প্রতিবেদন : দেশে প্রতিদিনই গণতন্ত্রের হত্যা হচ্ছে। প্রতিদিনই একটা করে গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করা উচিত। ২৫ জুন ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ পালন করা নিয়ে কেন্দ্রের চিঠির প্রতিবাদে গর্জে উঠলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। বাবাসাহেব আম্বেদকরের স্বপ্নভঙ্গকারী মোদি সরকার। সংবিধান হত্যা দিবস নিয়ে জুমলার বিরুদ্ধে এক এক করে তোপ দেগে তিনি জানিয়ে দিলেন, ২৫ জুন কেন্দ্রের চাপিয়ে দেওয়া সংবিধান হত্যা দিবস আমরা মানছি না। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে কেন্দ্র তা চাপিয়ে দিতে চাইছে প্রতিটি রাজ্যের উপর। একইসঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে ২০ জুন মানি না। বাংলা দিবস কবে হবে তা বাংলার সরকার ঠিক করেছে। বাংলার মানুষ তা ১ বৈশাখ প্রতিবছর পালন করে থাকে। এদিন পশ্চিমবঙ্গের নাম বাংলা করা নিয়েও কেন্দ্রকে একহাত নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, আর সরকার চালাচ্ছেন অমিত শাহ।
বুধবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) বলেন, কেন্দ্রে একটা জুমলার সরকার চলছে। দেশের গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্বকে ছারখার করে দিয়েছে। তারা আবার জরুরি ব্যবস্থার ৫০ বছর উপলক্ষে সংবিধান হত্যা দিবস পালন করছে! মুখ্যসচিবের কাছে চিঠি দিয়েছে। যারা চিঠি দিয়েছে তারাই আসলে গণতন্ত্রের হত্যাকারী। আবার মর্যা লিটির কথা বলছে। এখন কি দেশে গণতন্ত্র রয়েছে? দেশে প্রতিদিন গণতন্ত্রকে খুন করা হচ্ছে। রাজ্যগুলিকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে। মৌলিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। আর মানুষের উপর নিজেদের অ্যাজেন্ডা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
জুমলা সরকার প্রতিদিন দেশকে হত্যা করছে। অসম, উত্তরপ্রদেশে কী চলছে দেখুন। গায়ের জোরে নোটবন্দি করেছে। মধ্যপ্রদেশের ব্যাপম কেলেঙ্কারি হয়েছিল। মণিপুর, রাজস্থানে কী হয়েছিল? আপনাদের লজ্জা হওয়া উচিত। আপনারা রোজ গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করুন। ভগৎ সিং, বল্লভভাই প্যাটেল, নেতাজি সুভাষচন্দ্র, রাজেন্দ্র প্রসাদ, পণ্ডিত জহরলাল নেহেরু যাঁরা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, বাবাসাহেব আম্বেদকর সংবিধান তৈরি করেছেন, তাঁদের সম্বন্ধে সংবিধান হত্যা করার কথা বলছেন! ৭৫-এর জরুরি অবস্থাকে আমরাও সাপোর্ট করি না। কিন্তু আপনারা রাজনীতি করার জন্য যা করছেন, তাতে কনস্টিটিউশনকে হত্যা করা হচ্ছে। বলেছিলেন ব্ল্যাক মার্কেটের সব টাকা আপনারা ফেরত নিয়ে আসবেন। কত মানুষকে লাইনে দাঁড়াতে হয়েছিল নোট পরিবর্তন করার জন্য! ১৪০-এর বেশি লোক মারা গিয়েছিল। আপনারা দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে মার্ডার করেছিলেন। যারা কালো ধন দিয়ে দেশটাকে সর্বনাশ করে দিয়েছিল, তাদের জন্য কেন ব্ল্যাকমানি ডে হবে না ৮ নভেম্বর ২০১৬?
