দাঁতের যে অংশ মুখের ভিতর দেখা যায়, তাকে ক্রাউন বলা হয়। আর মাড়ির তলায় যে অংশ থাকে, তাকে রুট বা মূল বলে। ক্রাউনের ভিতরের অংশে রক্ত এবং স্নায়ু থাকে।
দাঁতের বাইরের স্তরটি হল ডেন্টিন। এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল। এরও বাইরে একটি প্রতিরক্ষামূলক স্তর থাকে। তাকে বলা হয় এনামেল। যা ডেন্টিনকে রক্ষা করে। অনেক সময় তাপমাত্রা ওঠানামা বা অন্য কোনও কারণে এই এনামেল ক্ষয়ে যেতে শুরু করে, তখন ডেন্টিনের স্তরটি বেরিয়ে আসে বা এক্সপোজড হয়ে যায়। তাতেই স্নায়ুতে অস্বস্তি হয়, দাঁত কনকন করে।
আরও পড়ুন-গ্রামবাংলার লৌকিক দেবতা হয়ে উঠেছে বারাঠাকুর
দাঁতের এনামেলের ক্ষয়, যাকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলে ‘হাইপোমিনারালাইজেইশন’— এই রকম অবস্থায় ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শে এলেই দাঁতের সংবেদনশীলতা বাড়তে থাকে। সোজা ভাষায়, দাঁত শিরশিরও করতে পারে আবার তীক্ষ্ণ সুচ ফুটলে যে ব্যথা হয় সেইরকম ব্যথাও হতে পারে। আসলে প্রতিটি দাঁতের সংবেদনশীলতার জন্য আলাদা আলাদা স্নায়ু আছে। যাঁদের দাঁতের সমস্যা আছে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে তাঁদের দাঁত এক-একরকম ভাবে সংবেদনশীল হয়।
কেন এনামেল ক্ষয়ে যায়
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রায় ৫১% ভারতীয় একটি টুথব্রাশেই দীর্ঘদিন ব্রাশ করেন এবং জোরে চাপ দিয়ে ঘষে ব্রাশ করেন। এতেই দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে যেতে শুরু করে।
আরও পড়ুন-জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার : ইন্দিরার নাম বাদ দিল কেন্দ্র, অভিনেত্রী নার্গিসের নামও নেই
চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি খেলে। আঠালো খাবার, টক জাতীয় ফল এবং ড্রাই ফ্রুটস ইত্যাদিতে দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে যায়। আর যত বেশি এনামেলের ক্ষয় তত বেশি সেনসিটিভিটি। ঠান্ডায় তা কনকন করতে শুরু করে, ঠান্ডা হাওয়া মুখে ঢুকলে শিরশিরানি বাড়ে, দাঁত এবং মাড়ি দু’য়েরই যন্ত্রণা শুরু হয়।
দাঁত ভেঙে গেলে বা পাইরিয়ার মতো অসুখের কারণেও এনামেল ক্ষয় হয়।
খুব ঠান্ডা বা খুব গরম খাবার খেলে। ঘন ঘন চা বা কফি খেলেও দাঁতের এনামেল দ্রুত ক্ষয়ে যায়। দাঁত শিরশির করে।
খুব বেশি পরিমাণে অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেলেও দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে যায়। শরীরে অ্যাসিড জমা হয়ে যায়।
কী করবেন
নিয়মিত ফ্লসিং করুন। আর নরম টুথব্রাশ ব্যবহার করুন। তার পাশাপাশি এমন টুথপেস্ট ব্যবহার করুন, যা এনামেলের জন্য ক্ষতিকারক নয়।
টুথব্রাশ উপরে-নিচে করে চালিয়ে ঘষে দাঁত মাজতে হবে। এটিই পদ্ধতি। সঙ্গে প্রতিটা দাঁত আলাদাভাবে মাজার চেষ্টা করতে হবে।
দাঁতের ছোপ দূর করে এরকম বহু টুথপেস্ট রয়েছে বাজারে। তা ব্যবহার না করাই ভাল। কারণ এই ধরনের টুথপেস্টে রয়েছে— অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড বা ক্যালসিয়াম পাইরোফসফেট ইত্যাদি উপাদান যা দাঁতের এনামেলের ক্ষতি করে। টুথপেস্টের গায়ে উপাদানের নামের তালিকা দেখে জেনে তবেই কিনুন।
সংবেদনশীল বা ‘সেনসিটিভ’ দাঁতের জন্য তৈরি বিশেষ টুথপেস্ট বাজারে পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন এতে সেনসিটিভিটির সমস্যা দূর হবে। এতে দাঁত ও মাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
