প্রতিবেদন : গুজরাতের (Gujarat Cable Bridge Collapse) মোরবির ভয়াবহ ব্রিজ-বিপর্যয়ের পর কেটে গিয়েছে ৪৮ ঘণ্টারও বেশি সময়, কিন্তু স্বজনহারানোর কান্না আর এখনও না-খুঁজে পাওয়া বাড়ির মানুষগুলোর জন্য নদীর পাড়ে, হাসপাতালের মর্গের সামনে হাহাকারে মোরবির বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। এই লেখা ছাপতে যাওয়া পর্যন্ত সংখ্যাটা ১৪১-এ দাঁড়িয়েছে। এখনও নিখোঁজ বহু। অনেকে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। ফলে মৃতের সংখ্যা বাড়বে। ১৫০ পেরিয়ে যাবে। আশঙ্কা করা হচ্ছে মাচ্ছু নদীর জল-কাদায় প্রচুর মৃতদেহ আটকে রয়েছে। যাঁদের বাড়ির লোক নিখোঁজ, তাঁরা পাগলের মতো প্রশাসনের দরজায় ঘুরছেন। কিন্তু গুজরাত প্রশাসনের কাছে কোনও সদুত্তর নেই। সোমবার এনডিআরএফ-সেনাবাহিনী তল্লাশি চালালেও খুব একটা লাভ হয়নি। কারণ বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে যে! রবিবার সন্ধ্যায় দুর্ঘটনার পরপরই যখন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে উদ্ধারকাজ চালানো দরকার ছিল তখন গুজরাত প্রশাসনের কাউকেই আশপাশে দেখা যায়নি। স্থানীয় মানুষরাই উদ্ধারে নামেন। অনেক পরে মিডিয়ায় খবর দেখে যখন প্রশাসনের টনক নড়ে ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। মৃত্যু হয়েছে অসংখ্য মানুষের। ভেসে গিয়েছেন আরও অনেকে। এখানে উঠে আসছে ফিট সার্টিফিকেট না-পাওয়া সত্ত্বেও মোরবি পুরসভা কোনও এক অজানা কারণে মেরামতের মাত্র চারদিন পর ব্রিজ খোলার অনুমতি দিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু কেন? কাদের স্বার্থে? এত বড় বিপর্যয়ের পরও তদন্ত হবে না? কেন সিবিআই-ইডি তদন্ত করবে না সাম্প্রতিক কালে দেশের অন্যতম ব্রিজ (Gujarat Cable Bridge Collapse) বিপর্যয়ে? প্রবল চাপে পড়ে মুখরক্ষা করতে ব্রিজ মেরামতি সংস্থার ৯ কর্মীকে গ্রেফতার করে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে।
আরও পড়ুন-আজ ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে পূর্তমন্ত্রী, সমস্ত ঝুলন্ত সেতুর রিপোর্ট চাইল নবান্ন
জানা গিয়েছে, এই সেতুতে ১০০ জন উঠতে পারেন। কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজেই দেখা গিয়েছে দুর্ঘটনার সময় সেখানে ছিলেন কমপক্ষে ৪০০-র বেশি মানুষ। এমনকী অভিযোগ, ব্ল্যাকেও টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। যার পরিণাম হয়েছে ভয়ঙ্কর। এই বিপর্যয়কে ‘ম্যানমেড ব্রিজ ডেথ’ বললেও অত্যুক্তি হবে না। রেসকিউ অপারেশন এরপর একটা সময় গুটিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু যাঁরা নিখোঁজ তাঁদের কী হবে? ঠিক কতজন নদীতে ভেসে গিয়েছেন তার ঠিকঠাক তথ্যও প্রশাসনের কাছে নেই। এঁদের পরিবার হাহাকার করছে। কিন্তু শুনবেটা কে তাঁদের কথা? প্রশাসন এখন ভীষণ ব্যস্ত আজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী আসবেন তার নিরাপত্তা ঠিকঠাক রাখতে। গুজরাটে ভোটের মুখে এত বড় বিপর্যয় ও মৃত্যুর মিছিলের পর ৫৬ ইঞ্চি ভাষণ দেবেন যাতে ভোট ব্যাঙ্কে ধস না নামে।
১৯৪২ সালে ব্রিটিশদের তৈরি এই সেতুর রক্ষণাবেক্ষণে যে বিরাট গাফিলতি ছিল সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু আসল দোষীদের চিন্হিত করবে কে? তারা আদৌ কি কোনওদিন সাজা পাবে? কে জানে!