দুর্নীতির তদন্তে কেন্দ্রের নির্দেশকে পাত্তাই দিচ্ছে না দিল্লির এইমস

অদ্ভুত ব্যাপার, কেন্দ্রীয় সরকারের হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের নির্দেশকে আমলই দিচ্ছে না দিল্লির এইমস কর্তৃপক্ষ।

Must read

প্রতিবেদন: অদ্ভুত ব্যাপার, কেন্দ্রীয় সরকারের হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের নির্দেশকে আমলই দিচ্ছে না দিল্লির এইমস কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের নির্দেশে দুর্নীতির তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়া তো দূরের কথা, কেন্দ্রের চিঠির কোনও উত্তরই দিচ্ছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মোদি সরকরারে স্বাস্থ্যদফতরের অবস্থাটা কতোটা করুণ, এই ঘটনাতেই তা স্পষ্ট। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সঙ্গে কোনও সমন্বয় নেই দিল্লি এইমসের মতো একটি ঐতিহ্যশালী কেন্দ্রীয় হাসপাতালের।

আরও পড়ুন-দৃষ্টিকটূ নজরদারিতে লঙ্ঘন মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা

ব্যাপক দুর্নীতি এবং অনিয়মের অভিযোগ দিল্লির এইমসের বিরুদ্ধে। গ্লাভস কেনা থেকে শুরু করে যৌন হয়রানির ঘটনায় অভিযুক্ত কর্মকর্তার পদোন্নতি- বেআব্রু হয়ে পড়ছে একের পর এক দুর্নীতি। ফলে সরকারি কোষাগারকে মোটা অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। প্রশ্নের মুখে বিশ্বাসযোগ্যতাও। সবচেয়ে অবাক কাণ্ড, চাপে পড়ে কেন্দ্রের স্বাস্থ্য দফতর এ বিষয়ে এইমস কর্তৃপক্ষকে তদন্তের নির্দেশ দিলেও তাতে সাড়াই দিচ্ছে না তারা। তদন্ত করা তো দূরের কথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দফতরের চিঠির জবাবও দিতে চাইছে না এইমস কর্তৃপক্ষ। বারবার চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও আশ্চর্যজনক মৌনতা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। দিল্লি এইমসের মতো এমন নামী কেন্দ্রীয় হাসপাতালের এমন কাণ্ডকারখানা শুধু বিস্ময় নয়, সমালোচনার ঝড় তুলেছে বিভিন্ন মহলে। এর পরিচালনব্যবস্থা নিয়ে দেখা দিয়েছে গভীর সংশয়ও। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি কিছু আড়াল করার চেষ্টা করছে এই কেন্দ্রীয় হাসপাতালের পরিচালকরা?

আরও পড়ুন-পুলিশ কাকুর বাইকে সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছল মাফিজা

জানা গিয়েছে, গত ১৫ মাসে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক দুবার গ্লাভস ক্রয় সংক্রান্ত বিষয়ে এইমস কে চিঠি লিখেছে, কিন্তু একবারও জবাব দেয়নি পরিচালন কর্তৃপক্ষ। গ্লাভস কেনার ঘটনাটি ঘটেছিল ২০২৩ সালের মে মাসে। এইমস ৫৮ লক্ষ উচ্চ-মানের, পাউডার-মুক্ত সার্জিক্যাল গ্লাভস ক্রয়ের জন্য টেন্ডার ডাকে। মোট ৩৩টি কোম্পানি টেন্ডার জমা দেয়, কিন্তু দুটি কোম্পানি ছাড়া আর কেউ প্রাথমিক টেকনিক্যাল বিড পর্যায় অতিক্রম করার জন্য প্রযুক্তিগতভাবে উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়নি। যে দুটি কোম্পানি ফাইন্যান্সিয়াল বিডের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছিল তারা হল এএস হেলথকেয়ার এবং ব্রাউন বায়োটেক লিমিটেড। এএস হেলথকেয়ার প্রতি জোড়া গ্লাভসের জন্য ২১.৫০ টাকা হারে ১২ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা বিড করে, অন্যদিকে ব্রাউন বায়োটেক লিমিটেড ১৬ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা দর দেয়। ২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবর এএস হেলথকেয়ার বরাত পায়। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডা. অমিত লাঠওয়ালের নেতৃত্বাধীন এআইআইএমএস-এর কার্ডিওথোরাসিক অ্যান্ড নিউরোসায়েন্সেস সেন্টার (সিএনসি) একটি বিকল্প সরবরাহকারী সংস্থা থেকে প্রতি জোড়া ১৩.৫৬ টাকা দরে পাউডার-মুক্ত গ্লাভস কেনে। বিতর্কটা এখানেই। কর্মকর্তাদের গ্লাভস কেনার যুক্তি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সংশয়ের কারণ, সিএনসি মাত্র দুই মাস আগে একই জিনিস অনেক কম দামে ক্রয় করেছিল। এই বিষয়টি কেবল আর্থিক ক্ষতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এইমস প্রশাসনের এই বিষয়ে নীরবতাও অত্যন্ত রহস্যজনক। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এই বিষয়ে সমস্ত প্রাসঙ্গিক নথি দিয়ে কেন্দ্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর স্বাস্থ্যমন্ত্রক এইমস পরিচালকমণ্ডলীর কাছে প্রথম চিঠি লিখে বিষয়টি তদন্ত করে অবিলম্বে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কোনও উত্তর না পেয়ে, ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর এইমসে আরও একটি চিঠি পাঠায়। অবিলম্বে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে বলে। কিন্তু না, কোনও জবাবই পায়নি কেন্দ্র। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আবার চিঠি পাঠায় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। কিন্তু তারপরেও কোনও জবাব নেই এইমসের পক্ষ থেকে। রহস্যটা এখানেই।

Latest article