অনেকের মাড়ি খোঁচানোর অভ্যাস থাকে। এরকম অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। পাশাপাশি রাতে ঘুমানোর সময় ‘মাউথগার্ড’ ব্যবহার করুন।
দাঁত যদি সেনসিটিভ হয় তাহলে জুস, কোল্ড ড্রিঙ্কস, রেড ওয়াইন, ভিনিগার ইত্যাদি পানীয় থেকে দূরে থাকুন। এগুলি এনামেলের ক্ষতি বেশি করে।
আরও পড়ুন-অন্নদাতা কৃষকদের সমর্থন, কেন্দ্রের জেল তৈরির প্রস্তাব খারিজ, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের
দাঁতের কষ্ট দূর করতে
দাঁতে ব্যথা হলে নুন জলে কুলকুচি করুন। জল গরম করুন। এতে সামান্য নুন মিশিয়ে নিন। এটা দিয়ে কুলি করুন। দিনে ৩-৪ বার। নুন জল মুখের ভিতরে থাকা জীবাণু ধ্বংস হয় এবং দাঁতের ব্যথা কমতে শুরু করে।
মুখে দুটো লবঙ্গ দিয়ে রাখতে পারেন। এতে দাঁতের ব্যথা কমে যাবে। এ-ছাড়াও আপনি লবঙ্গের তেল ব্যবহার করতে পারেন। কিংবা লবঙ্গ গুঁড়ো কিংবা লবঙ্গের পেস্ট বানিয়ে দাঁতে লাগাতে পারেন। এতেও খুব উপকার পাবেন।
দাঁত ব্যথার উপশমে মৌরি তেল খুব কার্যকরী। মৌরি তেল লাগাতে পারেন।
ইউক্যালিপটাস অয়েল দাঁত ব্যথায় খুব উপকারী। বিশেষত ঠান্ডা লেগে বা শীতকালে দাঁত কনকন করলে ইউক্যালিপটাস অয়েল লাগিয়ে নিন।
পুদিনা পাতার চা খান। পুদিনা পাতার চায়ে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে। এটি মুখের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াকে দূর করে দেবে। আপনি চাইলে দাঁতে পুদিনার তেলও লাগাতে পারেন।
এক কোয়া রসুন থেঁতো করুন। এর সঙ্গে নুন মিশিয়ে দাঁতে লাগান। রসুনের মধ্যে থাকা অ্যালিসিন নামক শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান দাঁত ব্যথা কমাবে।
দাঁতের পাশাপাশি যদি মাড়ির সমস্যা দেখা দেয়, ঠান্ডা লেগে যদি মাড়ি ফুলে যায় তাহলে অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে পারেন। অ্যালোভেরার মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য দাঁতের সমস্যা দূর করে দেবে।
দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে গেছে। ঠান্ডায় খুব কষ্ট দাঁত নিয়ে। তাহলে এক টুকরো পেঁয়াজ সেই দাঁতের উপর চেপে ধরে রাখুন। তাতে ওখানে বাসা বাঁধা জীবাণু মরবে। দাঁতের ক্ষয়ও কমবে। দাঁতের সেনসিটিভিটিও কমবে।
মাউথওয়াশ ব্যবহারে করুন। বেশিরভাগ ডেন্টিস্ট দাঁত ব্রাশের পর এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে মাউথওয়াশ করতে বলেন, এর ফলে টুথপেস্টের প্রোটেক্টিভ ফ্লুরাইড ধুয়ে যাবে না। দাঁত সেনসটিভ হবে না।
দাঁত এবং মাড়ির সমস্যায় হলুদ খুব কার্যকরী। হলুদও জীবাণু ধ্বংস করে। দাঁতের ক্ষয় কমায়। হলুদ গুঁড়োর সঙ্গে সামান্য জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে দাঁতের উপর এবং গোড়ায় লাগিয়ে দিন। ব্যথা, শিরশিরানি দুই-ই কমবে।
সরষে তেল, হলুদ এবং নুন মিশিয়ে দাঁতের উপর লাগিয়ে রাখুন, এতে যন্ত্রণার উপশম হবে। যতক্ষণ না পুরো ব্যথা কমে কয়েকবার এটা করতে হবে।
হাইড্রোজেন পারক্সাইডে রয়েছে অ্যান্টিসেপটিক গুণ, যা মুখের ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে অসহ্য যন্ত্রণাকে কমাতে সাহায্য করে। হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ও সমপরিমাণ জল নিয়ে মিশিয়ে নিন। এরপর ৩০ সেকেন্ডের জন্য রেখে মুখ ধুয়ে ফেলুন। দরকার পড়লে দিনে ২-৩ বার এইভাবে মুখ ধুয়ে ফেলতে পারেন। এতে সংবেদনশীলতা এবং ব্যথা দুই-ই কমবে।