মায়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম থেকে কয়েক হাজার কোটির সাইবার প্রতারণা

Must read

প্রতিবেদন: বেছে বেছে ভারতীয়দের নিশানা করে সাইবার কেলেঙ্কারির (Cyber crime) একটি বড় চক্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি থেকে মে) অনলাইন কেলেঙ্কারিতে প্রায় ৭,০০০ কোটি টাকা ক্ষতির অর্ধেকেরও বেশি মায়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস এবং থাইল্যান্ড থেকে পরিচালিত নেটওয়ার্কগুলির দ্বারা হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম (Cyber Crime) কোঅর্ডিনেশন সেন্টার (১৪সি) দ্বারা সংকলিত তথ্য অনুযায়ী, এই প্রতারণা নেটওয়ার্ক প্রায়শই উচ্চ-নিরাপত্তা যুক্ত অঞ্চল থেকে পরিচালিত হয়, যা চিনা অপারেটরদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বলে জানা যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তদন্তে উঠে এসেছে যে মানবপাচার চক্রের মাধ্যমে পাচার হওয়া মানুষ, যার মধ্যে ভারতীয়রাও রয়েছে, তাদের দিয়েই জোর করে এইধরনের অপরাধমূলক কাজ করানো হয়। এবছরের সাইবার জালিয়াতির একটি বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে যে বিদেশ থেকে পরিচালিত সাইবার অপরাধীরা ভারতীয় অর্থনীতিকে নিশানা করছে। আশঙ্কার বিষয় হল, এই ধরনের অপরাধের কারণে আমাদের দেশ প্রতি মাসে প্রায় ১,০০০ কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
এক সরকারি কর্মকর্তা সিটিজেন ফিনান্সিয়াল সাইবার ফ্রড রিপোর্টিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিএফসিএফআরএমএস)-এর তথ্য উদ্ধৃত করে বলেন, জানুয়ারিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াভিত্তিক দেশগুলি থেকে ১,১৯২ কোটি টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ৯৫১ কোটি টাকা, মার্চে ১,০০০ কোটি টাকা, এপ্রিলে ৭৩১ কোটি টাকা এবং মে মাসে ৯৯৯ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। সিএফসিএফআরএমএস হল ১৪সি -এর সঙ্গে যুক্ত একটি ব্যবস্থা যা নাগরিকদের আর্থিক সাইবার জালিয়াতির ঘটনা রিপোর্ট করতে এবং পদক্ষেপ করতে সহায়তা করে। কেন্দ্রের এক ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে কম্বোডিয়ার ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা সম্প্রতি দিল্লিতে ভারত সরকারের প্রতিনিধিদের সাথে দেখা করেছেন এবং এই সাইবার কেলেঙ্কারি মোকাবিলায় একটি কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। বিদেশমন্ত্রক আয়োজিত এবং কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলির কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে কম্বোডিয়ার কর্মকর্তারা তাদের দেশে এই কেলেঙ্কারি কেন্দ্রগুলির সঠিক ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক ভাগ করে নেওয়ার অনুরোধ করেছেন যাতে তারা ব্যবস্থা নিতে পারে। গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট সাহায্য অনুযায়ী, ভারত সরকার কম্বোডিয়ায় অন্তত ৪৫টি, লাওসে পাঁচটি এবং মায়ানমারে একটি এমন আর্থিক কেলেঙ্কারি চিহ্নিত করেছে। ভারতীয় ছাড়াও আফ্রিকান দেশ, পূর্ব এশিয়ার দেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ, দক্ষিণ এশিয়া, মধ্য এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার মানুষকে এই কেলেঙ্কারিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। একটি তদন্তে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে পরিচালিত তিন ধরনের প্রধান সাইবার অপরাধ জালিয়াতি প্রকাশ পেয়েছে। এগুলি হল স্টক ট্রেডিং অথবা বিনিয়োগ কেলেঙ্কারি, ডিজিটাল গ্রেফতারি এবং টাস্কভিত্তিক ও বিনিয়োগ-ভিত্তিক কেলেঙ্কারি। ভারত সরকার এই অপারেশনগুলির জন্য ভারতীয়দের নিয়োগকারী বেশ কয়েকজন এজেন্টকেও ট্র্যাক করেছে, যার মধ্যে মহারাষ্ট্র (৫৯) থেকে সবচেয়ে বেশি এজেন্টের হদিশ মিলেছে। এছাড়াও তামিলনাড়ু (৫১), জম্মু ও কাশ্মীর (৪৬), উত্তরপ্রদেশ (৪১) এবং দিল্লি (৩৮) থেকে এজেন্ট নিয়োগ করা হয়েছে। এই এজেন্টদের তথ্য থেকে দেখা যায় যে তারা লাওস, মায়ানমার এবং কম্বোডিয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি লোক নিয়োগ করছে। এর আগে জানা যায়, ৫,০০০-এরও বেশি ভারতীয়কে কম্বোডিয়ায় আটকে রাখা হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সেখানে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে সাইবার জালিয়াতি চালাতে বাধ্য করা হচ্ছে। সরকারি অনুমান অনুযায়ী, এই বছরের মার্চের আগের ছয় মাসে ভারতীয়দের অন্তত ৫০০ কোটি টাকা প্রতারণা করা হয়। কেন্দ্র তখন বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এবং ত্রুটিগুলি চিহ্নিত করতে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় প্যানেল
গঠন করে। প্যানেলটি ব্যাংকিং, অভিবাসন এবং টেলিকম সেক্টরের ত্রুটিগুলি চিহ্নিত করে। বিভিন্ন রাজ্যের পয়েন্ট অফ সেল এজেন্টদের বিরুদ্ধে কথিত ক্লোনড সিম কার্ড জারির জন্য এফআইআর দায়ের করে সিবিআই।

আরও পড়ুন: রাজধানীর নাকের ডগায় ভুয়ো দূতাবাস কীভাবে চলে রমরমিয়ে?

Latest article