আসল ফুটেজ সামনে আনছে না দিল্লি পুলিশ: নৃশংসতা, মিথ্যাচারের মুখোশ খুলল পরিযায়ী পরিবার

এরপরে আবার নিজেদের দোষ ঢাকতে পুলিশের মিথ্যা ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে প্রবল মিথ্যাচার অমিত শাহর দিল্লি পুলিশ (Delhi police)।

Must read

ছাড় পায়নি দেড় বছরের শিশু। তার মা। টাকা দিয়ে থানা থেকে শিশু ও তার মাকে ছাড়াতে হয়েছে। এরপরে আবার নিজেদের দোষ ঢাকতে পুলিশের মিথ্যা ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে প্রবল মিথ্যাচার অমিত শাহর দিল্লি পুলিশ (Delhi police)। অবশেষে তৃণমূল নেতৃত্বের সাহায্যে কলকাতায় পৌঁছে দিল্লিতে সেই বিভীষিকার মুখোশ খুললেন নির্যাতিতা সাজিনুর পারভিন। সাজিনুর দাবি করেন, দিল্লি পুলিশ মারধর আর যেখানে ধরে আটকে রাখা হয়েছিল, সেই ভিডিও-ও দেখাচ্ছে না দিল্লি পুলিশ।

আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রী সঠিক! বিজেপি নেতাদের ও দিল্লি পুলিশের মুখোশ খুলে আক্রান্ত পরিবারের পাশে তৃণমূল কংগ্রেস

সাজিনুর পারভিন গোটা ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, দিল্লির পাঞ্জাব নগর, শ্রীরাম চক এলাকায় যেখানে তাঁর পরিবার ২৫ বছর ধরে রয়েছে সেখানে হাজির হয় চার ব্যক্তি। আধার কার্ড দেখানো সত্ত্বেও দাবি করা হয় তাঁকে বাংলাদেশি বলে। সেই সময় সাজিনুরের স্বামী মোক্তার খান কর্মসূত্রে বাইরে ছিলেন। হুমকি দিয়ে সেইদিন চলে গেলেও পরের দিন দুই পুরুষ ও দুই মহিলা এসে দাবি করে তারা পুলিশের লোক। জোর করে দেড় বছরের সন্তানসহ সাজিনুরকে অজ্ঞাত নির্জন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়।

জোর করে বাংলাদেশি দাবি করে যারা সাজিনুর ও তার সন্তানকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে তারা নিজেদের পুলিশ বলেও দাবি করেছিল, জানান নির্যাতিতা। চাপ দেওয়া হয় জয়শ্রীরাম বলতে। সাজিনুর তা বলতে অস্বীকার করলে তার পেটে লাথি মারা হয়। ছিনিয়ে নেওয়া হয় সন্তানকে। শিশুর কানে এত জোরে মারা হয় যে তার কান থেকে রক্ত বের হয়। শিশুটি পড়ে গিয়ে মাথায় চোটও পায়। পরিচয় ভাড়ানো দুষ্কৃতীরা কেড়ে নেয় সাজিনুরের ফোন। এরপরই দাবি করা হয় ২৫ হাজার টাকা।

আরও পড়ুন-বিজেপি রাজ্যে নড়বড়ে শিক্ষার ভিত! বানান শেখাতে হিমশিম সরকারি স্কুলের শিক্ষক

কোনও মতে দুষ্কৃতীদের ফোন থেকে স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে মোক্তার ও তাঁর মা, অর্থাৎ সাজিনুরের শাশুড়ি টাকার জোগাড় করে সেই জায়গায় পৌঁছয়। টাকা নিয়ে সাজিনুর ও তার সন্তানকে ছেড়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। পরে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে ঘরে ফিরলে মোক্তার ও তার পরিবারকে আটক করে দিল্লি পুলিশ। পুলিশ তখন তাদের মধুবিহার থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশের লকআপে নতুন করে শুরু হয় অত্যাচার। সেখানেও সন্তানকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলে মায়ের থেকে। বারবার বাংলাদেশি বলে ভয় দেখানো হয়। তার থেকেও মারাত্মক বর্ণনা করেন সাজিনুর। তিনি জানান, পুলিশ বিভিন্ন ধরনের কাগজে তাদের স্বাক্ষর করিয়ে নেয়।

সেখানেই এই পরিবার সম্পর্কে ভয়ঙ্কর পরিবেশের দাবি করে তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূল রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ আশঙ্কা প্রকাশ করেন, কোন কাগজে কী ভাষায় কী লিখেছে, আতঙ্কের মধ্যে তা জানাও সম্ভব নয় এই মানুষগুলোর পক্ষে। মহিলা ও শিশুর উপর বাংলা মাতৃভাষা বলে যে অত্য়াচার হয়েছে তার প্রতিবাদ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সঠিক কাজ করেছে। যেভাবে তাদের উপর অত্যাচার, টাকা নেওয়া, জিনিস আটকে রাখা ও বিভিন্ন জায়গায় স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়েছে, তার বিরুদ্ধে ওনারা কলকাতা পুলিশের দ্বারস্থ হবেন।

আরও পড়ুন-পরিবারের অনুমতিতে রাজা রঘুবংশী হত্যাকাণ্ড এবার সিনেমার পর্দায়

তৃণমূলের চাপের পরে সাফাই দিতেও দিল্লি পুলিশ যে মিথ্যাচারে নেমেছে, তার পর্দাও ফাঁস করেন সাজিনুর। তিনি দাবি করেন, যেখানে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখাচ্ছে না। যখন ধরে নিয়ে যাওয়া হয় তখনকার ফুটেজ দেখাচ্ছে না। যে জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল সেখানে পাশে শুধু একটি হাসপাতাল ছিল। এমনকি হুমকি দেওয়া হয় যদি এরপর মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সরকারের কাছে গিয়ে কিছু বলো তাহলে তোমাদের নিস্তার নেই। এই কথা সোমবার নির্যাতিতাকে ছাড়ার সময় পুলিশ বলেছিল বলেও দাবি সাজিনুরের। এরপরেও মিথ্যাচারের যদি নতুন পর্যায়ে নতুন করে বিজেপির নেতারা ও অমিত শাহর দিল্লি পুলিশ খোলে তাহলে তা রাজ্যের মানুষের কাছে বিজেপি নেতাদের দ্বিচারিতা ও বাংলা বিরোধী মনোভাবই প্রকাশ পাবে।

দিল্লি পুলিশের চক্রান্ত ভেঙে রুখে দাঁড়ানো পরিবারের পাশে রাজ্য সরকার। রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম দাবি করেন, দিল্লি পুলিশ বারবার একটা অন্যায় করার পরে সেটাকে ধামাচাপা দিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মিথ্যা প্রমাণ করার চেষ্টা চালিয়েছে। দিল্লি থেকে ওরা যখন পালিয়ে আসছিল দিল্লি পুলিশের চক্রান্ত ভেদ করে, তখন আমরা ওদের নিয়ে রেখেছি। মালদহে পৌঁছে দেব। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ওদের যা প্রয়োজন তার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

Latest article