মোদির ভারতে রোজই চলছে সংবিধান হত্যা

অন্নদাশঙ্কর লিখেছিলেন, ‘তেলের শিশি ভাঙল বলে খুকুর পরে রাগ করো তোমরা যে সব বুড়ো খোকা ভারত ভেঙে ভাগ করো! তার বেলা!’ সেই সুরে আজ বলতে ইচ্ছে করছে, 'গণতন্ত্র হত্যাকারী বলে ইন্দিরার ওপর রাগ করো, তোমরা যে সব গেরুয়া খোকা গণতন্ত্রকে রোজ মারো! তার বেলা!’ সোজা কথায়, কংগ্রেস আমলের জরুরি অবস্থা মানুষ মেনে নেয়নি। কিন্তু এখন প্রতিদিন গণতন্ত্রকে পদদলিত করা হচ্ছে৷ লিখছেন পার্থসারথি গুহ

Must read

বলি কী দিন পড়ল! চালুনি করে সুচের বিচার। ফ্ল্যাশব্যাকের টাইম মেশিনে জরুরি অবস্থার জমানায় ফেরার বেজায় তাগিদ ‘আদরণীয়’ প্রধানমন্ত্রীজির। কিন্তু প্রায় পঞ্চাশ বছর আগের অতীত খুঁজে বের করতে এত মরিয়া কেন তিনি এবং তাঁর শাগরেদরা?
অবশ্য যাদের কোনও বর্তমান, ভবিষ্যৎ নেই তারা তো অতীতের কবর খুঁড়বে।
সত্যি বলতে, বিগত এগারো বছর কোনও সদর্থক কাজ করেননি মোদিজি অ্যান্ড হিজ টিম। শুধুমাত্র বিদ্বেষ ছড়ানোর নামে ধর্মের আফিম গেলানো ছাড়া? প্রশ্ন জাগছে, ধর্মের নামে সাধারণ ভারতবাসীকে গিনিপিগ বানানোর ল্যাবরেটরিতে আইটেম কি কম পড়িয়াছে? সেজন্যই এতদিন পর প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জুজু দেখাতে হচ্ছে মোদি-শাহকে।

আরও পড়ুন-জাতীয় পতাকার পরিবর্তে গেরুয়া পতাকা বসানোর দাবি শিবরাজনের, নিন্দায় সরব তৃণমূল কংগ্রেস

‘ফকির’-এর ঝোলা থেকে ফের জরুরি অবস্থার বেড়াল সামনে আসছে। জরুরি অবস্থা লাগু ইন্দিরা জমানার একটা অমাবস্যা হলে, মার্কিন চোখরাঙানি উপেক্ষা করে পাকিস্তানের অত্যাচার খর্ব করে স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথ প্রশস্ত করা তো শত পূর্ণিমার জ্যোৎস্না নামিয়ে এনেছে। এখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভয়ে মোদিজি ল্যাজেগোবরে হন, অজ্ঞাত কারণে ভারতীয় সেনার অদম্য লড়াই সত্ত্বেও পাক অধিকৃত কাশ্মীর ফেরানো যায় না। অথচ তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ইন্দিরার অসীম সাহস ও তেজের সামনে মাথা ঝোঁকাতে বাধ্য হয়েছিলেন। মোদিজির খালি মুখেই খালি হ্যান করেগা, ত্যান করেগা। কাজের বেলায় কাজি আর কাজ ফুরোলেই পাজি। এভাবে আর কতদিন?
এখন আবার নিজেদের অপকর্মের প্রোপাগান্ডা অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার নয়া কৌশল নিয়েছে মোদি সরকার। আগামী ২৫ জুন জরুরি অবস্থার স্মৃতি ফেরাতে দেশজুড়ে ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ পালনের কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সেই কর্মসূচিতে শামিল হওয়ার জন্য বিভিন্ন রাজ্যকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ এই মর্মে কেন্দ্রের তরফে ফোন এসেছে রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছেও।
এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে কড়া আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সাফ জানিয়েছেন, বিজেপির আমলে প্রতিদিন গণতন্ত্রের ওপর নির্মম আঘাত নেমে আসছে৷ মুখ্যমন্ত্রী এও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কংগ্রেস আমলের জরুরি অবস্থা মানুষ মেনে নেয়নি। কিন্তু এখন প্রতিদিন গণতন্ত্রকে পদদলিত করা হচ্ছে৷

