প্রতিবেদন : নেপালে গণঅভ্যুত্থানের নেপথ্যে কি শুধুই সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞা আর গণতন্ত্রের আড়ালে শাসকপক্ষের সীমাহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমজনতার ক্ষোভের বিস্ফোরণ? নাকি বিলুপ্ত হওয়া রাজতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার প্রয়াস? ২০০৮ সালের ২৮ মে নেপালে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়েছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে এক দুর্বার রক্তক্ষয়ী গণ আন্দোলনের পরিণতিতে। ২৪০ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে নেপালকে ফেডারেল ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক হিসেবে ঘোষণা করে নেপালের নবনির্বাচিত গণপরিষদ। এর আগে ২০০৬ সালের এপ্রিলে লোকতন্ত্র আন্দোলনের নামে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনের চাপে সংসদ পুনর্বহাল করতে বাধ্য হন নেপালের রাজা। সাত দলের জোট সরকারের হাতে দ্রুত বিলীন হতে থাকে রাজার ক্ষমতা। তারপরে ২০০৮ সালে রাজতন্ত্রের চূড়ান্ত বিলুপ্তির ফলে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় হিমালয়ের কোলের এই দেশটিতে।
আরও পড়ুন-কমিউনিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে বেনজির বিদ্রোহ,তরুণদের আন্দোলনে নেপালে ওলি সরকারের পতন
কিন্তু রাজতন্ত্রের অবসানের পরে গণতন্ত্রের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন নেপালের আমজনতা তা কিন্তু আদৌ পূরণ হয়নি। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ২০০৮ থেকে এখনও পর্যন্ত নেপালে সরকার বদল হয়েছে ১৩ বার। অর্থাৎ শাসনক্ষমতায় এসেছে ১৩টি সরকার। স্বাভাবিকভাবেই বিপন্ন হয়েছে স্থিতিশীলতা। ফলে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে সাধারণ মানুষের। সবচেয়ে বড়কথা, প্রধানমন্ত্রী ওলির জমানায় লাগামছাড়া হয়ে উঠেছে সরকারের সর্বস্তরে দুর্নীতি। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলেছে স্বজনপোষণ। এই সীমাহীন দুর্নীতি ব্যাপক আঘাত হেনেছে দেশের অর্থনীতির ভিতে। এরই অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে দেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে অভূতপূর্ব বেকারত্ব এবং কর্মহীনতা। রুদ্ধ হয়েছে কর্মসংস্থানের সমস্ত পথ। গত কয়েকদিনের গণআন্দোলনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ ছাত্র-যুবর মুখেই প্রতিধ্বনিত হয়েছে এই নিয়ে ওলি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ। সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারের নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভের বারুদের স্তুপে অগ্নিসংযোগ করেছে মাত্র। তার উপরে সরকারের অমানবিক দমননীতি ঘি ঢেলেছে ক্ষোভের আগুনে। আন্দোলনকারীদের একটাই প্রশ্ন, এই গণতন্ত্রই কি আমরা চেয়েছিলাম?
আরও পড়ুন-বাড়িতে আগুন লাগাল বিদ্রোহীরা, ঝলসে মারা গেলেন প্রাক্তন মন্ত্রীর স্ত্রী
আর এই আন্দোলনের আড়াল নিয়েই জেগে ওঠার চেষ্টা করছে অবলুপ্ত রাজতন্ত্র। যার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল গত মার্চেই। ২৮ মার্চ রাজতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে কাঠমান্ডুর এক সমাবেশে নেপালের সাবেক রাজার সমর্থকদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় পুলিশের। প্রাণ হারান দু’জন। বহু পুলিশকর্মী গুরুতর জখম হন। কাঁদানে গ্যাস, জলকামানও আটকাতে পারেনি হিংসাত্মক জনতাকে। নেপালকে হিন্দু রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ফিরিয়ে দেওয়ারও দাবি ওঠে রাজভক্তদের সমাবেশে। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হল, যে মাওবাদীরা একদিন রাজতন্ত্রের অবসানের দাবিতে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম করেছিলেন, তাদেরই এক নেতা দূর্গা পাসারি এখন রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দাবি তুলেছেন হিন্দু রাষ্ট্রের।