প্রতিবেদন: ঢাকা কিংবা রাজশাহি, বাংলাদেশের যে কোনও বড় শহরে কোনও জটলা বা আড্ডায় কান পাতলেই ভেসে আসছে বাংলাদেশের আমজনতার স্বপ্নভঙ্গের হতাশা এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে গলাধাক্কা দেওয়ার দাবি। বিশৃঙ্খল বাংলাদেশে এখন ছাত্ররাই এখন বলছেন ইউনুস ধাপ্পাবাজ, ইউনুস প্রতারক। হাসিনার দেশত্যাগের পর পরিস্থিতি যে এত দ্রুত ইউনুসের বিরুদ্ধে চলে যাবে তা বোধহয় ভাবতে পারেনি অনেকেই। সাধারণ মানুষের চরম অর্থনৈতিক দুরবস্থা, আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ফলাতে গুচ্ছ গুচ্ছ মিথ্যা মামলা, মৌলবাদীদের দাপাদাপি। এটাই এখন বাংলাদেশের সার্বিক চিত্র। এই পরিস্থিতিতে এবার রাজধানীর রাজপথে রীতিমতো গলাফাটানো স্লোগান উঠল, ইউনুস মানে স্বৈরাচার, এই মুহূর্তে গদি ছাড়। গত আগস্টে যে ছাত্ররা হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার ছিল, ইউনুস জমানায় এখন তাদেরই মোহভঙ্গ হচ্ছে।
আরও পড়ুন-লিস্টনের গোলে মানরক্ষা মোহনবাগানের
রবিবার রাতভর ইউনুসের পদত্যাগ চেয়ে দেওয়া ছাত্রদের স্লোগানে কার্যত কেঁপে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। শুধু অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিরুদ্ধে স্লোগানই নয়, উত্তেজিত ছাত্রদের হাতে প্রায় মার খেতে খেতে বেঁচে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তাকে লক্ষ্য করে ছাত্ররা স্লোগান দেয়, ভুয়া ভুয়া। হাসনাতকে কোনওরকমে রক্ষা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ঢুকিয়ে দেন সেখানকারই কয়েকজন পড়ুয়া। কিন্তু তার পরেও পিছনে লাঠি হাতে হাসনাতের দিকে তেড়ে যান উত্তেজিত ছাত্ররা। বিক্ষুব্ধ পড়ুয়াদের সঙ্গে হাসনাত কথা বলতে গেলে সরাসরি প্রত্যাখ্যাত হন। উত্তেজিত ছাত্রদের সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যায় পুলিশ। সবমিলিয়ে নিউ মার্কেট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে ইউনুস বিরোধী ছাত্রদের বিক্ষোভে। এই ঘটনায় সামনে চলে আসে ইউনুসের প্রতি মানুষের বিতৃষ্ণা কতটা বেড়েছে সেই ছবিটাই। একইসঙ্গে ইউনুস-অনুগামী ছাত্রনেতাদেরও অবস্থা ক্রমশই সঙ্গীন হয়ে পড়ছে।
আরও পড়ুন-১২ ফেব্রুয়ারি রাজ্য বাজেট
রবিবার রাতে কার্যত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নিউমার্কেট এবং নীলক্ষেত এলাকা চলে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি ৭ কলেজের আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের দখলে। ৫ দফা দাবির ভিত্তিতে আন্দোলন শুরু করেছেন পড়ুয়ারা। প্রায় সাড়ে ৪ ঘন্টা ধরে সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করে রাখেন তাঁরা। তারপর রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ কয়েক’শ পড়ুয়া মিছিল করে এগোতে থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। নীলক্ষেত মোড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি এবং গণতন্ত্র তোরণের সামনে তাঁরা অবস্থান শুরু করলে সূত্রপাত হয় গণ্ডগোলের। বিশ্ববিদ্যালয়েরই কয়েকজন পড়ুয়ার সঙ্গে প্রথমে বচসা শুরু হয়, তারপরেই হাতাহাতি। শুরু হয় ব্যাপক ইটবৃষ্টি। এইসময় হাসনাত আন্দোলনরত পড়ুয়াদের শান্ত করতে গেলে ধাক্কাধাক্কি করা হয় তাকে। কোনওরকমে প্রাণে বাঁচেন তিনি।