সংযত দিদি হেসে বললেন এরপর বছরে দু’বার আসব

শোনালেন সংগ্রামের কথা, কলকাতায় ক্যাম্পাস করতে আবেদন, ৬ পিস কাপুরুষ বাম-রাম অসভ্যতা করতে গিয়ে লেজ গুটিয়ে পালাল

Must read

কুণাল ঘোষ, লন্ডন (মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী): রাম-বাম-নকশালের চক্রান্ত উড়িয়ে অক্সফোর্ডের মন জিতে নিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata banerjee)। পরিকল্পিত অসভ্যতা হেলায় উড়িয়ে একেবারে ছক্কা হাঁকালেন তিনি। এদিন অনুষ্ঠানে ৬ পিস কুলাঙ্গার রাম-বাম ছেলেমেয়ে পরিকল্পনামাফিক নাটক করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার পেতে, মুখ্যমন্ত্রীর (CM Mamata banerjee) বক্তৃতা বানচাল করতে গিয়ে কার্যত জনতার ঘাড় ধাক্কা খেয়ে লেজ গুটিয়ে পালাতে বাধ্য হল। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা বানচালের পূর্ব পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছে। অবশ্য আগে জানাই ছিল, অক্সফোর্ডে এই ধরনের গন্ডগোল পাকানোর চেষ্টা হবে। তাই হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই বলেছিলেন, ওরা বল দিলে আমি ছক্কা মারব। ঠিক তাই করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। একেবারে সোজা ব্যাটে খেলে বল উড়িয়ে মাঠের বাইরে ফেলে দিয়েছেন। রাম-বাম-নকশালদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, এসব করে নিজের দেশকে অপমান করছ কেন? এসব না করে বাংলায় তোমাদের দলগুলিকে শক্তিশালী হতে বলো। তোমাদের নেতারা কোথাও গেলে এসব সামলাতে পারবে তো? এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এসব ওদের স্বভাব। বদলাতে পারবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই ঘটনা তাঁকে আরও অনুপ্রাণিত করল। এবার বছরে দু’বার আসবেন এখানে। পরে এই ঘটনার দায় স্বীকার করেছে এসএফআই-ইউকে। তবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এই ৬ জন এখানকার পড়ুয়া নয়। বহিরাগত। তবে নিজের স্বাভাবিক বাচনভঙ্গি ও সরলতায়-সহজতায় উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রী-জনতার উষ্ণ অভ্যর্থনায় ভাসলেন।

আরও পড়ুন-নারী শিক্ষা থেকে ক্ষমতায়ন: অক্সফোর্ডের মঞ্চে পরিবর্তিত বাংলার ছবি তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী

অধ্যাপক জোনাথন মিচি এবং লর্ড করণ বিলিমোরিয়াকে পাশে নিয়ে লন্ডনের মাটিতে দাঁড়িয়ে ৪৫ মিনিটের বক্তৃতায় তুলে ধরলেন পরিবর্তনের বাংলাকে। একেবারে তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে বোঝালেন ১১ কোটি জনসংখ্যার বাংলায় তাঁর উন্নয়নের মডেল। দারিদ্র দূরীকরণ, ৪৬ শতাংশ বেকারত্ব কমানো। জিডিপি বাড়ানো। বাংলার বাড়ি। স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড। কী করেননি বাংলার জন্য। সবই উঠে এসেছে তাঁর কথায়। বিনামূল্যে চাল, চিকিৎসা, শস্যবিমা— সব তুলে ধরেছেন। শ্রমিক, কৃষক, পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য তাঁর ভাবনার কথা, কাজের কথা বলেছেন। প্রান্তিক চাষি থেকে আইটি সেক্টর, কন্যাশ্রী থেকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্য থেকে শিক্ষা-শিল্পে কেন ও কীভাবে অন্যান্য রাজ্যকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে বাংলা। শোনালেন নারী ক্ষমতায়ন ও শিশুদের জন্য তাঁর যুগান্তকারী পরিকল্পনাগুলির কথা। সেইসঙ্গে কলকাতায় অক্সফোর্ডের একটি ক্যাম্পাস তৈরির অনুরোধ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। জমি দেবে রাজ্য সরকার। এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতার সময় তাঁর এক-একটা লাইনে হাততালির ঝড় বয়ে গিয়েছে। ছোট থেকে লড়াই-সংগ্রাম করে উঠে এসে যেভাবে বৃহত্তর রাজনতৈনিক সংগ্রামের পর ৩৪ বছরের সিপিএমকে হারিয়ে বাংলাকে বদলে দিয়েছেন সেই কথা শোনার সময় বারবার জনতা কুর্নিশ জানিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। তাঁর ভিশন ও মিশন শুনে, রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতো অকুতোভয় শপথে বারবার উঠে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানিয়েছে। নিজের স্বাভাবিক বাচনভঙ্গি ও সরলতায়-সহজতায় উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রী-জনতার উষ্ণ অভ্যর্থনায় ভেসেছেন।

বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের দেশে বাংলায় কীভাবে কোনও বিভাজন ছাড়া সর্বধর্ম সমন্বয় বজায় রেখে এগিয়ে চলেছে বাংলা সেই উদাহরণও তুলে ধরেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তাঁর রাজ্যে ৩৩ শতাংশ সংখ্যালঘু, এছাড়াও আদিবাসী, তফসিলি জাতি-উপজাতি ও অন্য সাধারণ মানুষ রয়েছেন। সকলেই বাংলায় নিজেদের ধর্ম-সংস্কৃতি মেনে একসঙ্গে নিশ্চিন্তে বাস করেন।

তাঁর তৈরি ৯৭টি সামাজিক প্রকল্প কীভাবে বাংলার মানুষকে সুরক্ষা দিচ্ছে সে-কথাও বলেছেন। অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী না হলে যে কোনও দেশ বা রাজ্য পরিপূর্ণতা পায় না সে কথা ব্যাখ্যা করে কোভিড-পরবর্তী অধ্যায়ে বাংলার পোক্ত অর্থনীতিকে তুলে ধরেছেন। বাংলার শিল্পের কথা বলেছেন। এবছর বিজিবিএস-এ চার লক্ষ কোটি টাকার ওপর বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে, সে-কথাও বলেছেন। আগের প্রস্তাবনার বেশিরভাগ বাস্তবায়িত হয়েছে— তাও জনিয়েছেন তিনি।

বক্তব্য শেষে বিলিমোরিয়ার প্রাণশক্তি নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমার টাইটেল ব্যানার্জি। যার মানে এনার্জি। আর মানুষই আমার প্রাণশক্তি। মা মাটি মানুষই আমায় শক্তি জোগায়। একথা বলামাত্রই হাততালিতে ফেটে পড়ে হলঘর।

Latest article