আরও পড়ুন- দেশের প্রাইম মিনিস্টার কে? মোদি না শাহ? প্রশ্ন তুলে তীব্র কটাক্ষ দলনেত্রীর
মুখমন্ত্রী এদিন পহেলগাঁও-কাণ্ড নিয়েও কেন্দ্রকে একহাত নেন। বলেন, বিশেষ অধিবেশনের কথা বলেছিল সমস্ত দল, সেটা কেন করলেন না? পাঁচটা প্রশ্ন করা হয়েছে আমাদের দলের থেকে, একটা উত্তর দিতে পারেননি। আপনারা কি কখনও সন্ত্রাসবিরোধী দিবস কি পালন করেছেন একটাও? পার্লামেন্টে হামলা, মুম্বই অ্যাটাকও হয়েছিল, আপানারা সন্ত্রাসবরোধী দিবস পালন করেননি। মুখ্যমন্ত্রীর সাফ কথা, রাজনীতি করুন কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু রাজনীতির নাম করে মিথ্যা কথা বলবেন না। তিনি বলেন, মানুষের জীবন সংকটে, প্রতিদিন প্লেনে উঠছে আর নামিয়ে দিচ্ছে, কত মানুষ মারা গিয়েছে, তার কোন ঠিক নেই। ডাক্তার হবে বলে মেডিক্যাল কলেজে গিয়েছিল, তাদের প্রাণ চলে গিয়েছে। একটা দুর্ঘটনা হতেই পারে, কিন্তু তা যদি পূর্বপরিকল্পিত হয়, তাহলে সেটা নিয়ে ভাবা উচিত। আমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত হচ্ছে আমলাদের দিয়ে!
মুখ্যমন্ত্রী এদিন সাফ জানিয়ে দেন, যারা বিরোধী দলকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসায়, তাদের মুখে ডেমোক্রেসির কথা মানায় না। ওরা ওদের মতো পালন করুক। আমরা তা পালন করব না। ওরা মানুষের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, কে আসল প্রধানমন্ত্রী, নরেন্দ্র মোদি না অমিত শাহ? প্রধানমন্ত্রী দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ব-কলমে দেশ চালাচ্ছেন অমিত শাহ। দেশটাকে পুরো ভেঙে দিয়েছে, এখন বলছে গণতন্ত্র দিবস পালন করবে। ম্যাডাম কুরেশিকে সন্ত্রাসবাদীদের বোন বলেছিলেন আপনাদের সাংসদ? তাহলেই ভাবুন দেশকে কোথায় নিয়ে গিয়েছেন আপনারা।
উত্তরপ্রদেশের বিশেষ সচিব একটা চিঠি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি বিভাগকে। লিখেছেন, ২০ জুন উত্তরপ্রদেশ-সহ সারা ভারতবর্ষে রাজভবনে পালন করা হবে বাংলা দিবস। এই তারিখ তারা কীভাবে ঠিক করল? পয়লা বৈশাখকে আমরা বাংলা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছি। বিধানসভায় সেই প্রস্তাব পাশ হয়েছে। ইতিমধ্যে দু’বছর আমরা পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনও করেছি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বাধীনতার আগে পরাধীন ভারতবর্ষে একটা আইন পাশ হয়েছিল— বাংলা ভারতের সঙ্গে থাকবে আর বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে থাকবে। এটা হয়েছিল ১৯৪৭-এর ২০ জুন। দেশ স্বাধীন হয়েছে ১৯৪৭-এর ১৫ অগাস্ট। তারপর বাংলার প্রতিষ্ঠা দিবস, বাংলা ঠিক করবে না তো, আপনারা ঠিক করবেন? বিজেপি তাদের ইচ্ছেমতো চাপিয়ে দেবে? তাদের মস্তিষ্কটা হচ্ছে সন্ত্রাসবাদী মরুভূমি।
আবার রাজ্যের বাংলা নাম নিয়েও আপত্তি ওদের। আমরা মনে করি এটা বাংলাকে অপমান করা। রাজভবনে কেন পালন করবে বাংলা দিবস? রাজ্যই বাংলা দিবস পালন করবে। বাংলার প্রাপ্য টাকা আটকে দেখে বাংলা দিবস পালন করবে লজ্জা করে না?