অনির্বাণ দাস
প্রথমবার ডুরান্ড কাপ খেলতে নেমে ফাইনালে! ইতিহাস গড়ল ডায়মন্ড হারবার (DHFC)। তাও আবার তারকাখচিত ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে। বুধবার রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই ফুটবলারদের সঙ্গে উৎসবে মেতে ওঠেন কোচ কিবু ভিকুনা। যুবভারতীতে উপস্থিত ডায়মন্ড হারবার সমর্থকরাও যোগ দিলেন সেই উৎসবে। হল ভিকট্রি ল্যাপ। লাল হলুদ গ্যালারিতে তখন শোকের আবহ।
ডার্বি জিতে আকাশে উড়ছিলেন মিগুয়েল, দিয়ামানতাকোসরা। তাঁদের এক ঝটকায় মাটিতে টেনে নামালেন কিবুর শিষ্যরা। ময়দানের প্রাচীন প্রবাদ আরও একবার প্রমাণিত, ডার্বি জেতার পরের ম্যাচটা সাধারণত হোঁচট খায় ইস্টবেঙ্গল। ফুটবল দেবতা বড়ই নির্মম! ডার্বিতে জোড়া গোল করে নায়ক বনে গিয়েছিলেন দিয়ামানতাকোস। এই ম্যাচে তিনিই খলনায়ক। অবিশ্বাস্যভাবে একের পর এক সুযোগ নষ্ট করে দলকে ডোবালেন গ্রিক স্ট্রাইকার।
এই জয় কিবুর কাছেও স্পেশাল। মোহনবাগানের কোচ থাকাকালীন ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে কোনও ম্যাচ হারেননি স্প্যানিশ কোচ। সেই রেকর্ড এই ম্যাচেও বজায় রাখলেন। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন ভেঙে খানখান করে দিলেন লাল হলুদেরই দুই প্রাক্তনী জবি জাস্টিন ও মিরশাদ মিচু! ইস্টবেঙ্গলের হয়ে ডার্বিতে গোটা দুয়েক গোল রয়েছে জবির। এদিন ডায়মন্ড হারবারের জয়সূচক গোলটি এল জবির পা থেকেই। আর তিন কাঠির নিচে পাহাড় হয়ে লাল হলুদের একের পর এক আক্রমণ রুখে দিলেন মিরশাদ। এবার ফাইনালে জবিদের সামনে নর্থইস্ট ইউনাইটেড। আরও একটা ইতিহাস ডাকছে ডায়মন্ড হারবারকে (DHFC)।
আরও পড়ুন-যোগীরাজ্যের পাঠ্যপুস্তকে বাদ কেন রবীন্দ্রনাথকে?
মগজাস্ত্রের লড়াইয়ে এদিন ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজোকে টেক্কা দিলেন কিবু। জমাট রক্ষণের পাশাপাশি দ্রুত গতির প্রতিআক্রমণেই বাজিমাত করলেন ডায়মন্ড হারবার কোচ। যার কোনও পাল্টা দিতে পারলেন না অস্কার। খেলা শুরুর ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই কেভিন সিবিলে ও প্রভসুখন গিলের ভুল বোঝাবুঝিতে প্রায় গোল করে বসেছিল ডায়মন্ড হারবার। সে-যাত্রায় কোনও রকমে বল বিপন্মুক্ত করেন কেভিনই। এছাড়া ২৪ মিনিটে স্যামুয়েলেরের শট পোস্টে লেগে ফিরে না এলে তখনই এগিয়ে যায় ডায়মন্ড হারবার। সেই ঝটকা সামলে টানা আক্রমণের ঝড় তুলেছিল ইস্টবেঙ্গল। তবে প্রতিআক্রমণে লাল হলুদ রক্ষণকেও বারবার পরীক্ষার মুখে ফেলেছেন জবিরা।
বিরতির পর গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ঝাঁপায় ইস্টবেঙ্গল। বেশ কিছু সুযোগও তৈরি করেছিল তারা। কিন্তু গোল হয়নি। উল্টে ৬৬ মিনিটে স্প্যানিশ ডিফেন্ডার মিকেল কোর্তাজারের দুরন্ত গোলে এগিয়ে যায় ডায়মন্ড হারবার। ফ্রি কিক থেকে বক্সের মধ্যে বল পেয়ে অসাধারণ ব্যাকভলিতে বল জালে জড়ান মিকেল। যদিও এক মিনিটের মধ্যেই আনোয়ার আলির বিশ্বমানের গোলে ১-১ করে দিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। অনেকটা দূর থেকে গোলার মতো শটে জাল কাঁপান আনোয়ার।
তবে নাটকের তখনও বাকি ছিল। ৮৩ মিনিটে কর্নার থেকে জটলার মধ্যে বল পেয়ে গোল করতে ভুল করেননি জবি। আর এই গোলটাই ইস্টবেঙ্গলকে ডুরান্ড থেকে ছিটকে দিল। ম্যাচের বাকি সময় অনেক চেষ্টা করেও হার বাঁচাতে পারেননি অস্কারের ফুটবলাররা। মিগুয়েলের শট একবার বারে লাগে। এদিন সকালে কলকাতায় ফিরে আসা মহম্মদ রশিদকে মাঠে নামিয়েও শেষরক্ষা করতে পারেননি অস্কার।