গ্রামের রামমন্দিরে প্রবেশ নিষেধ দলিতদের, অধিকার নেই পুজো করার, প্রসাদ পাওয়ারও

Must read

সৌভিক মহন্ত
সাতপিপালিয়া, মধ্যপ্রদেশ থেকে ফিরে
সবকা সাথ, সবকা বিকাশ। হ্যাঁ, নরেন্দ্র মোদির বিজেপির গোটা দেশ জুড়ে শুধু একটাই বার্তা। কিন্তু আদতে কি সত্যিই তেমনটা হচ্ছে। মধ্যপ্রদেশের (Madhya Pradesh- Dalit) চিত্র তো সে-কথা একেবারেই বলছে না। বরং সেখানে ফুটে উঠছে এক বর্ণপ্রথার ভয়ঙ্কর ছবি। যে হিন্দুত্বের ধ্বজা উড়িয়ে গোটা দেশে নানান কথা বলতে শোনা যায় বিজেপির নেতা- নেত্রীদের, সেই বিজেপি শাসিত রাজ্যে বেহাল দশায় হিন্দুরাই। এই শতকেও মন্দিরে প্রবেশ নিষেধ দলিতদের। ভগবান শ্রীরামের পুজোর অধিকারটুকু কেড়ে নেওয়া হয়েছে তাঁদের কাছ থেকে। হ্যাঁ, ডবল ইঞ্জিন সরকার মধ্যপ্রদেশের চিত্র তো এই কথাই বলছে।

দলিত (Madhya Pradesh- Dalit) সমাজের হেমলতা বাই, সুশীলা বাই-রা তাঁদের ভগবানের মন্দিরে উঠতে পারেন না। গ্রামে নতুন রামমন্দির হয়েছে। কিন্তু কড়া নির্দেশ, তাঁরা যেন মন্দিরে উঠতে না পারেন। উঠলেই নেমে আসতে পারে কঠিন শাস্তি। ‘অপরাধ’ একটাই, তাঁরা কেউ হরিজন, কেউ আবার মালবি সমাজের। মধ্যযুগীয় সেই বর্ণপ্রথা বিজেপি এখনও বেশ গর্বের সঙ্গেই বয়ে নিয়ে চলেছে মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন গ্রামগুলোতে। সাতপিপালিয়া গ্রামের দিলীপ সিংয়ের গলা থেকে তো ঝরে পড়ল একরাশ ক্ষোভ আর হতাশা। আবারও দলিতদের এই কথা বলার পরে তাঁর ওপর যে নেমে আসতে পারে বড়সড় বিপত্তির খাঁড়া তাও বলতে দ্বিধা করেননি তিনি।

সাতপিপালিয়া, ভাওখেরি গ্রাম থেকে জামুনিয়া প্রতিটা গ্রামের গল্পটা একই। যে বিজেপি গোটা দেশ জুড়ে রামমন্দিরের প্রসাদ বিতরণের কথা বলে বেড়াচ্ছে, তাদের তালিকা থেকেই বাদ পড়েছেন এই দলিত সমাজের মানুষরা। তাঁদের ঘরে প্রসাদটুকু পর্যন্ত পৌঁছে দেয় না বিজেপি শাসিত এই সরকার। প্রশ্ন করলে দলিত সমাজের মানুষদের মুখের উপর বলে দেয়, পিছড়েবর্গের মানুষ বলে তাঁদের পুজোর কোনও কিছুতেই অধিকার নেই। অথচ তাঁদেরই গ্রামে পঞ্চায়েতের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে পঞ্চান্ন লক্ষ টাকার বিরাট রামমন্দির। অন্যান্যদের থেকে চাঁদা নিলেও, দলিতদের থেকে চাঁদাটুকুও নেয়নি তারা। কারণ একটাই, তাঁরা যদি মন্দিরে পুজো দিতে চায়। দলিতদের অবস্থা যে সেখানেই ক্রমশই খারাপ হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সাতপিপালিয়ার দিলীপ সিং বলছিলেন, আমরা কেউ রামমন্দিরে যাই না। কী করে যাব? আমরা যে সেখানে পুজো দিতেই পারব না। কারণ আমরা তো দলিত সমাজের মানুষ। সেই উৎসবে থাকার কোনও অধিকার নেই আমাদের। একই অনুভূতি সুনীতা, হেমলতারও।

আরও পড়ুন-ভুয়ো নাম ঢোকাচ্ছে কমিশন, ভিডিও প্রকাশ করে পর্দা ফাঁস করল তৃণমূল

গোটা দেশে রামমন্দির প্রতিষ্ঠার প্রসাদ বিতরণ হয়েছিল। মধ্যপ্রদেশের দলিতদের কাছে তা পৌঁছয়নি। কারণ তাঁরা দলিত। দিলীপ সিং হতাশার সুরে বলছিলেন, রামমন্দিরের প্রসাদ যে গোটা দেশে দেওয়া হয়েছে, তা কিন্তু একেবারেই আমাদের কাছে আসেনি। কারণটা সেই একই। আমরা যে উচ্চবর্ণের নই। নিম্নবর্ণের মানুষ বলেই তো আমাদের সঙ্গে এমন ব্যবহার। আমাদের সঙ্গে এমনটাই বারবার হয়ে আসে। কী করব? ভগবানের মন্দিরে যাওয়ার উপায় নেই।
ঘরে ভগবান রয়েছেন। তাঁকেই পুজো করি।
একই কথা বলছিলেন সুনীতা, হেমলতারাও। সুনীতা বাই কষ্টের সঙ্গে বলছিলেন, আমরা নিজেরাই এখন আর যাই না। আসলে আমরা নিম্নবর্ণের মানুষ। সেই কারণেই
এই মন্দিরে আমরা পুজো দিতে পারি না।

আমরা গিয়েছিলাম সাতপিপালিয়া গ্রামে। সেখানেই দলিতদের গলা থেকে বেরিয়ে এল একরাশ ক্ষোভ, হতাশা। তাঁদের বিধায়ক আবার মধ্যপ্রদেশের রাজস্বমন্ত্রী। আর তাঁরই জমানায় ক্রমশই অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে দলিত সমাজের মানুষরা। কথা বলার সময় বারবার তাঁদের চোখে জল চলে আসছিল। আবার আতঙ্কও ধরা পড়ছিল তাঁদের চোখে-মুখে। বারবারই তাঁরা বলছিলেন, এমনটা যে বলছি ওরা যদি জানতে পারে আমাদের ওপরই আবার চোটপাট করতে আসবে। যে সরকার মুখে সবসময় হিন্দুত্বের বুলি আওড়ায়, বারবার বিকাশের কথা শোনা যায় যাদের মুখে, সবসময়ই যারা বলে ডবল ইঞ্জিন সরকারের কথা, সেই ডবল ইঞ্জিন সরকারের রাজ্যে নিপীড়িত হিন্দুরাই। বর্ণপ্রথায় পুজোর অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে দলিত সমাজের মানুষদের থেকে। মধ্যপ্রদেশের সমস্ত গ্রামের চিত্রটাই এখন এমন।

Latest article