পেট ভরে নয় পুজোয় খান মন ভরে

আপনার কি হাই ব্লাড সুগার বা হাই ব্লাড প্রেশার, কিডনির রোগে ভুগছেন? তাহলে কি পুজোর খাওয়া-দাওয়া, আনন্দ সব বাদ। কখনওই নয়। দরকার একটু সচেতনতা আর একটা ডায়েট প্ল্যান। পেট ভরে বেশি নয়, খান মন ভরে। কী করবেন, জানাচ্ছেন ডায়েটিশিয়ান সৃজিতা মুখোপাধ্যায়। লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

ডায়াবেটিস এবং হাইপ্রেশার হাইপারটেনশন (Diabetes- High Blood Pressure) হল লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট ডিজিজ। ডায়াবেটিস এমন একটি অবস্থা যা তখনই ঘটে যখন শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে বা কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে না। ইনসুলিন সেই হরমোন যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। উচ্চরক্তচাপ (Diabetes- High Blood Pressure) এমন একটি অবস্থা যেখানে ধমনীর দেওয়ালের বিরুদ্ধে রক্তের বল খুব বেশি হয়ে যায়। আর কিডনির রোগীর দুটো ভিগ একটি— অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি, অপরটি ক্রনিক কিডনি ডিজিজ। কিডনি রোগের ক্ষেত্রে রেস্ট্রিকশন বেশি কারণ যেহেতু ইনফেকশন ক্যারি করার একটা সম্ভাবনা বেশি থাকে। আমাদের সবার আগে মাথায় রাখতে হবে, যাঁদের কো-মর্বিডিটি রয়েছে অর্থাৎ ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ বা কিডনি রোগী— কারও ক্ষেত্রেই এমন কোনও ডায়েট মেনটেন করা উচিত যাতে মিল স্কিপ করতে হয়। যেমন ইন্টারমিট্টেন্ট ফাস্টিং, কেটো ডায়েট ইত্যাদি। এগুলো যাঁরা করবেন তাঁদের অনেকটা আগে থাকতে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে তবেই শুরু করা দরকার। কো মর্বিডিটি রয়েছে যাঁদের, তাঁরা পরিমাণে অল্প খান কিন্তু বারে বারে খান, খালিপেট রাখবেন না।

হাই ব্লাড সুগারে
পুজোয় শরীরে রোগ থাকুক বা না থাকুক, বাড়িতে এবং বাইরে খাওয়া মানেই ধরে নিতে হবে জাঙ্ক ফুড, হাই ক্যালরি যুক্ত খাবার এবং স্পাইসি বা মশলাদার খাবার সেই তালিকায় থাকবেই। হেলদি অপশন কমে যায় এই পাঁচটা দিন। যাঁদের হাই ব্লাড সুগার রয়েছে, তাঁদের প্রথমেই জেনে নিতে হবে যে তাঁরা একদিনে কতটা ক্যালরি নিতে পারবেন। অর্থাৎ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সেটা জেনে নেওয়ার পর এবার তিনি যখন বাইরের খাবার খাচ্ছেন তখন খেয়াল রাখতে হবে সেই নির্দিষ্ট ক্যালরি বাইরে যেন তাঁর সারাদিনের মিল অতিক্রম না করে ফেলে। তাই আগে থেকেই একটা প্ল্যানিং করে ফেলুন।
পুজোর ক’টাদিন রাতে ভারী খেলে সকাল থেকে যে খাবারগুলো খাচ্ছেন তা যেন অনেকটা লো ক্যালরিযুক্ত এবং হালকা হয়। পুজোর সময় রেস্তোরাঁয় খেলে চেষ্টা করুন দুপুরে খেতে। রাতটা হালকা রাখুন। আবার তার মধ্যে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমিয়ে রাখুন। বদলে প্রোটিন, ভিটামিনস, মিনারেলস বেশি করে খান। সকালটা একটু বাদাম, আমন্ড, কাঠবাদাম দিয়ে শুরু করুন। জলখাবারে কার্বস নেবেন না। অর্থাৎ পুজো মানেই লুচি-পরোটা, সেটা নাই খেলেন। বদলে স্মুদি বা রায়তা যাতে দই রয়েছে এমন খাবার ইনক্লুড করুন। স্যালাড খাওয়া যেতে পারে। ফ্রুটস দিয়ে স্মুদি তৈরি করে নিয়ে যান। বিভিন্ন সিড বা বীজ দিয়ে দিন স্মুদিতে। পাঁকা পেপে, জামরুল, নাসপাতি, পেয়ারা, আপেল কিউই এগুলো লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্সে পড়ে। কাজেই এই সব ফল যথেষ্ট উপকারী। এই সব ফল খান। কারণ দুপুরে বা রাতে যেহেতু ভারী খাবেন। মোটামুটি গোটা দিনে একবারই শুধু হাই ক্যালরি ফুড নিন।
রিফাইন্ড খাবার না খাওয়াই ভাল। তাই অষ্টমীর দিন অনেক বাড়িতে লুচি খাওয়ার রীতি থাকে, সেই ক্ষেত্রে ময়দার নয়, আটার লুচি খান। সঙ্গে সবজি খেলে আলু বাদে যেকোনও সবজি খান। স্যালাড খান সঙ্গে। দুপুরে যাঁরা খিচুড়ি খাবেন তাঁরা অল্প পরিমাণে নিন। সেক্ষেত্রে কিন্তু লুচিটা বাদ দিলে ভাল। কার্বসটা বাদ দিয়ে চললেই কেল্লা ফতে। বিকেলে ঠাকুর দেখতে গিয়ে জাঙ্ক ফুড বা রেস্তোরাঁর খাবার খেতে ইচ্ছে করবেই তখন খাবার সময় মাথায় রাখুন কোনওরকম একস্ট্রা চিজ, মেয়োনিজ, মাখন খাবেন না। পুজোয় রাতের দিকে বিরিয়ানি, চাইনিজ না খেয়ে দুপুরে খান, হজম ঠিক থাকবে। রাতের জন্য ধোসা, ইডলি ইত্যাদি রাখুন। রাতে ডিনার একটু তাড়াতাড়ি সেরে ফেলুন। রাতে ঠাকুর দেখতে বেরলে খেয়ে বেরোন। সঙ্গে জল রাখুন। ঠাকুর দেখে মধ্যরাতে কখনওই বাইরে খাবেন না। তা হলে সুগার তো বাড়বেই, ইনডাইজেশন, কনস্টিপেশন আরও অনেক সমস্যা দেখা দেবে দেবে। ঠান্ডা খাবার খাবেন না বেশি, যেমন আইসক্রিম, কোল্ড ড্রিঙ্ক— এগুলো সরাসরি ব্লাডে গিয়ে সুগার লেভেল বাড়াবে। বিশেষত, রাতে পুরোপরি এড়িয়ে চলুন। এই ধরনের হিউমিড ওয়েদারে প্যাকড ফুড কম খান। ক্যানড ফুডও বাদ দিন।

