মণীশ কীর্তনীয়া, সাগর: এবছর জোড়া ফলায় সাগরমেলা সামলানোর পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার। এই প্রথম গঙ্গাসাগর মেলায় চালু হচ্ছে ডিজিটাল কাউন্টিং। যার পোশাকি নাম পিটিএমএস (পিলগ্রিম ট্রান্সপোর্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম)। একইসঙ্গে গঙ্গাসাগর মেলা পাচ্ছে একসঙ্গে তিনটি স্থায়ী হেলিপ্যাড। আজ বুধবার গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি সফরের শুরুতেই যার উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিও আজ হেলিকপ্টারেই সাগরে পৌঁছবেন। গঙ্গাসাগর হেলিপ্যাড গ্রাউন্ডে নেমে সেখানেই আনুষ্ঠানিক ভাবে তিনটি হেলিপ্যাডের উদ্বোধন করবেন। এরপর ভারত সেবাশ্রম সংঘ, কপিল মুনির আশ্রম সহ একাধিক জায়গায় যাবেন। ঘুরে দেখবেন মেলার প্রস্তুতি।
আরও পড়ুন-কেন্দ্রকে দুষে চায়ের দোকান বিটেক পাশের
এই প্রথম গঙ্গাসাগর মেলায় চালু হচ্ছে পিটিএমএস (পিলগ্রিম ট্রান্সপোর্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) ব্যবস্থা। এই অত্যাধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে মেলার ভিড় ও গোটা পরিবহণ ব্যবস্থা সামাল দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। যার জন্য ব্যবহার করা হবে অত্যাধুনিক জিপিএস ও অন্যান্য ডিভাইস। আগামী ৮ জানুয়ারি থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সাগরমেলার মূল ভিড়ের সময় এই পিটিএমএস-এর মাধ্যমে গোটা মেলার ভিড় ও পরিবহণ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। লট এইট থেকে কচুবেড়িয়া হয়ে সাগরের মেলা প্রাঙ্গণে কখন কত পুণ্যার্থী একসঙ্গে আসছেন, তার সঠিক সংখ্যা জানতে পারবেন প্রশাসন বা মেলার দায়িত্বে থাকা কর্তাব্যক্তিরা। সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন তাঁরা। সাগর অভিমুখে আসা লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর অযথা হয়রানি কমবে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লট এইট কিংবা কচুবেড়িয়ায় অপেক্ষা করতে হবে না তাঁদের। গোটা বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত হবে অত্যাধুনিক জিপিএস ব্যবস্থার মাধ্যমে। যে কারণে লট এইট, কচুবেড়িয়া ও সাগরের মেলা প্রাঙ্গণ তো বটেই, পুণ্যার্থী নিয়ে যাতায়াতকারী ভেসেলগুলিতেও লাগানো থাকবে জিপিএস। যাতে প্রতি মুহূর্তের আপডেট পাওয়া যায়। এর সঙ্গে আগের মতো কয়েকশো সিসি ক্যামেরা তো থাকছেই। সেই সঙ্গে থাকছে মেগা কন্ট্রোল রুম। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে একাধিক মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা ইতিমধ্যেই সাগরে তাঁদের নিজস্ব দায়িত্ব বুঝে নিয়ে কাজে নেমে পড়েছেন।
আরও পড়ুন-উত্তরের একগুচ্ছ ট্রেন বাতিল বিজ্ঞপ্তিতে বিপাকে যাত্রীরা
কপিল মুনি আশ্রমের প্রধান পুরোহিত জ্ঞানদাস মোহান্ত বললেন, গঙ্গাসাগরের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা করেছেন তা অতুলনীয়। আজকের গঙ্গাসাগর মেলার এই অত্যাধুনিক পরিকাঠামো সবই মুখ্যমন্ত্রীর জন্য। সাগরপাড়ে গিয়ে দেখা গেল পুণ্যার্থীদের সুবিধার্থে জন্য পাড় বাঁধানোর ব্যবস্থা হয়েছে। কপিল মুনির আশ্রম থেকে সাগর পাড় পর্যন্ত কংক্রিটের কাজ হয়েছে। সেখানে চলছে শেষ মুহূর্তের টাচ।
রাজ্য সরকারের হিসেব অনুযায়ী এবছর মেলায় কমপক্ষে ষাট থেকে সত্তর লক্ষ মানুষ আসবেন। এই মহাভিড় সামলাতে সবরকম পরিকাঠামোগত প্রস্তুতি সারা। চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। পুণ্যার্থীদের থাকার জন্য হোগলার ঘর তৈরি হয়েছে ‘ফায়ারপ্রুফ’ ভাবে। আগুন থেকে মেলাকে বাঁচাতে সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনও পুণ্যার্থী গুরুতর অসুস্থ হলে কিংবা আচমকা কোনও বড় ঘটনা ঘটলে যাতে দ্রুত হেলিকপ্টারে করে কলকাতায় পাঠানো যায় তার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। তিনটি হেলিপ্যাড সেক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়াও জলপথে অন্য ব্যবস্থাও থাকবে। থাকছে একাধিক অ্যাম্বুল্যান্স, মেডিক্যাল ক্যাম্প, ডাক্তার-নার্স। গোটা সাগরমেলাকে কড়া নিরাপত্তার বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে। অ্যালার্ট করা হয়েছে কোস্ট গার্ডকেও। সব মিলিয়ে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর জন্য প্রস্তুত গঙ্গাসাগর মেলা।