প্রতিবেদন : লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যে দুই নতুন আর্থিক করিডর নির্মাণের কাজ শুরু করতে রাজ্য সরকার উদ্যোগী হয়েছে। ডানকুনি– বেনারস (Dankuni-Varanasi) এবং খড়গপুর-মোড়গ্রাম করিডর নির্মাণের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী শুক্রবার নবান্নে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন। বৈঠকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই এই নতুন দুই জাতীয় সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যেই জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের জন্য ৯০ শতাংশ সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। যে জেলাগুলিতে এখনও সমীক্ষার কাজ শেষ হয়নি তাদের নভেম্বর মাসের মধ্যে সমীক্ষার কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব।
এদিনের বৈঠকে একাধিক জেলাশাসক উপস্থিত ছিলেন। এই দুই নতুন সড়কের পাশাপাশি রাজ্যের অন্যান্য সড়কের পরিস্থিতিও বৈঠকে খতিয়ে দেখা হয়। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের কাজও দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেন মুখ্যসচিব। রাজ্যে চারটি অর্থনৈতিক করিডর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক বা এডিবি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে এই কাজে। চারটির মধ্যে তিনটি শিল্প করিডরের কাজ দ্রুত শেষ করতে চায় রাজ্য। ইতিমধ্যে ওই তিন শিল্প করিডর গড়ার পরিকল্পনা অনেকটাই এগিয়েছে। এই কাজের জন্য পৃথক নীতিও তৈরি হয়েছে। এই তিনটি শিল্প করিডর হল রঘুনাথপুর-তাজপুর, ডানকুনি-কল্যাণী এবং ডানকুনি-খড়্গপুর। এই করিডরগুলি তৈরি করে শিল্পপতিদের হাতে প্রয়োজনমাফিক জমি তুলে দেওয়ার বিষয়টিও অনেকটাই এগিয়েছে বলে শিল্প দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। সরকার এই করিডরগুলির দু’ধারে শিল্প স্থাপন করারও পরিকল্পনা নিয়েছে। এর জন্য নবান্নের তরফে প্রায় আট হাজার একর জমি চিহ্নিত হয়েছে। এই করিডরকে সামনে রেখে রাজ্য বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই তিন করিডর (Dankuni-Varanasi) সম্পূর্ণ হলে যে শিল্প গড়ে উঠবে, তাতে প্রায় দু’লক্ষ কর্মসংস্থান হতে পারে। একইসঙ্গে এই করিডরগুলি রাজ্যের যোগাযোগ মাধ্যম কেউ আমূল পরিবর্তন করে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি সড়কপথে বাংলাদেশ, সিকিম তথা পূর্ব ভারতের সঙ্গে সংযোগের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে। দক্ষিণের জেলাগুলির পাশাপাশি উত্তরের জন্যও একটি আলাদা শিল্প করিডরের ভাবনা রয়েছে রাজ্যের। এক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে পানাগড় থেকে কোচবিহার পর্যন্ত একটি করিডর তৈরি করতে চায়। যে শিল্প করিডর উত্তরের সমস্ত জেলাকে যুক্ত করবে এবং উত্তরের জেলাগুলিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
নবান্নের বৈঠকে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন দফতরের সচিব, এডিবির প্রতিনিধিরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, ফিকি এবং দেশে প্রথম সারির তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ডেলয়েটের প্রতিনিধিরা। এছাড়াও ছিলেন বিভিন্ন বণিকসভার সদস্যরা। বাংলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে শিল্প স্থাপন এবং বিদেশি বিনিয়োগ আনার এই শিল্প করিডর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আগেই জানিয়েছিল রাজ্য সরকার। স্পেন সফরে গিয়ে বাণিজ্য সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী এই শিল্প করিডরগুলি তৈরির কথা জানিয়েছিলেন। তারপরই শুক্রবার নবান্নে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগম এবং দেশ-বিদেশের বেশ কয়েকটি প্রথম সারির শিল্প সংস্থার আধিকারিকদের উপস্থিতিতে এই বৈঠক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল।
আরও পড়ুন- কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী হতে রাজি! প্রিয়াঙ্কের মন্তব্যে চাঞ্চল্য