বীরাঙ্গনা স্বাধীনতা সংগ্রামীর স্মৃতিরক্ষায় নজর দেয়নি কংগ্রেস-বামেরা, মাতঙ্গিনীর বসবাসের জায়গা সংস্কারে উদ্যোগী বিধায়ক

ভারতকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনে এভাবে গর্জে উঠেছিলেন তাম্রলিপ্ত বা অধনা তমলুকের আলিনান গ্রামের বধূ মাতঙ্গিনী হাজরা।

Must read

সংবাদদাতা, তমলুক : এক হাতে শঙ্খ এবং আরেক হাতে তেরঙ্গা পতাকা। ভারতকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনে এভাবে গর্জে উঠেছিলেন তাম্রলিপ্ত বা অধনা তমলুকের আলিনান গ্রামের বধূ মাতঙ্গিনী হাজরা। ১২ বছর বয়সে ত্রিলোচন হাজরা নামে এক বৃদ্ধের সঙ্গে বিয়ে হলেও ১৮ বছরে বিধবা হন বীরাঙ্গনা মাতঙ্গিনী। এরপর শ্বশুরবাড়ির কয়েক হাত দূরে একাই একটি মাটির বাড়িতে বসবাস শুরু করে সেখানেই কাটিয়ে দেন ৪০ বছর। ওই বাড়ি থেকেই তৈরি হত ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের যাবতীয় রূপরেখা। ১৯৩২ সালে লবণ আইন অমান্য করায় বীরভূমের বহরমপুরে কারাবাস করতে হয় মাতঙ্গিনীকে। সেই সময়ই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ভেঙে পড়ে মাতঙ্গিনীর সাধের ছোট্ট বাড়িটি।

আরও পড়ুন-টুথ পিক দিয়ে অভিষেক বানালেন জাতীয় পতাকা

স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন এ রাজ্যে কংগ্রেস ও বাম শাসনকালে ওই জায়গাটির দিকে ফিরে তাকায়নি কেউই। ফলে স্মৃতি বিজড়িত সেই জায়গা বর্তমানে হয়ে উঠেছে হলুদ চাষের জমি। একথা তমলুকের বিধায়কের কানে যাওয়ামাত্রই দ্রুত ওই স্থানটি রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নিতে সক্রিয় হন তিনি। ফলে খুশি হাজরা পরিবারের সদস্যরা। মাতঙ্গিনীর সম্পর্কে নাতি মদনমোহন হাজরা বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর ওঁকে ওঁর সতীনপুত্র একটি মাটির বাড়ি তৈরি করে দেন কয়েক হাত দূরে। সেখানেই এর বাড়ি-ওর বাড়ি কাজকর্ম করে দিন কাটাতেন মাতঙ্গিনী। আর ওই বাড়ি থেকেই ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনে নিজেকে নিয়োজিত করেন। বাড়িটি প্রায় ৪০ বছর পর ভেঙে যায়। একসময় ইন্দিরা গান্ধী এখানে এসেছিলেন। তখন তাঁকে জায়গাটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বলেছিলাম। দীর্ঘদিনের বাম সরকারের কাছেও দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। জানা গিয়েছে, ৪০ বছর কাটানো ওই বাড়িটি ভেঙে যাওয়ার পর মাতঙ্গিনী তাঁর শ্বশুরবাড়ির গোলাঘরের বারান্দায় রাত কাটাতেন। সেই গোলাঘরটি থাকলেও তা আজ জরাজীর্ণ। মাটির প্রাচীন বাড়ির ছিটেফোঁটাও অস্তিত্ব নেই। ফলে ফাঁকা জায়গায় বর্তমানে কাঁচা হলুদের চাষ করছেন হাজরা পরিবারের লোকজন। ৭৮তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে এই স্থানের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্থানীয় বিধায়কের দ্বারস্থ হন তাঁরা। বিধায়ক সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ওই জায়গাটির যাতে ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ এবং স্মৃতিসৌধ করা যায় দ্রুত তার ব্যবস্থা নেব। উনি আমাদের জেলার গর্ব। বাম আমলে না হলেও আমরা এই কাজ করব।

Latest article