সংবাদদাতা, হুগলি: মৃত্যুকে চাক্ষুষ করেও রাজার মতো ফিরে এসেছেন পোলবার বীরেন্দ্রনগর গ্রামের ধনঞ্জয় মিশ্র। দেবীর মূর্তি গড়ে স্ত্রী- সন্তান নিয়ে সংসার চালাতেন ধনঞ্জয়বাবু। কিন্তু হঠাৎই এক দুর্ঘটনায় মাথা কাঁধ ও বাঁ হাতে গুরুত্বর আঘাত পান তিনি। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেন কুড়ি দিন। এমনকী কোমায় চলে যান তিনি। কিন্তু ওই যে ভগবান সহায় থাকলে কেউ ভাগ্য কেড়ে নিতে পারে না। তাই মৃত্যুর দুয়ার থেকে ঘুরে এসেও এখন আবার স্বমহিমায় প্রতিমা গড়ছেন ধনঞ্জয়। ২০১৫ সালে তার জীবনে নেমে আসে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
আরও পড়ুন-ইজরায়েলকে পাত্তা না দিয়ে প্যালেস্টাইনকে রাষ্ট্রের মর্যাদা দেওয়ার ঘোষণা বেলজিয়ামের বিদেশমন্ত্রীর
রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় লরিতে ঠেকে যায় তার বাইকের হ্যান্ডেল। রাস্তা থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। তাঁর উপর দিয়ে চলে যায় চার চাকা গাড়ি। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে টানা ২০ দিন কোমা থেকে ফিরে আসেন শিল্পী। বাঁহাত ভেঙে পুরোপুরি অকেজো হয়ে যায়। কোনও কাজই ঠিকভাবে করতে পারেন না বাঁ হাতে। এখনও মাঝেমধ্যেই যন্ত্রণা হয়। শত যন্ত্রণা সহ্য করেও জীবনযুদ্ধে লড়ে যান। কারণ তিনি কখনও জীবনে হারতে চান না। ২০ দিন কোমায় থাকার পর জীবনযুদ্ধে জয়ী হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। মনে করেন ঈশ্বরই তাঁর ভরসা। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পরেই ফের লেগে পড়েন এক হাতেই দুর্গা তৈরি করতে। এবছর তিনি দুটো দুর্গা তৈরি অর্ডার পেয়েছেন। ২০০৩ সালে আর্ট কলেজে থেকে উত্তীর্ণ হন। সেখানে প্রতিমা তৈরি শেখেন, তার পাশাপাশি বিভিন্ন ছবি আঁকাও শেখান তিনি। বর্তমানে তাঁর কাছে প্রায় ৬০ জন ছাত্র-ছাত্রী আঁকা শেখেন। এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে দিব্যি চলে যাচ্ছে তাঁর সংসার। ধনঞ্জয় বলেন, আমার এক হাতে কাজ করতে খুব সমস্যা হয়। তবে আমার স্ত্রী আমাকে কিছুটা সাহায্য করে। একটা দুর্ঘটনায় বাঁ হাত নষ্ট হয়ে যায় ডান হাত দিয়ে সব কাজ করতে হয় আমাকে। বাঁ হাতের ৭০% কোনও কাজ হয়না। শুধুমাত্র মনের জোর এই প্রতিমা তৈরি করি। আমি যে কোনও মূর্তি তৈরি করতে পারি, যে কোনও মানুষকে দেখে তাকে তৈরি করতে পারি। তবে সবটাই ভরসা তারামা আর কৃষ্ণ। প্রতিমা গড়তে গড়তেই ধনঞ্জয় বললেন, মনের জোরটাই আসল। পরোয়া না করে এগিয়ে যাওয়ার নাম জীবন।