মণীশ কীর্তনিয়া: বাংলা ভাষা ও বাঙালির প্রতি বিদ্বেষের প্রতিবাদে ভাষা আন্দোলনের ডাক দিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে তাঁর স্পষ্ট ঘোষণা, এই প্রতিহিংসামূলক সরকারের একদিনও ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। ছাব্বিশে ২৫০-র বেশি আসনে জিতে এসে তারপর দিল্লিতে পরিবর্তন। জননেত্রীর ডাক, দিল্লিকো বদল ডালো। স্পষ্ট হুংকার দিয়ে বলেন, বাংলা ভাষা ও বাঙালিদের ওপর সন্ত্রাস মেনে নেব না। এই মর্মে দলকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নির্দেশ, আগামী ২৭ জুলাই থেকে নয়া ভাষা আন্দোলন শুরু করতে হবে। প্রতি শনি-রবিবার এই ভাষা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল-মিটিং করতে হবে। সাংসদদেরও নির্দেশ দিয়েছেন, গান্ধীমূর্তির সামনে প্রতিবাদ ধর্নায় বসতে। সোমবার একুশের মঞ্চ থেকে বিজেপিকে দিল্লি থেকে উৎখাতের ডাক দিয়ে তৃণমূলনেত্রীর বার্তা, বিজেপির দিল্লিরাজকে ভাঙো। বদল ডালো। যারা বাংলাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে তাদের আমরা সম্মান দিই না, অসম্মানও করি না। কিন্তু মনে রাখবেন বাংলাভাষার উপর যে সন্ত্রাস, বাংলার লোকেদের যদি গ্রেফতার করা হয় বাংলা বলার জন্য তাহলে জেনে রাখুন এই লড়াই দিল্লি পর্যন্ত যাবে। বাংলাভাষার উপর চলছে বিরাট সন্ত্রাস। কে কী খাবে সব ওরা ঠিক করে দিচ্ছে। বাংলা এটা মানবে না। সব মানুষের অধিকার বাংলায় রক্ষিত হবে। আপনাদের যে আইন তা আমরা বদলে দেব। বাংলাভাষায় কথা বলার জন্য লোকেদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়েছে, আমাদের কাছে পুরো তথ্য আছে। আমরা সব ভাষাকে সম্মান করি। কিন্তু আপনি বাংলা ভাষার উপর সন্ত্রাস কেন চালাচ্ছেন। বাংলা স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছিল, বাংলা নবজাগরণ ঘটিয়েছিল। বাংলা যা পারে আর কেউ তা পারে না। তাই মনে রাখবেন বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি।
আরও পড়ুন- আর জল নয়, চোখ থেকে আগুন বেরবে : দলনেত্রী
১৯৯৩ সালের আন্দোলনকে মনে করিয়ে ২০২৫-এর মঞ্চে নেত্রী বলেন, একুশে জুলাই নো আইডি কার্ড নো ভোট— এই আন্দোলন যদি না হত আজকে আপনারা ভোটার আইডি কার্ড পেতেন না। সেদিন এই রাস্তায় রক্ত ঝরেছিল। ১৩টি অমূল্য প্রাণ তাঁদের জীবন দিয়ে গণতন্ত্রকে জিতিয়ে দিয়ে গিয়েছিল। আজকের যারা ছাত্রযৌবন তাঁরা জেনে রাখুন অনেক সংগ্রাম পেরিয়ে অনেক অত্যাচার সহ্য করে আজ এই জায়গায় এসে পৌঁছেছি। এই সংগ্রাম সেদিন শেষ হবে যেদিন দিল্লিতে পরিবর্তন করে বিজেপিকে রাজনৈতিকভাবে বিসর্জন দিতে পারব। যতবার বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা বাংলায় এসে বাংলা-বিরোধী বার্তা দিয়েছেন ততবার বাংলার মানুষ তাঁদের বিসর্জন দিয়েছে। সাফ কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেই ইতিহাস মনে করিয়ে নেত্রীর বার্তা, আগেরবার বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছিল। আর এবার নোটিফিকেশন পাঠিয়েছে। একমাসের জন্য যাকেই সন্দেহ হবে তাকেই জেলে রাখা হবে। আজ এক হাজারের উপর লোক কাউকে বাংলাদেশে নিয়ে গিয়েছে, কাউকে রাজস্থান, কাউকে ছত্তিশগড়ে, কাউকে মধ্যপ্রদেশে এমনকী ওড়িশার জেলে নিয়ে গিয়েছে। জুলাই মাসে দিয়েছে বেআইনি বাংলাদেশি নাগরিকদের, রোহিঙ্গাদের ডিপোর্টেশনের কাজ শুরু করতে হবে। আমাদের বলছে সেন্ট্রাল ফোর্স থেকে নোডাল অফিসার তৈরি করতে, যারা ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেবে। বাংলার পরিচয় থেকে বাদ দেবে। এসব বাংলা বরদাস্ত করবে না। আমরা ওদের জব্দ করব স্তব্ধ করব। এদিন মঞ্চে দুই শহিদ পরিবারকে সম্মান জানান নেত্রী। এছাড়াও দলকে একগুচ্ছ কর্মসূচিও দিয়ে দিয়েছেন। এদিন একুশের ভিড় অতীতের সব রেকর্ডকে ভেঙে দিয়েছে। মঞ্চের সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। সঙ্গে ছিলেন অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম , শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়সহ অন্যান্য রাজ্যের নেতা-নেত্রী, বিধায়ক, সাংসদ, মন্ত্রীরা। এছাড়াও ছিলেন দলের অন্যান্য পদাধিকারীরা। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টরা। এই প্রচণ্ড গরমকে উপেক্ষা করেই লক্ষ লক্ষ মানুষ নেত্রীর কথা শুনেছেন। আর বাড়ির পথ ধরেছেন বিজেপিকে দেশ থেকে উপড়ে ফেলার অঙ্গীকার নিয়ে।