প্রতিবেদন : রুশ সেনার নির্মমতার সাক্ষী কিয়েভ। আক্ষরিক অর্থেই মানবিকতার সঙ্কট। পুড়ে আংরা হয়ে গিয়েছে বাড়িঘর। গাছের সারি পাতাহীন নিষ্প্রাণ। বোমার আঘাতে ধ্বস্ত রাস্তায় বড় বড় গহ্বর। আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা পচাগলা লাশ। কারও কারও হাত পিছমোড়া করে বাঁধা। মাথায় গুলির দগদগে ক্ষত। বরফশক্ত শরীরজুড়ে কষ্ট আর অসহায়তার রক্তাক্ত ছাপ।
আরও পড়ুন-ইমরানের জায়গায় গুলজারের নাম
ইউক্রেনের রাজধানীর ছবি দেখে স্তম্ভিত গোটা দুনিয়া৷ নিন্দার ঝড় সর্বত্র৷ ইতিমধ্যেই ৪১০ জন হতভাগ্যের দেহ উদ্ধার হয়েছে কিয়েভের রাস্তায়। বিবিসির খবর, রুশ সেনাদের হঠিয়ে যে এলাকাগুলো পুনরুদ্ধার করছে, সেখানেই চোখে পড়ছে মৃত্যুমিছিল। রাশিয়ার যোদ্ধাদের পৈশাচিক অত্যাচারে বেঘোরে মারা গিয়েছেন যাঁরা, তাঁদের সবাই প্রায় সাধারণ নাগরিক। দাবি করছেন, কিয়েভের প্রসিকিউটর জেনারেল ইরিনা ভেনেডিকতোভা। পাঁচ সপ্তাহ যুদ্ধের পর রাশিয়া অবশেষে পিছু হঠেছে। কিছু এলাকা থেকে সরিয়ে নিয়েছে সেনা। এর পরেই ইউক্রেন বাহিনী রাজধানী কিয়েভের আশপাশের কমবেশি ৩০টি জনপদ পুনরুদ্ধার করেছে। মিডিয়ার চোখের সামনে ফুটে উঠেছে মর্মান্তিক দৃশ্য।
আরও পড়ুন-ফুঁসছে জনতা, মন্ত্রিসভায় গণপদত্যাগ, বিপাকে পড়ে সর্বদলীয় সরকার গড়ার ডাক শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের
কিয়েভ থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের ছোট্ট শহর বুচার ছবি দেখে স্তম্ভিত বিশ্ব। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে পড়ে থাকা দেহের স্তূপ। কারও হাত উড়ে গেছে। কেউ সাইকেলের উপর বসা অবস্থাতেই মারা গিয়েছেন। কারও হাতের আঙুল থেকে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে চামড়া, মাংস। কমপক্ষে কুড়িজনের পিছমোড়া করে হাত বাঁধা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। রুশ সেনা প্রায় এক মাস দখল করে রেখেছিল এই শহর। বন্দি নাগরিকদের উপর অমানুষিক নির্যাতন চলেছে। চলেছে গণহত্যা। গণধর্ষণ। গণকবরও দেওয়া হয়েছে বহু মানুষকে। বুচার মেয়র অ্যানাতোলি ফেদরুক বলছেন, মৃতের সংখ্যা ন্যূনতম ২৮০। লাশের পাহাড়ে রয়েছে শিশুরাও।
আরও পড়ুন-সেরা দলে স্মৃতিরা নেই
একটি চার্চের আঙিনায় গণকবরের হদিশ মিলেছে। ইউক্রেনের বিদেশমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবার দাবি, আমরা এখনও দেহ উদ্ধারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। নিহত কয়েকশো। নির্দিষ্ট করে সংখ্যা বলতে পারব না। রাস্তায় পড়ে রয়েছে অসংখ্য দেহ। ওরা নির্বিচারে হত্যালীলা চালিয়েছে। যথারীতি রাশিয়া এই গণহত্যার কথা স্বীকার করেনি। এই বীভৎসতার মধ্যেই ভগ্নস্তূপ ইউক্রেনের কোনও গোপন অঞ্চলে বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। সেখান থেকেই দেশ ও পরিবারের খোঁজখবর রাখছেন। নিরাপদে থাকলেও উদ্বেগে অনিদ্রায় ভুগছেন তিনি। সূত্রের খবর, রাজধানী কিয়েভেই লুকিয়ে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান। তাঁদের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের দেখা হয় কি না, তা নিশ্চিত নয়। গত সপ্তাহে পাঁচ রুশ সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জেলেনস্কি। শর্ত ছিল একটাই, কোনওরকম সংযোজন-বিয়োজন ছাড়াই তা প্রকাশ করতে হবে। তাঁর এই সাক্ষাৎকারগুলি বহু রুশ নাগরিকেরও মন জয় করেছে।