না ফেরার দেশের ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং (Manmohan Singh)। হস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দিল্লি এইমসে তাঁকে ভর্তি করা হয়। তিনি শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ভুগছিলেন। শেষরক্ষা হল না। প্রয়াত হলেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা। তাঁর প্রয়াণে শোকের ছায়া গোটা দেশজুড়ে।
১৯৯১ সালে রাজ্যসভার সাংসদ হন। ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি বিরোধী দলনেতা ছিলেন। ২০০৪ সালের ২২ মে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন তিনি (Manmohan Singh)। পর পর ২ বার প্রধানমন্ত্রীর পদে ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি ২০০৯ সালের ২২ মে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছিলেন। ‘অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’ হিসেবেই এদেশের রাজনীতিতে মনমোহনের অন্যতম পরিচয়।
১৯৩২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পশ্চিম পাঞ্জাবের গাহে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। গাহ বর্তমানে পাকিস্তানে রয়েছে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় সিং পরিবার চলে আসে ভারতে। অক্সফোর্ড থেকে অর্থনীতিতে ডক্টরেট ডিগ্রির পর, ১৯৬৬-১৯৬৯ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘের জন্য কাজ করেছিলেন তিনি। ১৯৭০ এবং ১৯৮০ সালে তিনি ভারত সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা (১৯৭২-১৯৭৬), রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর (১৯৮২-১৯৮৫) এবং পরিকল্পনা কমিশনের প্রধান ছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে মনমোহন সিংকে অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করা হয়।
২০২১ সালের এপ্রিল মাসে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন মনমোহন সিং। সেবার অবশ্য সুস্থ হয়েই হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরেছিলেন তিনি। তার পর থেকে শরীর কমবেশি অসুস্থই ছিল। মোদির আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিং। কেন্দ্রের তখন ক্ষমতায় কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট। ২০০৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত সরকারের মুখ ছিলেন মনমোহনই। ১৯৯১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ছিলেন ৩৩ বছর রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন তিনি। চলতি বছর ৪ এপ্রিলই রাজ্যসভা থেকে তিনি অবসর নেন।
আরও পড়ুন- টাকার মূল্যে ফের সর্বনিম্ন পর্যায়ের পতন
২০০৫ সালে মনমোহন সরকার সেলস কর সরিয়ে মূল্য সংযোজন কর চালু করে। এর ফলে করব্যবস্থার সরলীকরণ ঘটে। ২০০৫ সালে জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য অভিযানের সূচনা করে মনমোহন সরকার। এর মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে সহজলভ্য এবং স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করা হয়। জায়গায় জায়গায় গড়ে তোলা হয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র। IIMS, IIT, IIM-এর মতো ঐতিহ্যশালী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য ২৭ শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন মনমোহন। ২০০৯ সালের ২ জুলাই শিক্ষার অধিকার আইন চালু করে মনমোহন সরকার। এই আইনের আওতায় ৬ থেকে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষা মৌলিক অধিকারে পরিণত হয়। নিখরচায়, বাধ্যতামূলক ভাবে চালু করা হয় শিক্ষার অধিকার আইন।
মনমোহনের আমলে চিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি হয়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত চিন ভারতের প্রধান বাণিজ্য সহযোগী দেশ হিসেবে রয়েছে। ১৯৬২ সালে ইন্দো-চিন যুদ্ধের সময় থেকে সিকিমের নাথুলা পাস বন্ধ ছিল। চার দশক পর সেই পাস খুলে যায় মনমোহনের আমলেই। ২০০৬ সালে জাপানের সঙ্গে কৌশলগত আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পরিকাঠামো ক্ষেত্রে তার পর থেকেই জাপানি বিনিয়োগের রমরমা।