চলতি বছর অক্টোবর মাসে দার্জিলিংয়ের পাহাড়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য একজন মধ্যস্থতাকারী নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার কথা বলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) । দেশের প্রাক্তন উপ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা তথা অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার পঙ্কজ কুমার সিংকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি এই সিদ্ধান্তে “অবাক ও মর্মাহত” হয়েছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। সেই চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা ছাড়া এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই “একতরফা পদক্ষেপ” বাতিল করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। গোরখা সংক্রান্ত বিষয় দেখতে একজন অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসারকে ইন্টারলোকিউটার হিসেবে নিয়োগ নিয়ে এবার নভেম্বর মাসে GTA মধ্যস্থতাকারী বাতিলের দাবিতে আবার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন-দিল্লিতে স্টেশনের কাছে মহিলার অর্ধনগ্ন দেহ উদ্ধার ঘিরে চাঞ্চল্য
কেন্দ্রকে পাঠানো চিঠিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনি ১৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীকে এই নিয়ে প্রথম চিঠি পাঠিয়েছিলেন এবং তাঁদের পদক্ষেপ পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি। ১০ নভেম্বর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়—ইন্টারলোকিউটরের অফিস ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মনে করছেন কেন্দ্রের তরফে এই আচরণ অত্যন্ত বিস্ময়কর ও উদ্বেগজনক। দার্জিলিং রাজ্যের বিষয়, কেন্দ্রের একেবারেই নয়। চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন যে দার্জিলিং, কালিম্পং ও কার্শিয়াং পশ্চিমবঙ্গের অবিচ্ছেদ্য অংশ। গোরখা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) অ্যাক্ট, ২০১১ অনুযায়ী পাহাড়ের প্রশাসনিক বিষয় রাজ্যের আওতায়। সেই আইনে ‘Government; বলতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে বোঝায়। তাই পাহাড়ের বিষয়ে ইন্টারলোকিউটার নিয়োগ করার মতো ক্ষমতা কেন্দ্রের নেই। চিঠিতে তিনি স্পষ্ট জানান ‘এই সিদ্ধান্ত আইনবহির্ভূত, সংবিধানের পরিপন্থী এবং ক্ষমতার অপপ্রয়োগ।’ মুখ্যমন্ত্রীর দাবি কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ বেআইনি তো বটেই উল্টে দার্জিলিং পাহাড়ে দীর্ঘদিনের শান্ত পরিবেশকে অস্থির করে তোলার সম্ভাবনাও তৈরি করছে। ২০১১ সালের পর থেকে পাহাড়ে যেভাবে শান্তি ও উন্নয়ন এগিয়েছে, নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে সেটা বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে কেন্দ্রের স্বৈরাচারী সরকার। চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, “রাজ্যের আইনগত অধিকার যেখানে স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা আছে সেখানে কেন্দ্রের এমন হস্তক্ষেপ দেশের ফেডারেল কাঠামোর প্রতি আঘাত।”
আরও পড়ুন-বিতর্কে জর্জরিত কেরলের প্রথম মহিলা ডিজিপি এবার পঞ্চায়েতে বিজেপি প্রার্থী
কেন্দ্রের তরফে গোর্খাল্যান্ডের রাজ্য মর্যাদা এবং ১১টি গোর্খা উপজাতিকে তফসিলি উপজাতির মর্যাদা দেওয়ার দাবি সহ বিভিন্ন গোর্খা-সম্পর্কিত দাবিগুলোর “স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান” চূড়ান্ত করতে প্রাক্তন উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পঙ্কজ কুমার সিংকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিয়োগ করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই এই নিয়োগ করা হয়েছে বলে দাবি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রসঙ্গত, জিটিএ গঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল পাহাড়ি অঞ্চলের শিক্ষাগত, সামাজিক-অর্থনৈতিক, কাঠামোগত, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত উন্নয়ন নিশ্চিত করা, একইসঙ্গে গোর্খা সম্প্রদায়ের জাতিগত পরিচয় রক্ষা করা। পাহাড়ি অঞ্চলের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।


