কনস্টিপেশন বা গোদা বাংলায় কোষ্ঠকাঠিন্য। এই শব্দটা বলতে গেলেই সংকুচিত হয়ে যান সবাই। অন্যের হাস্যাস্পদ হবার ভয়ে কনস্টিপেশনে ভোগা রোগীরা এই সমস্যাকে নিঃশব্দেই বহন এবং সহন করে নেন। কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্য এক বড়ধরনের শারীরিক সমস্যা বা জটিলতা। একে বাড়তে না দেওয়াই ভাল। কারণ এর ফলে আসতে পারে এমন অনেক রোগ যা সহজে সারে না। যে রোগ আপনার সারাজীবনের ভোগান্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে। কোনও ব্যক্তি যখন সহজে মলত্যাগ করতে পারেন না, সাধারণত এক থেকে দুই দিন পরপর মলত্যাগ করেন এবং মল শুষ্ক ও শক্ত হয়, সে অবস্থাকেই কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়।
চিকিৎসকদের মতে, কেউ যদি সপ্তাহে তিনবারের মতো মলত্যাগ করেন তখন সেই অবস্থাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। অন্যান্য ঋতুর চেয়ে শীতকালে কোষ্ঠকাঠিন্য একটু বেশি দেখা দেয়।
আরও পড়ুন-১০৫ মহিলাকে আর্থিক সহায়তা রাজ্যের
কেন হয় কোষ্ঠকাঠিন্য
খাবারে আঁশ বা ফাইবারের পরিমাণ কম থাকলে বা খুব কম জল খেলে তাঁদের এই সমস্যা দেখা দেয়। বৃহদন্ত্র খাবার থেকে জল শোষণ করে নেয়। এর ফলে মল শুষ্ক ও শক্ত হয়ে যায়। বৃহদন্ত্রের চারটি অংশ আছে। এর মধ্যে সিগময়েডে সবচেয়ে বেশি ও শেষবারের মতো জল শোষিত হয়। তাই মল যখন বের হয়, তখন প্রথম অংশের মলটুকু তুলনামূলক বেশি শুষ্ক ও শক্ত হয়। মল বৃহদন্ত্রে যত বেশি সময় থাকবে, তত বেশি জল শোষিত হবে এবং মল আরও বেশি শুষ্ক ও শক্ত হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের বহুবিদ জটিল কারণ রয়েছে যেমন—
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোক হলে ভীষণ কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।
ডায়াবেটিস, হাইপোথাইরয়ডিজম থাকলে এটা হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
অন্ত্রের কোনও গুরুতর সমস্যা, টিউমার ইত্যাদির কারণে হতে পারে।
বিষণ্ণতা, মানসিক অবসাদও কিন্তু কোষ্ঠবধ্যতার অন্যতম কারণ।
চা-কফি, ফাস্ট ফুড ও ভাজাপোড়া খাবার বেশি গ্রহণ করাও কারণ।
যাঁরা খুব অ্যালকোহল নেন তাঁদের কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
বেশ কিছু ওষুধ রয়েছে যেমন ক্যালসিয়াম, আয়রন, অ্যালুমিনিয়াম সমৃদ্ধ অ্যান্টাসিড, অ্যান্টিডিপ্রেসেনড এছাড়া আরও কিছু জটিল রোগের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।
এছাড়া খাদ্যনালির কিছু জটিল রোগেও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা যায়।
অনিদ্রা থেকে কোষ্ঠকাঠিন্য হবার সম্ভাবনা থাকে।
যাঁরা জল বা জল জাতীয় পানীয় খুব কম খান তাঁদের কোষ্ঠকাঠিন্য থাকা কিন্তু আম-বিষয়।
মেয়েরা কোষ্ঠবধ্যতায় বেশি ভোগেন
নারীদের ঋতুস্রাবের সময়, গর্ভাবস্থায় কিংবা রজঃনিবৃত্তির সময় শরীরের ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোনের মাত্রায় স্বাভাবিক কিছু পরিবর্তন ঘটে যা পরিপাকতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে। এ ছাড়া গর্ভাবস্থার শেষের দিকে জরায়ু প্রসারিত হয়ে অন্ত্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।
থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা পুরুষের তুলনায় নারীদের প্রায় ৮ গুণ বেশি। থাইরয়েড হরমোন কমে গেলে বা হাইপোথাইরয়েডিজম হলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।
পুরুষদের চেয়ে নারীরা সাধারণত বেশি বিষণ্ণতায় ভোগেন। এ কারণে পরিপাকতন্ত্রের স্বাভাবিক গতি কমে যাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।
আইবিএস রোগীর ক্ষেত্রে
আইবিএস-এ ভুগছেন যাঁরা তাঁদের কারও ডায়ারিয়ার প্রবণতা বেশি হয় আবার কারও কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রবণতা বেশি হয়। যাঁদের কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রবণতা তাঁদের দ্রবণীয় ফাইবার খাবার পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ এগুলো কম গ্যাস উৎপন্ন করে। সাদা ভাত, সাদা রুটি খাবেন না।
একটানা তিনমাসের বেশি কোষ্ঠকাঠিন্য স্থায়ী থাকলে পাইলস বা অর্শ অবধারিত। অ্যানাল ফিশার হতে পারে, মলদ্বার অনেক সময় বেরিয়ে আসে, পেটফাঁপা এবং অরুচির মতো দীর্ঘস্থায়ী কিছু জটিলতা দেখা দেয়।
আরও পড়ুন-দু’দিকে জেটি তৈরি শেষ করেছে রাজ্য জলপথ পরিবহণ দফতর, খুলে যাচ্ছে নবদ্বীপ-মায়াপুর নয়া লঞ্চ-রুট
কী করবেন/ করবেন না
আপেল, পাকাকলা, নাশপাতি ও আঙুরে রয়েছে যথেষ্ট আঁশ বা ফাইবার— এছাড়াও পাকা পেঁপে, পাকা বেলের শরবত ও অ্যালোভেরা জুস— এই ধরনের খাদ্য কোষ্ঠকাঠিন্যের খুব কার্যকরী দাওয়াই। এছাড়া ওটস বা বার্লি, রাই খেলেও খুব উপকার মেলে।
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ জল সঙ্গে ফলের রস অর্থাৎ জল জাতীয় পানীয় বা খাদ্য বেশি করে খান। আর জলের মতো তরলের সঙ্গেই আরও একটা ঘন যেমন মধু, টকদই, বেলের শরবত, পেঁপের শরবত, আখের রস পান করুন।
সব ধরনের শাক বেশি খেতে হবে। যেমন পুঁইশাক, পালংশাক, লালশাক, কচুশাক, কলমি শাক ইত্যাদি। সবুজ সবজি বেশি করে খান। এই শীতকালীন মরশুমি সবজি কোষ্ঠকাঠিন্যে খুব উপকারী।
লাল আটা, লাল চাল খান, অনেকটাই উপকার হবে।
সমস্যা-মুক্ত হতে রাতে শোবার আগে ইসবগুলের ভুসি সপ্তাহে দুদিন বা চিয়াসিড সকালে খেতে পারেন খুব উপকারী। চিয়া রাতে একগ্লাস জলে দু-চামচ ভিজিয়ে সকালে খাবেন
পরিপাকতন্ত্রের ভাল ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত টক দই খেতে হবে।
চা-কফি যাঁরা খুব বেশি পরিমাণে খান তাঁদের কিন্তু কনস্টিপেশন মাত্রা ছাড়াতে পারে তাই কমিয়ে ফেলুন।
গরু বা খাসির মাংস এড়িয়ে চলতে হবে।
রান্নায় মশলার পরিমাণ কমাতে হবে। কষিয়ে রান্নার চেয়ে হালকা মশলাযুক্ত রান্না করা খাবার খেতে হবে।
শুকনো খাবার সারাদিনে কম খান এতে শরীর আরও বেশি শুকিয়ে যায় বিশেষত শীতকালে যেমন মুড়ি, চিঁড়ে, বিস্কুট, পাউরুটি ইত্যাদি।
নুডলস, পাস্তা, ভাজাভুজি, চকোলেট খুব বেশি না খেলেই ভাল।
যে কোনও অ্যানিমাল প্রোটিন বিশেষ করে মাটন, হ্যাম, বিফ এগুলো কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগায়। তাই যাঁদের কনস্টিপেশন আছে তাঁরা মাংসটা একটু এড়িয়ে চলুন।
ফাইবার কম এমন খাবার এড়িয়ে চলুন। বেশি ময়দা খাবেন না।
কোষ্ঠকাঠিন্যের কিছু ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার হল ব্রাসেলস স্প্রাউট, কলা, আপেল, ডুমুর, গাজর, বিট, সিরিয়াল, কালো মটরশুঁটি, ব্রকলি, বেরি, কালো কিশমিশ ইত্যাদি।