প্রতিবেদন: বারবারই প্রশ্ন উঠছে, মণিপুরে কি নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে অশান্তি জিইয়ে রাখতে চাইছে বিজেপি? শান্তি ফেরানোর নামে এই পাহাড়ি রাজ্যে যা কিছু পদক্ষেপ করছে কেন্দ্র তা সবই কি নিছক আইওয়াশ? প্রধানমন্ত্রী কেন একবারও যাচ্ছেন না সেখানে? এই প্রশ্নগুলোই বড় হয়ে দেখা দিল আরও একবার। ক্রমশই ঘনীভূত হচ্ছে গেরুয়া শিবিরের এমন কাণ্ডকারখানার নেপথ্য রহস্য। কেন? মাত্র দু’দিনের মধ্যেই মণিপুরে উদ্ধার হল ৬টি দেহ। শুক্রবার রাতে বরাক নদীতে ভাসতে দেখা যায় ৩টি দেহ। শনিবার দুপুরে উদ্ধার হয় আরও ৩ দেহ। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবার তুঙ্গে উঠেছে এই পাহাড়ি রাজ্যের উত্তেজনা। কয়েকজন মন্ত্রী ও বিধায়কের বাড়িতে হামলা চালায় ক্ষুব্ধ জনতা। ইম্ফল পশ্চিম এবং ইম্ফল পূর্বে জারি করা হয়েছে কার্ফু। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট।
আরও পড়ুন-আশঙ্কাজনক আরও ১৫, শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর
ঘটনার সূত্রপাত সোমবার। মেইতেই গোষ্ঠীর ছ’জন নিখোঁজ ছিলেন ওইদিন থেকে। শুক্রবার রাতে বরাক নদীতে ভেসে থাকতে দেখা যায় তিনটি দেহ। উদ্ধার করে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয় ময়নাতদন্তের জন্য। তারপর শনিবার দুপুরে আরও তিনটি দেহ উদ্ধার হয়। ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে সেই দেহগুলিকেও। যে ছয়জনকে কুকি জঙ্গিরা অপহরণ করেছিল, তাঁদের দেহই পাওয়া গেল বলে মনে করছে পুলিশ। এর মধ্যে তিন মহিলা ও তিন শিশু রয়েছে। পুলিশসূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতদের নাম ইয়ুরেনবাম রানি দেবী (৬০), তেলাম থোবি দেবী (৩১), তেলাম থাজামানবী দেবী (৮), লৈসরাম চিঙ্গখেইঙ্গানবা সিং (২ বছর ৫ মাস), লৈসরাম লাঙ্গাম্বা সিং (৮ মাস)। আরেকজনের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। ঠিক কী হয়েছিল ঘটনাটা? সোমবার রাজ্য সরকারি কর্মী লৈসারাম হেরোজিতের দুই সন্তান, স্ত্রী, শাশুড়ি ও শালিকে অপহরণ করে আটক করা হয়। সন্দেহের তির জঙ্গিদের দিকেই। নিখোঁজদেরই দেহ পাওয়া গিয়েছে বলে সূত্রের খবর। এই ছয়জনের দেহ নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে জঙ্গিরা নৃশংসতার প্রমাণ দিল বলে মনে করছে স্থানীয়রা। সোমবার ৬ জনের নিখোঁজের খবর সামনে আসার পর থেকে সরকারের ওপর চাপ দিতে শুরু করেছিল মণিপুরের একাধিক রাজনৈতিক দল। কুকি জঙ্গিদের দিকে প্রথম থেকে আঙুল তুলেছিল তারা। রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি সরকারের ওপর চাপ ছিল বিভিন্ন সংগঠনের। ১৩টি এমন সংগঠনের তরফে বুধবার ইম্ফল বন্ধ রাখা হয়। তাদের সকলেরই দাবি ছিল, তিন মহিলা ও তিন শিশু অর্থাৎ যে ছয়জন নিখোঁজ রয়েছে, তাঁদের আসলে আটক করে রাখা হয়েছে। মুক্তি দেওয়া হোক আটকদের। স্বাভাবিকভাবেই প্রবল চাপে পড়ে যান মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং। তারপর শুক্রবার রাতেই নদীর তীরে ওই তিনটি দেহ পাওয়া যায়। এর ২৪ ঘণ্টা কাটার আগেই আরও তিনটি দেহ উদ্ধার হয়। ইম্ফল-সহ মণিপুরের সব জেলায় শনিবার স্কুল-কলেজে ছুটি রয়েছে এই ঘটনার জেরে।
আরও পড়ুন-ধোঁয়ার চাদরে ঢাকা রাজধানী, স্কুল-কলেজে ফিরছে মাস্ক
লক্ষণীয়, গত বছর মে মাস থেকেই উত্তপ্ত মণিপুর। জাতি সংঘর্ষে ২০০-র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এপর্যন্ত। রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে ধর্ষণ, মহিলাদের ওপর নির্যাতনের খবর এসেছে। কয়েকদিনের মধ্যেই পরপর দু’টি নৃশংস মৃত্যু দেখেছে এরাজ্য। আসলে মণিপুর নিয়েই প্রকৃত অর্থেই ল্যাজেগোবরে অবস্থা গেরুয়া মুখ্যমন্ত্রীর। নিজের দলের বিধায়করাও তাঁর অপদার্থতায় ক্ষুব্ধ। তবুও উদাসীন কেন্দ্র।
৬টি থানা এলাকায় নতুন করে আফস্পা জারি করেও ফিরে এল না শান্তি।