বার্মিংহাম, ৪ জুলাই : রাহুল আর যশস্বী যখন ব্যাট করছিলেন, ভারতের জয়ের সম্ভাবনা দেখাচ্ছিল ৬৭ শতাংশ। যশস্বী (২৮) টাঙ্গের বলে লেগ বিফোর হয়ে যাওয়ার পরও উইন প্রেডিকশন বদলায়নি। তৃতীয় দিনের শেষে ভারত ৬৪/১। শুভমনরা এগিয়ে ২৪৪ রানে। বাকি দু’দিনে এজবাস্টন নিয়ে এতদিনকার মিথ ভেঙে যেতে পারে। মিথ এই যে, এই মাঠে ভারত কখনও জেতেনি। সাতটি হার, একটি ড্র। কিন্তু লিডসের অভিজ্ঞতা বলছে আশা নিরাশায় বদলে যেতেও সময় লাগে না!
বুমরা থাকলে যেটা অনেক আগে করতেন, সেটাই আকাশ দীপকে চায়ের পর করতে হল নতুন বল নিয়ে। ১৫৮ রানে থাকা ব্রুক তখন ফুটবল দেখছেন। আকাশের ভিতরে আসা বল সামলাতে পারেননি। ব্রুক ও স্মিথের ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ৩০৩ রান উঠেছে। এই একটা পার্টনারশিপ ইংল্যান্ডের ভরাডুবি রক্ষা করেছে। না হলে এরা দু’জন যখন জুটি বাঁধেন, ইংল্যান্ড ৮৪/৫। শুভমনরা কখন তাদের গুটিয়ে দেবেন, হিসাব চলছিল তার।
আরও পড়ুন-উয়াড়িকে সমীহ ডায়মন্ড হারবারের
ইংল্যান্ড শেষপর্যন্ত ইনিংস শেষ করল ৪০৭ রানে। ব্রুকের মতোই সেঞ্চুরি করলেন জেমি স্মিথও। ১৮৪ নট আউট। ইংল্যান্ড কিপারদের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে ইংল্যান্ড প্রথম দফায় ১৮০ রানে পিছিয়ে ছিল। লিডসেও ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে ছিল। তবু টেস্ট জিতেছে। এখানে শুভমনদের লিড অবশ্য বড়। এদিন নতুন বল নেওয়ার আগে ব্রুক আর স্মিথের সামনে দিশাহীন দেখাচ্ছিল ভারতীয় বোলিংকে। কিন্তু ম্যাজিক শুরু হল নতুন বলে। ২২ রানে ইংল্যান্ডের শেষ ৫ উইকেট চলে গেল। সিরাজ ৭০ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন। ৮৮ রানে ৪ উইকেট আকাশের। বাকিরা উইকেটের মুখ দেখেননি।
তৃতীয় দিনের পর এটা বলতে হবে, একেবারে রহস্য-রোমাঞ্চে ঠাসা এই সিরিজ। যখন খুশি খেলার রং বদলে যাচ্ছে। শুক্রবার স্টোকস (০) যখন সিরাজের প্রথম বলে ফিরে গেলেন, বোর্ডে ৮৪/৫। ইংল্যান্ডের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে। তখনও পাঁচশো রানে পিছিয়ে তারা। কিন্তু ওই যে ম্যাচের রং বারবার বদলে যাচ্ছে! লাঞ্চে এই ইংল্যান্ড ২৪৯/৫। তারা ঘুরেই দাঁড়াল।
ব্রুক এখনকার ক্রিকেটে অন্যতম সেরা। লাগাতার রান করছেন। টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে এত সিরিয়াস যে আইপিএলের কোটি টাকার অফার ছেড়ে দিচ্ছেন। কিন্তু জেমি স্মিথ সার্কিটে বেশি পরিচিত নন। তবে এবার হবেন। বাজবলের সঙ্গে মানানসই ইংল্যান্ড কিপারের ব্যাটিং। স্রেফ ৮০ বলে সেঞ্চুরি করলেন। ইনিংসে ২১টি ৪, ৪টি ৬।
সকালের দু’ঘণ্টায় ইংল্যান্ড যখন ১৭২ রান তুলে ফেলল, তখনও বুমরার অভাব টের পাওয়া গেল। এমন নয় যে সিরাজ আর আকাশ খারাপ বল করেছেন। কিন্তু ব্রুক ও স্মিথ যখন মারছিলেন, তখন তাঁদের থামাতে বিশেষ কাউকে দরকার ছিল। কুলদীপ থাকলেও হত। পকেটে ছ’শো রান নিয়ে তিনি উইকেট কেনার চেষ্টা করতেন। ফ্লাইট দিতেন। ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টকে বুঝতে হবে কুড়ি উইকেট নিলে তবে ম্যাচ জেতা যায়।
আরও পড়ুন-ডুরান্ডের ট্রফি উন্মোচন, গ্রুপ পর্বে হচ্ছে না ডার্বি
টেস্ট ক্রিকেটে বোলিং খুব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এমন বোলিং যাতে ভেদ্শক্তি থাকবে। এই ভারতীয় দলে বুমরা ছাড়া কেউ নেই যিনি ইংল্যান্ড ব্যাটিংকে প্রত্যেক বলে চ্যালেঞ্জ জানাবেন। ব্রুক ও স্মিথ যে চাপের মধ্যে সেঞ্চুরি করে গেলেন, সেটা বোলিংয়ে ভেদশক্তি ছিল না বলে। লোয়ার অর্ডারে জোর বাড়াতে ওয়াশিংটন ও নীতীশকে নেওয়া হয়েছে। দু’জনের কেউ বল হাতে এমন কিছু করেননি যাতে উইকেট পড়ার আশ্বাস থাকে। যখন এই জুটি তৈরি হচ্ছে, তখনই ধাক্কা দেওয়ার ছিল। কিন্তু এই দলে ধাক্কা দেওয়ার লোকের অভাব।
দিনের শেষে রাহুল ২৩ ও করুন নায়ার ৭ রানে ব্যাট করছেন। আকাশকে প্যাড পরিয়ে রাখলেও নাইট ওয়াচম্যানের দরকার পড়েনি। শনিবারের সকাল খুব গুরুত্বপুর্ন। ভারতকে বড় রানের লিড পেতে প্রথম সেশনে বেশি উইকেট হারানো চলবে না।