভিমান আছে। সেটা হল, ৩৪ বছর বাম শাসনে সিপিএম যেসব অত্যাচার এবং দুর্নীতি করেছে তার কোনও ‘বিচার’ মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসে মমতা করেননি। লাল পার্টির (CPM) কর্তারা আজ উঠতে বসতে রাজ্যে গণতন্ত্র গেল গেল বলে রব তোলেন। অথচ তাদের আমলে সন্ত্রাস বল্গাহীন আকার নিয়েছিল, তার কাছে তো ব্রিটিশদের অত্যাচারও কোনও তুলনায় আসে না। ভূ-ভারতে স্বাধীনোত্তর কোনও রাজ্যের সেইরকম অভিজ্ঞতাই নেই।

আর বলিহারি কংগ্রেসকে। সিপিএমের (CPM) এই জোট সঙ্গীর হাজারে হাজারে কর্মী-সমর্থক যাদের হাতে খুন হয়েছে, তাদেরকেই কংগ্রেস এখন বন্ধুত্বের বন্ধনে আলিঙ্গন করছে। নব্বুই দশক পর্যন্ত সব নির্বাচনে কংগ্রেসের ইস্তাহারের ছত্রে ছত্রে লেখা রয়েছে, সেইসব রক্তাক্ত দিনগুলির ইতিহাস। কংগ্রেস তো দাবি করত, সিপিএমের জমানায় তাদের কমপক্ষে ৫০ হাজারের মতো নেতা খুন হয়েছে। শহিদদের সেই বলিদান আজ আর কংগ্রেসের মনে নেই। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, কংগ্রেস এ রাজ্যে অবক্ষয়কে আরও তরান্বিত করেছে। সিপিএমের সঙ্গে তাদের মাখামাখির রাজনীতি। সাগরদিঘির ফল সাময়িক, তার সুদূরপ্রসারী প্রভাবের স্বপ্ন যাঁরা দেখছেন, তাঁরা অচিরেই ভুল প্রমাণিত হবেন।

২০১১ সালে মা-মাটি-মানুষের সরকার কায়েম হওয়ার পর রাজ্যবাসী মনে করেছিলেন সিপিএমের (CPM) যাবতীয় অন্যায়-অবিচারের একটা বিহিত হবে। সন্ত্রাস-রিগিংয়ের সাহায্যে একের পর এক নির্বাচনী বৈতরণী পার করেছে সিপিএম। কংগ্রেস তখন অনবরত বাম সরকারকে বরখাস্তের দাবিতে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছে। আজ কংগ্রেস কেরলে মাটি কামড়ে সিপিএমের নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। কেরলে কূুস্তি আর বাংলায় দোস্তি— কী সুবিধাবাদী রাজনীতির আশ্রয় নিয়ে সিপিএম-কংগ্রেস চলছে, তা সবাই দেখছে। আর এই সুবিধাবাদী, নীতিহীন জোটকে রাজ্যের মানুষ উচিত শিক্ষা দিয়েছে বিগত বিধানসভার নির্বাচনে। একটিও আসন জোটেনি তাদের।