আরও পড়ুন-হামাসের হামলা নিয়ে মুসলিম দেশগুলি এখনও চুপ কেন? সুর চড়ালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী

হাই ব্লাডপ্রেশারে
হাই প্রেশার বা উচ্চরক্তচাপ হলে সল্টি খাবার এড়িয়ে চলুন। বিশেষত চাইনিজ খাবারটা কম খান, এতে প্রেশার (Diabetes- High Blood Pressure) বেড়ে যাওয়া বা ফ্ল্যাকচুয়েশনের সম্ভাবনা কমবে কারণ চাইনিজের উপকরণ উচ্চরক্তচাপের জন্য ক্ষতিকর। পাশাপাশি সবজি, চিকেন খাওয়া যেতে পারে। রেস্তোরাঁয় গেলে বড় এক বোল স্যালাড, ওয়ান পট চিকেন মিল, স্যুপ নিন। ফ্রট জ্যুস খান বাড়িতে চিনি ছাড়া একটু গোলমরিচ ছড়িয়ে। পুজোতে কি চিপস, রোল, কোল্ডড্রিঙ্কস খাবেন না। এগুলো খেলে খুব সামান্য খান এবং একবারই খান। বাকি দিনটা বাড়ির খাবার খান। নবমীতে পাঁঠার মাংস রসিয়ে না খেয়ে এক টুকরো খান, মনও ভরল খাওয়াও হল। পেট এবং শরীর হালকা থাকল, উচ্চরক্তচাপে উসকানি পড়ল না। মনে রাখবেন পরিমিত আহার যে কোনও রোগ থেকে আপনাকে দূরে রাখবে।

কিডনি রোগে
কিডনি রোগ যাঁদের, তাঁরা প্রথমেই স্ট্রিট ফুড এড়িয়ে যান সচেতনভাবে লোভ করবেন না কারণ ইকফেকশনের সম্ভাবনা বেশি। বাইরে রেস্তোরাঁয় খেলেও রায়তা চলবে কিন্তু স্যালাড খাবেন না। কারণ যত বড় রেস্তোরাঁই হোক, কতটা হাইজিন মেনটেন করছে আপনার জানা নেই। ইনফেকশন থেকে দূরে থাকতে হবে। সেই সঙ্গে ডাল অথবা যে কোনও প্রোটিন রেসট্রিকশন মাস্ট। সারাদিনে একবার প্রোটিন খান। কোনও প্রোটিন রিপিট করবেন না। ধরুন মাটন খেলেন, তার সঙ্গে আর পনির, ডাল মাখনি জাতীয় আইটেম নেবেন না।এই ক্ষেত্রেও হাই ক্যালরি যুক্ত খাবার যে কোনও একটা টাইম বাইরে খান। সেটা দুপুরে হলেই ভাল।
সোয়া চাঙ্ক, রাজমা, তরকা এগুলো খাবেন না। ননভেজ খেলে প্রোটিন একবারেই অনেকটা যাচ্ছে কাজেই অন্য প্রোটিন অর্থাৎ মিল্ক বা দুগ্ধজাত খাবার আর খাবে না। দুধ বা দই যখন খাবেন অল্টারনেটিভ করে খান। কাচা শাক-সবজি, আধ সেদ্ধ খাবার খাবেন না। রেনাল পেশেন্টদের জন্য কার্বসে ক্ষতি নেই তাই পুজোর ভোগের স্বাদ নিন কিন্তু বেশি না। মাল্টিগ্রেন সমৃদ্ধ খাবার খান। এর সঙ্গে চলুক নিয়ম মেনে ওষুধপত্র।

Latest article