প্রতিবেদন : দেশের অভূতপূর্ব আর্থিক সঙ্কট মোকাবিলা করতে না পেরে ইস্তফা দিল শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভা। তবে প্রধানমন্ত্রী পদে আপাতত বহাল থাকছেন চিনপন্থী মাহিন্দা রাজাপক্ষে। আপাতত কুর্সি টিকে গেলেও দেশের রাজনীতিতে ক্রমশই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন রাজাপক্ষে।
বেশ কয়েকদিন ধরেই শ্রীলঙ্কার আর্থিক পরিস্থিতি একেবারেই বেহাল। প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। একটা ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। চালের দাম কেজি প্রতি প্রায় ২৫০ টাকা। এক কেজি গুঁড়ো দুধ কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ২০০০ টাকা। এক কেজি গম এবং এক কেজি চিনির দাম পড়ছে যথাক্রমে ২০০ ও ২৫০ টাকা। প্রতি কেজি নারকেল তেলের দর ৮৫০ টাকা। পাশাপাশি প্রতিটি ওষুধের দামও আগুন হয়ে গিয়েছে। গত এক মাসের মধ্যে খাদ্যপণ্যের দাম ৩০ শতাংশ বেড়েছে বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন-সেরা দলে স্মৃতিরা নেই
তবে টাকাই শেষ কথা নয়, যাঁদের টাকা আছে তাঁরা দোকানে গিয়ে জিনিস পাচ্ছেন না। দেশের মানুষের আয়ু তলানিতে এসে ঠেকেছে। আর্থিক মন্দার কারণে দেশের শিল্পসংস্থাগুলি ধুঁকছে। বহু শিল্পসংস্থা ইতিমধ্যেই ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে জীবনধারণ করতে নাভিশ্বাস উঠেছে দ্বীপরাষ্ট্রের মানুষের। এই অবস্থায় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ক্রমশই বাড়ছে। সাধারণ মানুষ পথে নেমে মাহিন্দা সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। সেই বিক্ষোভ সামাল দিতে জারি করা হয়েছিল জরুরি অবস্থা। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি। প্রবল বিক্ষোভের জেরে রবিবার রাতেই শ্রীলঙ্কা মন্ত্রিসভার ২৬ জন মন্ত্রী পদত্যাগ করেন। পদত্যাগী মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী রাজাপক্ষের ছেলে নমল রাজাপক্ষে। নমলের পদত্যাগের পর শ্রীলঙ্কায় গুজব ছড়ায় এবার প্রধানমন্ত্রীও পদত্যাগ করছেন।
আরও পড়ুন-কোরিয়া ওপেন নতুন পরীক্ষা সিন্ধু-লক্ষ্যর
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অফিস সূত্রে ওই খবরকে গুজব বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে এবং প্রধানমন্ত্রী পদে তাঁর ছোটভাই মাহিন্দা রাজাপক্ষে সে দেশের রাজনীতিতে চিনপন্থী হিসেবেই পরিচিত। দেশ চালাতে ইতিমধ্যেই রাজাপক্ষে সরকার বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছে। অর্ধেকের বেশি ঋণ চিন থেকে নেওয়া। সেই ঋণের সুদ ও আসল মেটাতে গিয়ে ভেঙে পড়েছে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি। বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর কখনও এ ধরনের অভূতপূর্ব সঙ্কটে পড়েনি এই দ্বীপরাষ্ট্র। বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার নিঃশেষ। ফলে তারা তেল, গ্যাসের মতো অতিপ্রয়োজনীয় জিনিস আমদানি করতে পারছে না। গত কয়েকদিন ধরে দেশে ১৪-১৫ ঘণ্টা সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। গণপরিবহণ হয়ে পড়েছিল অচল। কিন্তু ভারতের পাঠানো ডিজেলে পরিস্থিতি সাময়িক সামাল দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে এই দেশ। পাশাপাশি ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে খাবার, ওষুধ পাঠানো হয়েছে। আপাতত ভারতের সাহায্যে কোনওরকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দিন কাটাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। জীবন বাঁচাতে শ্রীলঙ্কার বেশকিছু মানুষ ইতিমধ্যেই ভারতে চলে আসার চেষ্টা চালাচ্ছেন। অনেকেই পৌঁছে গিয়েছেন তামিলনাড়ু।
আরও পড়ুন-মোহনবাগানের নতুন তাঁবুর উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী
এদিকে, সোমবার বিপাকে পড়ে দেশের পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধ সরকার গড়ার ডাক দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে৷ তাঁর আর্জি, ঐক্যবদ্ধ সরকার গড়ে চলতি পরিস্থিতি থেকে মুক্তির পথ খোঁজা হোক৷
এদিন শ্রীলঙ্কার শেয়ারবাজারে নথিভুক্ত প্রতিটি সংস্থার শেয়ারসূচক হু হু করে পড়তে থাকে৷ তারপর এদিন পদত্যাগ করেন দেশের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের গভর্নর অজিথ নিভার্ড কারভাল৷ শুধু দেশে নয়, বিদেশের বিভিন্ন শহরেও রাজপক্ষের পরিবারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হচ্ছে৷ লন্ডন, নিউইয়র্ক, হেলসিঙ্কির মতো একাধিক শহরে শ্রীলঙ্কার বংশোদ্ভূতরা সে দেশের দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন৷ সকলের অভিযোগ, দেশের এই অভূতপূর্ব দুর্দশার জন্য দায়ী প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষে ও তাঁর পরিবার৷ কারণ, তাঁরাই দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নীতি–নির্ধারণ করছেন বহু বছর ধরে৷ সব ক্ষমতা এই পরিবারেরই কুক্ষিগত৷