আরও পড়ুন: ৯১ শতাংশ উপস্থিতি, ব্যর্থ হল ডিএ ধর্মঘট

কিন্তু মানুষ বারবার কংগ্রেস-কমিউনিস্টদের প্রত্যাখান করলেও, জ্যোতি বসু-বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যদের আমলের কুকীর্তির নায়করা শাস্তি পায়নি। আসলে রাজ্যের উন্নয়নের কাজে মগ্ন মুখ্যমন্ত্রী অন্য কোনওদিকে মন দেননি। উন্নয়ন অবশ্যই অগ্রাধিকার পাবে। পাচ্ছেও। ক্ষমতায় আসার আগে সিপিএমের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত করতে, মমতা জেলায় জেলায় ছুটে বেড়াতেন। ছুটে বেড়ানোর নেশা আজও তাঁকে থামতে দেয়নি। প্রশাসনিক বৈঠকের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের সমাজকল্যাণ এবং জনমুখী প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নের কাজ কতটা কার্যকরী হচ্ছে তার দেখভাল নিজে করছেন। সেটাও সব জেলায় গিয়ে। অর্থাৎ সরাসরি। তাই ভোট আসলে মানুষ বিরোধীদের প্রচারে প্রভাবিত হয় না। ঢেলে ভোট দেয় জোড়াফুলকেই। বারবার সেটা প্রমাণিত হচ্ছে।
হ্যাঁ, নিচের তলায় ভুলভ্রান্তি হচ্ছিল বলেই, ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে একটি আসন গিয়েছিল বিজেপির ঝুলিতে। তারপরও ছিল ভাঁওতাবাজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নানা প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি। জোটের ফলাফলে বিরােধী শক্তি ধেই ধেই করে নাচতে শুরু করেছিল। গেল গেল রবও উঠেছিল। কিন্তু মাঠে নেমেছিলেন মমতা। মানুষ সত্যটা যাচাই করে নিয়েছিল। তাই ২০২১ সালে বিধানসভার নির্বাচনে ফের মমতা ম্যাজিকই হল। সেই ম্যাজিক নিঃসন্দেহে আবার দেখা যাবে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে। বিজেপি এবং তাদের দোসরদের সব ছক ভেস্তে যাবে। রাজ্যবাসী বর্তমান রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রীকে ১২ বছর হতে চলল দেখছে। ৩৪ বছরের বাম অপশাসনও তারা দেখেছে। দিল্লির শাসনও হাড়ে হাড়ে মানুষ টের পাচ্ছে।

আর সিপিএম মনে করছে, তাদের পাপাচার মানুষ ভুলে গিয়েছে। হতে পারে নয়া প্রজন্ম সেই আমলের কেচ্ছা-কেলেঙ্কারি সেভাবে জানে না। কারণ বর্তমান সরকার হয়ত গণতন্ত্রের কথা ভেবে, সিপিএমের (CPM) কলঙ্কিত নায়কদের রেয়াত করে দিয়েছে। কিন্তু জ্যোতিবাবুর ছেলে চন্দন বসু-সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ফুলেফেঁপে ওঠার রহস্য আজও অধরা রয়ে গিয়েছে। এই দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ত্রিপুরার লাল পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নৃপেন চক্রবর্তী। সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী ওই কমিউনিস্ট নেতার পরিণতি হয়েছিল পার্টি থেকে বহিষ্কার।

আর এক কাণ্ড বাধিয়েছিলেন যতীন চক্রবর্তী। বাম আন্দোলনে ষাটের দশকে ঝড়তোলা আরএসপি নেতা বাম সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন। একটি প্রাইভেট কোম্পানিকে সরকারি কাজের বরাত পাইয়ে দিতে জ্যোতিবাবুর পুত্র লিখিতভাবে যতীনবাবুকে আর্জি জানিয়েছিলেন। চন্দন বসুর সেই কীর্তি সংবাদপত্রে ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। ব্যাস, আর যায় কোথায়! আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের রোষানলে পড়ে বেচারি যতীন মন্ত্রিত্ব খুইয়েছিলেন। পার্টি থেকেও বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। বাম আমলে দুর্নীতি ছিল পাহাড়প্রমাণ। পঞ্চায়েতে হরির লুটের কাহিনি গ্রামের মানুষ ভুলে গেছেন? মোটেই না।

ভোট এলে তাই ধান্দাবাজরা জোট বাঁধে। তৃণমূল কংগ্রেস তাদের বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছে। মানুষের পক্ষে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি যতই জোট বাঁধুক, তাতে সুবিধা বিশেষ হবে না। কারণ, মানুষও মমতার পাশে জোটবদ্ধ হয়েই আছে। আবার ভোট এলে সেটাই প্রমাণিত হবে। যারা বাংলার উন্নয়ন চায় না, তাদের কোন যুক্তিতে আমজনতা সমর্থন জানাবে?

Latest article