প্রতিবেদন : তদন্তে দোষী প্রমাণিত হয়েছে সঞ্জয় রাই। আরজি করের এই মামলায় ঘৃণ্যতম অপরাধের পরেও কেন চরম সাজা ফাঁসি হল না, এই প্রশ্ন উঠছে সর্বত্র। তার কারণ, সম্প্রতি এ-রাজ্যেরই ৩-৪টি ঘটনায় ফাঁসির সাজা হয়েছে নিম্ন আদালতে। সবক’টিই ধর্ষণ ও খুনের। তদন্ত করেছে রাজ্য পুলিশের টিম ও সিট। শুধু তাই নয়, প্রত্যেকটি মামলায় ৫৪-৬২ দিনের মধ্যে ফাঁসির সাজা ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। রাজ্য পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তদন্ত করে পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য-প্রমাণ জোগাড় ও আদালতে জমা দিয়ে অভিযুক্তকে ফাঁসির সাজা করিয়ে আনতে পারলে সিবিআই কেন ব্যর্থ হল? সোমবার শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস যাবজ্জীবনের সাজা শোনাতে গিয়ে তার কার্যকারণ ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর যুক্তি, বিচারব্যবস্থার প্রাথমিক দায়িত্ব হল তথ্যের উপর ভিত্তি করে আইনের বিচারকে প্রতিষ্ঠা করা। মানুষ কী ভাবছেন তা বিচার প্রক্রিয়ায় আসবে না। এক্ষেত্রে আদালতকে আসল উদ্দেশ্য মাথায় রেখে সাক্ষ্য প্রমাণের উপর ভিত্তি করে বিচার করতে হবে। মামলার সঙ্গে কতখানি আবেগ জড়িয়ে রয়েছে তা বিবেচ্চ নয়। রায় দিতে গিয়ে মাথায় রাখতে হবে, আমাদের মধ্যে যেন আদিম প্রবণতার ঊর্ধ্বে উঠতে হবে। চোখের বদলে চোখ। বা জীবনের বদলে জীবন নেওয়া আসলে এক ধরনের প্রতিহিংসা পরায়ণতার পরিচয়। মানবতাবোধ এবং গভীর জ্ঞানের প্রচ্ছন্নতা যেন রায়ের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। এখানেই প্রশ্ন ওঠে সিবিআইয়ের তরফে কী কী ফাঁক থেকে গেল যার মধ্যে দিয়ে ফাঁসির সাজা শোনানোর মতো জোরাল সওয়াল করতে পারলেন না তাদের আইনজীবী।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
আদালতে বিচারকের সামনে মামলার ও তদন্তের যথাযথ ব্যাখ্যা কী দিয়েছিলেন সিবিআইয়ের আইনজীবী? যদি দিয়ে থাকেন তবে তার সওয়ালে এমন কোথায় ফাঁক রয়ে গেল যেখানে ফাঁসির সাজা অবধারিত তা বদলে বিচারক যাবজ্জীনের রায় দিলেন। এই প্রশ্নগুলিই ঘুরপাক খাচ্ছে আইনজীবী মহলেই। তার কারণ, ফরাক্কা, জয়নগর, গুড়াপ এবং মাটিগাড়ার একটি ঘটনায় রাজ্য পুলিশের টিম তদন্ত করে সরকারি আইনজীবী তার উপর আদালতে সওয়াল করে ফাঁসির সাজা নিশ্চিত করতে পেরেছেন। তবে সিবিআই এই ধরনের হাই প্রোফাইল মামলায় তা পারল না কেন? এর উত্তর সিবিআইকেই দিতে হবে। সব থেকে বড় কথা, সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার এবং তাঁর সঙ্গে যুক্ত সকলে তাঁদের আইনজীবীকে কী ‘ব্রিফ’ দিয়েছিলেন, যাতে ফাঁসির সাজা করানো গেল না! বর্ষীয়ান আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলেন, সিবিআইয়ের মতো সংস্থার হাতে ৩০-৪০টি করে মামলা। ফলে কোনও একটি মামলাতে পূর্ণাঙ্গ নজরদারি ও পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে সাক্ষ্য-প্রমাণ-সহ আদালতের কাছে তুলে ধরার মতো অবস্থা নেই। যার পরিণতি যাবজ্জীবনের রায়।