কালীপুজোয় বাজার হারাচ্ছে ডাকিনী-যোগিনী

Must read

সৌম্য সিংহ : একটা সময় ছিল যখন নিশুতি রাতে কালীপুজো মানেই একটা কেমন যেন গা ছমছমে ভাব। সত্যিকথা বলতে কী, অমাবস্যার রাতে এই পরিবেশটা ছাড়া শক্তির আরাধনার কথা যেন ভাবাই যেত না। বারোয়ারি পুজোর অনেক মণ্ডপেও ঠিক এই ব্যাপারটাই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা হতো। অন্ধকার শ্মশান, প্রবল দুর্যোগের রাতে চিতায় দাহ করা হচ্ছে মৃতদেহ, ঘনঘন বাজ পড়ছে, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, চলছে তন্ত্রসাধনা, কাপালিকের পদচারণা— আর তাই দেখে একেবারে আহ্লাদে আটখানা ডাকিনী-যোগিনী, ভূতপেত্নি, পিশাচের দল। শেওড়া গাছের নিচে ক্লান্তিহীন নৃত্য-সাধনায় কঙ্কাল। আজ একেবারেই যে হারিয়ে যাচ্ছে এইসব দৃশ্য, তা নয়। তবে আগ্রহটা প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। তাই একদম বাজার খারাপ যাচ্ছে ডাকিনী-যোগিনী, ভূতপেত্নিদের। ডিম্যান্ড কমছে ক্রমশই। স্বাভাবিকভাবেই চিন্তার ভাঁজ পড়েছে শিল্পীদের কপালে। কারণটা কী? ডাকিনী-যোগিনী আর শৃগালপুজো শক্তি আরাধনার অঙ্গ হিসেবে শাস্ত্রে স্বীকৃতি পেলেও কোভিড পরিস্থিতিতে আর্থিক সঙ্কট তাতে বাধ সেধেছে।

আরও পড়ুন : পেট্রোল ও ডিজেলের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি ব্যাটারিচালিত একহাজার বাস আসছে কলকাতায়

তা ছাড়া এখনও অনেকের আনন্দ বা ভক্তির কারণ হলেও কালীপুজোর রাতে ডাকিনী-যোগিনীদের সগৌরব উপস্থিতি কিংবা কাল্পনিক তাণ্ডব এখন আর সেভাবে মানুষের মনে ঢেউ তোলে না। কেউ কেউ আবার পাত্তাই দেয় না ডাকিনী-যোগিনী কিংবা ভূত-পেত্নিদের দাঁতখিঁচুনি বা খিলখিল হাসিকে। ফলে কুমোরটুলিতে অর্ডারও কমছে। কেউ কেউ আবার পুজোর নিয়মরক্ষার খাতিরে সাইজ ছোট করতে বলছেন। মন্দা এসেছে রাক্ষস-রাক্ষসীদের বাজারেও। শিয়াল নেহাত অসুরের রক্ত পান করে তার পুনর্জন্ম প্রতিরোধ করেছিল তাই, না হলে এই মন্দার বাজারে তার কথাও ভুলতে বসেছে অনেকেই। প্রতিমাশিল্পীদের মতো কিন্তু খুব একটা নিপুণ হাত দরকার হয় না মা কালীর সহচরদের মূর্তি গড়তে। যে কোনও দেবদেবীর পরিত্যক্ত কাঠামো তুলে এনে তাতে কাদা লেপে কোনওরকমে চুল, দাঁত লাগিয়ে, চোখ এঁকে, কালো রঙ লেপে দিয়ে একটা বীভৎস রূপ দিতে পারলেই কাজ শেষ। কুমোরটুলি লাগোয়া রাক্ষসপাড়ায় তুলনামূলক অদক্ষ হাতে সেই কাজটাই করা হয় অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। কালীপুজোর আগে কয়েকদিন বাড়তি রোজগারের আশায় অনেকেই হাত লাগান এই কাজে। কিন্তু সম্প্রতি দুর্গা-লক্ষ্মী প্রতিমা বিসর্জনের পরে গঙ্গায় ভেসে আসা কাঠামো মেলাই ভার। তা ছাড়া যাঁরা গঙ্গা থেকে কাঠামো সংগ্রহের কাজটা করেন, পরিত্যক্ত কাঠামোর দামটাও বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা। ফলে প্রোডাকশন কস্ট অনেকটাই বেড়ে গেছে। স্বভাবিকভাবেই বাজার হারাচ্ছে ডাকিনী-যোগিনীর দল।

Latest article