প্রতিবেদন : রাজনৈতিক (political) দিক থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে তাঁদের অবস্থান। একজনের উত্থানেই একজনের প্রস্থান। একজনকে সরিয়েই ক্ষমতায় আসেন আরেকজন। তবু পারস্পরিক সৌজন্যের সম্পর্ক কখনও নষ্ট হয়নি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বৃহস্পতিবার, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর প্রয়াণের পরে স্মৃতিমেদুর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, মৃত্যুতে মানুষের শেষ হয় না। তিনি বেঁচে থাকেন মানুষের মনে কাজের মধ্যে দিয়ে। সিঙ্গুর আন্দোলন। বাংলার রাশ তখন থেকেই যেতে শুরু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। ক্ষমতা বদল হয়ত ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা। সেই সময় তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক হয়। এদিন সেকথা বারবার মনে পড়ছে মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি বলেন, সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় রাজ্যপাল ছিলেন গোপালকৃষ্ণ গান্ধী। ওঁর বাড়িতে মিটিং ডেকেছিলেন। সেখানে বুদ্ধবাবুর সঙ্গে দেখা হয়েছিলেন। গোপালকৃষ্ণ গান্ধী ‘ভরা থাক স্মৃতি সুধায়’ গানটির প্রথম স্তবক বলে জিজ্ঞেস করেছিলেন এর অন্তরাটা বলো। আমি বলে দিয়েছিলাম, ‘যে পথে যেতে হবে সে পথে তুমি একা’।
পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি থাকায়, এদিনই পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে গিয়েই শেষশ্রদ্ধা জানান মুখ্যমন্ত্রী। পরিবারের প্রতি জানান সমবেদনা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, দীর্ঘদিনের জনপ্রতিনিধি বুদ্ধদেববাবু। মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, একাধিক দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। ওঁর মৃত্যু রাজ্যের জন্য ক্ষতি। অনেকবার ওঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। যতবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, আমরা দেখতে গিয়েছি। সবসময় সুস্থ হয়ে ফিরেছেন, যা আমাদের কাছে বড় প্রাপ্য ছিল। ওঁর মৃত্যুর বয়স হয়নি। অন্য সমস্যা ছিল। শ্বাসকষ্ট হত। বউদি জানালেন, আজ সকালেও ব্রেকফাস্টের পর শ্বাসকষ্টে হঠাৎ চলে গিয়েছেন।
পারিবারিক সম্পর্কের প্রসঙ্গে তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অনেক ব্যক্তিগত কথা আছে, আজ সেটা বলার দিন নয়। কখনও সময় পেলে নিশ্চয়ই বলব। আজ পরিবারের পাশে থাকার দিন। ওদের দল নেতাকে হারিয়েছে। অন্য দল করলেও, ওদের প্রতি সম্পূর্ণ সমবেদনা রয়েছে। আমি যখন আসতাম, যতদিন ভাল ছিলেন, গল্প করতেন, অনেক কথা বলতেন। সেগুলো ব্যক্তিগত স্তরেই, বাইরে আনতে চাই না।
সমবেদনা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি ওঁর পরিবার, মীরা বৌদি, সুচেতন, সিপিএম, বামফ্রন্ট এবং সহনাগরিকদের সকলকে সমবেদনা জানাই। ওঁর অনেক অবদান, এটা সেই আলোচনার জায়গা নয় যদিও। আসুন প্রার্থনা করি, ওঁর আত্মা শান্তি পাক। মারা গেলেই জীবন শেষ হয়ে যায় না, কাজের মধ্যে দিয়ে মানুষের মনে থেকে যান। বারবার এই বাংলার মাটিতেই ফিরে আসুন আপনি।
আরও পড়ুন-সিবিআইয়ের হাতে ধৃত ইডির শীর্ষ আধিকারিক
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ২০১১ সালে উনি আমার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানেও এসেছিলেন। স্মৃতিচারণে বাবরি মসজিদের সেই অশান্ত সময়ের কথা। বলেন, বাবরি মসজিদের সময়, আমি মহাকরণের সময় গিয়ে দেখা করে বলেছিলাম কোনও কাজে লাগলে জানাবেন। একসঙ্গে মিলে সমস্যার মোকাবিলা করতে গিয়েছিলাম। ওঁর বাড়িতে গিয়ে কথা হত। মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকতে পারে। রাজনৈতিক সৌজন্য সবার উপরে। অসুস্থ থাকলেও বুদ্ধবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতাম। চোখ দেখাতে গেলে গ্রিন করিডর করে দিতাম। আমি সবাইকে মনে করিয়ে দেব রাজনৈতিক সৌজন্যতায় যেন মানবিকতার মৃত্যু না হয়। আমার খারাপ লাগছে। মুখটা মনে পড়ছে। ওঁর স্ত্রী খুব ভাল। যত্ন করতেন যখনই যেতাম।