নবনীতা মণ্ডল, নয়াদিল্লি: বিদেশি অতিথিদের কাছে দেশের জাঁকজমক তুলে ধরার মাশুল গুনতে হচ্ছে রাজধানীর ছোট ব্যবসায়ী এবং দিন আনা-দিন খাওয়া শ্রমিকদের। বৃহস্পতিবার রাত থেকে কার্যত লকডাউনের আওতায় চলে যাওয়া রাজধানীর (Delhi-G20) অটোচালক, ভিক্ষুক, রাস্তার ধারের চায়ের দোকানি এবং সবজি বিক্রেতাদের মধ্যে তাই ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে মোদি সরকারের এই দেখনদারির বিরুদ্ধে ।
অর্থনীতিবিদদের রিপোর্ট অনুযায়ী, করোনার লকডাউনে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ছোট ব্যবসায়ীরা। সেই ধাক্কা এখনও সামাল দেওয়া যায়নি। সেই কারণেই সরকারের কাছে অনেকেই সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা বা তাদের জন্য বিশেষ প্রকল্পের দাবি জানিয়েছেন। সেই ধাক্কা কাটতে না কাটতেই ফের জি-২০ সম্মেলনের কারণে লকডাউনের কবলে রাজধানী দিল্লি। জি-২০ সম্মেলনকে হাতিয়ার করে জাতীয়তাবাদের জিগির তোলার কাজে নেমে পড়েছে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপি। আর তারই মাশুল গুনছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে
রাস্তার ভিক্ষুকরা।
আরও পড়ুন-কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ঘেরাও টিএমসিপির
দিল্লিতে ৩০ বছর ধরে অটো চালাচ্ছেন মোহাম্মদ আইয়ুব। জি-২০ সম্মেলনের (Delhi-G20) জন্য দিল্লি প্রশাসনের জারি করা নির্দেশিকায় দিশাহারা তিনি। জানালেন, রাজধানী জুড়ে প্রায় এক লক্ষ অটো চালক রয়েছে। ইউনিয়নের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা বা আলাদা কোনও উপায়ের কথা না ভেবেই প্রশাসনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, চারদিন রাস্তায় অটো বের করা যাবে না। দিনের একমাত্র রুটিরুজি হারিয়ে চারদিন কীভাবে চলবে তা জানেন না তাঁরা। মহম্মদ আয়ুব জানালেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদি গরিবের জন্য চিন্তা করেন না। উনি শুধু নিজের প্রচার চান। ওঁর বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললেই তার হয় জেল হয়ে যাবে, না হলে তাকে মেরে দেওয়া হবে। যে প্রধানমন্ত্রী দেশের জনগণের কথা ভাবে না তাকে আমাদেরও দরকার নেই।” আর এক অটোচালক জাফর আনসারি বলেন, ‘‘৩৭ বছর ধরে দিল্লিতে অটো চালাচ্ছি, এরকম অবস্থায় কোনওদিন পড়িনি। মোদি নিজের নাম কামাতে আমাদের পেটে লাথি মারছেন। সোনা, রুপোর থালাতে বিদেশি অতিথিদের খাওয়ার মূল্য চোকাতে হবে আমাদের মতো গরিবদের। জি- ২০-র জাঁকজমকের জন্য যে পরিমাণ খরচ হচ্ছে তা তো সাধারণ মানুষের টাকা। অথচ এই খরচের ভার সামলাতে এবার হয়তো চাল, আটার দাম বাড়িয়ে দেবে মোদি সরকার।”
চারদিন ধরে কার্যত লকডাউনের চেহারা নিতে চলা রাজধানীতে ভেঙে ফেলা হয়েছে ঝুপড়ি, রাস্তায় নেই কোনও ভিক্ষুক, নেই কোনও ছোট চায়ের দোকান বা সবজিওয়ালা। সারা বছর রাস্তার ফুটপাথই যাঁদের ঘর-সংসার, সেই ভিক্ষুকদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকী রাজধানীর রাস্তায় দেখা পাওয়া যাবে না, কোনও রূপান্তরকামীদেরও। তাদের ওপর পুলিশের নির্দেশিকা, এই কয়েকদিন রাস্তায় বেরোলে তাদের সটান গ্রেফতার করা হবে।