আরও পড়ুন-বেহালা পর্ণশ্রীতে গণপিটুনিতে মৃত রাজস্থানের বাসিন্দা

পহেলগাঁও-কাণ্ডের পর তৃণমূল-সহ সব বিরোধী দল সোচ্চার হয়েছে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা নিয়ে। যেখানে স্পষ্ট করা হবে ভারতের অবস্থান। কিন্তু সেসব নিয়ে দিল্লির জমিদাররা কর্ণপাত করেন না। পহেলগাঁওয়ের অব্যবহিত পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, বিজেপি নেতা হিসেবে মোদিজিকে আমরা দেখতে পাই বিহারে। তার কিছুদিন পর আবার আমাদের বাংলাতেও। সরকারি প্রকল্পের আবডালে বিহার এবং বাংলায় ভোটের প্রচার করার জন্য তাঁর হাতে অঢেল সময়। কিন্তু সংসদে দাঁড়িয়ে পহেলগাঁও পরবর্তী অবস্থান, ভারত-পাক যুদ্ধ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ নিয়ে কোনও সরকারি তোড়জোড় নেই। এমনকী বিদেশসচিব বিক্রম মিশ্রিকে সামনে রেখে বলানো হচ্ছে, মোদিজি ট্রাম্প সাহেবকে নাকি রীতিমতো ‘দাবড়ে’ দিয়েছেন ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে তাঁর হস্তক্ষেপের মিথ্যে দাবি নিয়ে। অথচ ঠিক তারপরেই আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ফের জোরের সঙ্গে বলেছেন, ভারত-পাক যুদ্ধ তিনিই থামিয়েছেন।
এমতাবস্থায় বিস্মৃতির ইতিহাস ঘেঁটে কংগ্রেস আমলের জরুরি অবস্থাকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে সামনে এনে প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলিকে কবরে পাঠিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে।
প্রসঙ্গত, নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা যবে থেকে দিল্লির মসনদে বসেছেন তখন থেকেই শুরু হয়েছে ভারতবর্ষের গণতান্ত্রিক কাঠামো ভেঙেচুরে তছনছ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ অ-বিজেপি সরকারগুলিকে ভাতে মারার কলাকৌশল। আমাদের রাজ্যেও একশোদিনের কাজ, আবাস যোজনা-সহ গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবার টাকা দিনের পর দিন আটকে রেখে গরিব প্রান্তিক মানুষের সঙ্গে চরম নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিয়েছে দিল্লির স্বৈরাচারী সরকার। যার বিরুদ্ধে দিল্লির মাটিতে যুগান্তকারী আন্দোলন গড়ে উঠেছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে। হাইকোর্টের সাম্প্রতিক রায় স্পষ্ট করেছে বিজেপির প্রতারণার রাজনীতি।
উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় এজেন্সি লেলিয়ে দিয়ে রাজনৈতিক জিঘাংসা চরিতার্থ করে চলেছে বিজেপি। পরবর্তী ক্ষেত্রে অবশ্য আদালতের নির্দেশে একের পর এক তৃণমূল নেতার মুক্তি দিল্লির জমিদারদের মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছে। কথায় বলে, খলের ছলের অভাব হয় না। সাম্প্রদায়িক তাস খেলে ফের রাজ্যকে অশান্ত করার অপচেষ্টায় ব্রতী হয়েছে গৈরিক গোয়েবলসরা। অথচ মাত্র ক’দিন আগে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বিদেশের মাটিতে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের নাম যেভাবে উজ্জ্বল করেছেন তা মানতে বাধ্য হয়েছেন বিজেপির কেষ্টবিষ্টুরাও। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর-সহ সর্বত্র অপারেশন সিঁদুর নিয়ে ভারতের অবস্থান এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধিতার লাইন ব্যাখ্যা করে সেসব দেশের কাছে ভারতবর্ষের নাম গৌরবান্বিত করেছেন তরুণ তুর্কি অভিষেক। অভিষেকের পাশাপাশি ডিএমকে নেত্রী তথা তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী স্টালিনের বোন কানিমোঝি, শরদ পাওয়ার কন্যা সুপ্রিয়া সুলেদের দুরন্ত পারফরম্যান্স নিষ্প্রভ করে দিয়েছে বিজেপির প্রতিনিধিদের।

আরও পড়ুন-যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় ৫ বছরের এক শিশুকে পিটিয়ে খুন

বিজেপি সরকার যেসব রাজ্য তথা বিরোধী রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে সারাক্ষণ অনৈতিক ষড়যন্ত্রের জাল বোনে তাদের হাত ধরেই বিদেশের বৈতরণী পার হতে হয়। এ ঘোর বাস্তব। দলটা ব্রাজিল। কিন্তু গোল করে জেতাচ্ছেন মেসি। ব্যাপার-স্যাপার অনেকটা সেরকম।
অপদার্থ মোদি সরকার যোগ্য বিরোধীদের প্রাপ্য সম্মানটুকুও দিতে চান না।

Latest article