প্রতিবেদন : সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে সেনা ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষ হতে হতে কোনওমতে বেঁচে গেল কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মার গাড়ি। রাইট টার্ন নেই। তবুও বেপরোয়াভাবে লেন ভেঙে ডানদিকে যাওয়ার চেষ্টা করছে বিশাল বড় সেনা ট্রাক।
আরও পড়ুন-উন্নয়নমূলক কাজের প্রচার, শক্তিশালী সংগঠন, দুইয়ের উপর জোর অভিষেকের
মঙ্গলবার সকালে মহাকরণের সামনে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তুমুল হইচই হয়। ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে সেনাবাহিনীর ট্রাক আটক করে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ। ‘নো রাইট টার্ন’ বোর্ড থাকা সত্ত্বেও ইন্ডিকেটর না দিয়ে, সিগন্যালের তোয়াক্কা না করে বেপরোয়াভাবে ডানদিকে ঘুরতে যায় ট্রাকটি। অল্পের জন্য রক্ষা পায় পিছন থেকে আসা নগরপালের গাড়ি। আইন ভাঙার জন্য সেনার ট্রাকটিকে আটক করেন ঘটনাস্থলে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকর্মী। চালকের বিরুদ্ধে হেয়ার স্ট্রিট থানায় মোটর ভেহিক্যালস অ্যাক্টে মামলা দায়ের করা হয়। পরে অবশ্য সেনা আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনার পর ট্রাকটি ছেড়ে দেওয়া হয়। শহরে প্রতিদিন ঘটে যাওয়া আর পাঁচটা সাধারণ ট্রাফিক আইনভঙ্গকারী ঘটনার মতোই একটি ঘটনা। কিন্তু এ-নিয়ে ফের কুৎসা-অপপ্রচার শুরু করেছে বিজেপি-সহ একশ্রেণির মিডিয়া। যেন ড্রাইভিংয়ের সমস্ত আইনকানুন শুধুই জনসাধারণের জন্য, সেনাবাহিনীর গাড়ির জন্য সাত খুন মাফ! এ-নিয়ে রাজনৈতিক ফুটেজখোর কুৎসাকারী বিজেপির সব অপচেষ্টা ভেস্তে দিল কলকাতা পুলিশই। সাংবাদিক বৈঠকে ডিসি (ট্রাফিক) শ্রীকান্ত জগন্নাথরাও সাফ জানিয়েছেন, এটা একটা লেন-লঙ্ঘন, গাফিলতি এবং বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর কেস। হেয়ার স্ট্রিট থানা প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু এখানে পুলিশ বনাম সেনার কোনও ব্যাপার নেই। এরকম ট্রাফিক আইন ভাঙার ঘটনা প্রতিদিন আমাদের শহরে বহু ঘটে। এটা সেরকমই একটা ঘটনা। সাধারণ মানুষের গাড়ি হলেও একইভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হত। তাই এই ঘটনায় রাজনৈতিক রং লাগাবেন না।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিট নাগাদ মহাকরণের সামনের সিগন্যালে বিধি ভেঙে আচমকা বিপজ্জনকভাবে ডানদিকে বিবাদী বাগ-ধর্মতলার দিকে বাঁক নিতে গিয়েছিল সেনাবাহিনীর একটি ট্রাক। পিছনেই ছিল নগরপালের গাড়ি। বাঁদিকের লেন থেকে হঠাৎ লেন বদলে ট্রাকটি ডানদিকে যেতে চাওয়ায় মুহূর্তের জন্য নগরপালের গাড়িতে ধাক্কা লেগে বড়সড় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা দেখা দেয়। ঘটনার পর কলকাতা পুলিশের তরফে প্রকাশিত ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজেই সেনার বেপরোয়া ট্রাকের কুকীর্তি স্পষ্ট। প্রথমত, মহাকরণের সামনের ওই সিগন্যাল থেকে ডানদিকের টার্ন নিষিদ্ধ। রয়েছে ‘নো রাইট টার্ন’ বোর্ডও। তা সত্ত্বেও ট্রাকটি ডানদিকে মোড় নিতে যায়। দ্বিতীয়ত, ড্রাইভিংয়ের মূল নিয়ম হল মোড় নেওয়ার আগে রিয়ার ভিউ মিররে দেখা উচিত পিছনে কোনও গাড়ি আসছে কি না। এক্ষেত্রে কি সেনার ট্রাকচালক তা করেছিলেন?
আরও পড়ুন-নাহ্! ২০২৬-এও হবে না
আর এ-নিয়ে একাংশের মিডিয়াকে সঙ্গে করে ইচ্ছাকৃতভাবে দেশাত্মবোধের সুড়সুড়ি দিয়ে ফুটেজ খেতে নেমে পড়েছে বিজেপি। পুলিশ ও সরকারকে কলঙ্কিত করার এই অপচেষ্টার পাল্টা দিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র তথা রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, একটা সেনাবাহিনীর ট্রাক রাস্তায় আইন ভেঙেছে। কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ সেই ট্রাক আটকেছেন। এর সঙ্গে সোমবারের ঘটনার কোনও সম্পর্কই নেই। সেনার গাড়ি না হয়ে আলু-পেঁয়াজের গাড়ি হলেও আটকানো হত। স্পর্শকাতর ওই মোড় থেকে ডানদিকে যাওয়া নিষিদ্ধ। তাও ট্রাকটি ডানদিকের লেনে থাকলে অসুবিধা ছিল না। কিন্তু একেবারে বামদিকের লেন থেকে আচমকা ডানদিকে যেতে চায়। কিন্তু এই ট্রাফিক ইস্যু নিয়েও ফুটেজ খেতে নেমে পড়েছে বিজেপি। সবকিছু জেনেশুনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিজেপি আর একাংশের মিডিয়া কলকাতা পুলিশ, তৃণমূল কংগ্রেস ও বাংলাকে কালিমালিপ্ত করার ন্যারেটিভ তৈরি করছে। সেনার অপমান, দেশাত্মবোধ আরও কত কী! কেন অপপ্রচার করছেন? এখানে স্পিড আলোচ্য বিষয় নয়। তুমি আইন ভেঙে ডানদিকে যেতে চেয়েছিলে কেন? সেনার গাড়ি কি ট্রাফিক আইনের ঊর্ধ্বে?